ভয়ের