কর প্রস্তাবে তিন পরিবর্তন এনে পাস হচ্ছে বাজেট

কর প্রস্তাবে তিন পরিবর্তন এনে পাস হচ্ছে বাজেট

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১ জুন সংসদে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।

কর প্রস্তাবে তিনটি সংশোধনী এনে পাস হচ্ছে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট।

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আয়কর রিটার্ন জমায় ন্যূনতম ২০০০ টাকা আয়কর দেওয়ার বিধান রেখে কর প্রস্তাব করেছিলেন। ব্যাপক সমালোচনার কারণে এই প্রস্তাবটি বাতিল হচ্ছে।

বলপয়েন্ট কলম উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা তুলে নিয়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট (মূল্যসংযোগন কর) আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। এই ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

এছাড়া নতুন বাজেটে ১৩টি পেট্রোলিয়াম পণ্যকে ‘স্পেসিফিক ডিউটি’ বা সুনির্দিষ্ট করের আওতায় আনার প্রস্তাব করেছিলেন মুস্তফা কামাল। এই কর প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে আগের অবস্থায় নিয়ে আসবেন অর্থমন্ত্রী।

এই তিন সংশোধনীসহ আরও ছোটোখাটো দু-একটি পরিবর্তন এনে রোববার পাস হবে অর্থবিল ২০২৩। আর সোমবার পাস হবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট।

বাংলাদেশে ১ জুলাই থেকে শুরু হয় আর্থিক বছর (অর্থবছর)। তার আগেই বাজেট পাস করার বিধান রয়েছে।  

প্রথা অনুযায়ী, ৩০ জুন পাস হয় বাজেট। অর্থবিল পাস হয় আগের দিন। সরকারি ছুটি থাকলে কখনও কখনও ২৯ জুন পাস হয়েছে; অর্থবিল পাস হয়েছে ২৮ জুন।

কিন্তু কোরবানি ঈদের ছুটির কারণে এবার কয়েক দিন আগেই অর্থবিল ও বাজেট পাস হচ্ছে।

২৯ জুন বৃহস্পতিবার দেশে ঈদ উদযাপিত হবে। ২৭ জুন থেকে শুরু হবে ঈদের ছুটি। ঈদের পরের দুদিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। রোববার অফিস আদালত খুলবে।

তার আগেই বাজেট পাসের সকল কার্যক্রম শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে সংসদ সচিবালয়।

ইতোমধ্যে সরকারি দল আওয়ামীলীগ ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা প্রস্তাবিত বাজেটের উপর আলোচনা করেছেন। রোববার সরকারি দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা বক্তব্য রাখবেন।

সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেটের উপর আলোচনা করবেন। সবার আলোচনা বা মতামতের ভিত্তিতে বাজেটে কিছু সংযোজন-বিয়োজন আনা হতে পারে।

অর্থবিল পাসের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবিত বাজেটের উপর বক্তব্য রাখবেন। অতীতে দেখা গেছে, অর্থবিল পাসের আগে প্রধানমন্ত্রী বাজেটের উপর বক্তব্য দেন। সেই বক্তৃতার শেষ করার আগে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু সংযোজন-বিয়োজন আনতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।

এরপর অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ আমলে নিয়ে সেসব বিষয়ে সংশোধনী আনার প্রস্তাবসহ অর্থবিল পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ১ জুন সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।

সেই প্রস্তাব পেশের পর থেকেই ন্যূনতম ২০০০ টাকা কর প্রস্তাব নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি, পিআরআই, সানেমসহ প্রায় সব অর্থনীতিবিদ এই কর প্রস্তাবের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন।

সবশেষ খবর হচ্ছে, আয়কর রিটার্ন জমায় ন্যূনতম ২০০০ টাকা আয়কর দেওয়ার বিধান বাতিল হচ্ছে। অর্থবিল পাস হওয়ার সময় অর্থমন্ত্রী ন্যূনতম করের প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নিতে পারেন বলে জানা গেছে।

এবার বাজেট ঘোষণার সময় রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা আছে এমন করদাতার জন্য করযোগ্য আয় না থাকলেও ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। রিটার্ন জমার রসিদ দিয়ে সেবা নিতে হয়, এমন রিটার্ন পাওয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম কর পরিশোধের কথা বলা হয়।

বাজেট পেশের পর এই প্রস্তাবের ব্যাপারে সাধারণ করদাতার পাশাপাশি অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সমালোচনা করেন।

অর্থবিলে শুল্ক-করসংক্রান্ত পরিবর্তনগুলোর প্রস্তাব থাকে। অর্থবিল পাসের আগে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল ন্যূনতম কর আরোপের প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করতে পারেন বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ইতোমধ্যে ন্যূনতম কর প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে সাধারণ করদাতাদের স্বস্তি দিতে এই কর প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক কর্মকর্তা এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “যেহেতু এই কর প্রস্তাব নিয়ে দেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। তাই নির্বাচনের বছরে ভোটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহল থেকে এই প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।”

অর্থমন্ত্রী দুই হাজার টাকা ন্যূনতম কর আরোপের প্রস্তাব করে বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, “রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর প্রদান করে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। এ ধরনের অংশীদারত্বমূলক অংশগ্রহণ দেশের সক্ষম জনসাধারণের মধ্যে সঞ্চারণের লক্ষ্যে করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে, অথচ সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নের বাধ্যবাধকতা আছে, এমন করদাতাদের ন্যূনতম কর দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।”

অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল সেই অবস্থান থেকে সরে আসতে পারেন বলে জানা গেছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট প্রস্তাবে বলপয়েন্ট কলম উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা তুলে নিয়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট (মূল্যসংযোগন কর) আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন। এই ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হেচ্ছে বলে জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম উঠানামা করতে থাকায় আমদানিনির্ভর জ্বালানি তেলের বিদ্যমান কর ব্যবস্থায় সংস্কার আনার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল তার বাজেট প্রস্তাবে ১৩টি পেট্রোলিয়াম পণ্যকে ‘স্পেসিফিক ডিউটি’বা সুনির্দিষ্ট করের আওতায় আনার প্রস্তাব করেছিলেন।

এ প্রসঙ্গে বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, “পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে বিধায় অর্থনীতির জন্য অতীব প্রয়োজনীয় পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে এসংক্রান্ত ১৩টি পণ্যে ‘স্পেসিফিক ডিউটি’আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

পেট্রোলিয়াম অয়েল, বিটুমিনাস মিনারেলস ও ক্রুড থেকে পাওয়া তেলে প্রতি ব্যারেল আমদানিতে কর হবে ১ হাজার ১১৭ টাকা। আগে এক্ষেত্রে ৫ শতাংশ আমদানি কর, ১০ শতাংশ অগ্রিম কর এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল।

একই ভাবে মোটর স্পিরিট, স্পিরিট টাইপ জেট ফুয়েল, হোয়াইট স্পিরিট, ন্যাপথা, জেপি১ কেরোসিন টাইপ জেটফুয়েল, পেপি৪ কেরোসিন টাইপ জেটফুয়েল, অন্যান্য কেরোসিন টাইপ জেটফুয়েল, অন্যান্য কেরোসিন, লাইট ডিজেল অয়েল, হাই স্পিড ডিজেল অয়েল এর ওপর লিটারপ্রতি ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা হারে স্থিতিশীল কর আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল প্রস্তাবিত বাজেটে।

ফার্নেস অয়েলের ক্ষেত্রে স্থিতিশীল কর আরোপ করা হয়েছে প্রতি টনে ৯ হাজার ১০৮ টাকা হারে।

এগুলোর উপর এতদিন ৫ শতাংশ আমদানি কর, ১০ শতাংশ অগ্রিম কর (এটি) এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম এখন বেশ খানিকটা কমে এসেছে। প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৭২ ডলারে নেমে এসেছে। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ৭০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে।

গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে এই তেলের দাম ১৩৯ ডলারে উঠেছিল।

এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, সব কিছু হিসাব নিকাশ করে দেখা গেছে, বাজেটে পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানিতে ‘স্পেসিফিক ডিউটি’ বা সুনির্দিষ্ট করের আওতায় আনার যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, তার চেয়ে বিদ্যমান যে কর আছে-তাতে আমদানি খরচ কম পড়বে।

সে কারণেই এই কর প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে আগের অবস্থায় নিয়ে আসা হবে জানিয়েছেন কর কর্মকর্তারা।

 

সর্বজনীন পেনশন: ৮% সুদ, প্রবাসীদের বাড়তি সুবিধা পরবর্তী

সর্বজনীন পেনশন: ৮% সুদ, প্রবাসীদের বাড়তি সুবিধা

কমেন্ট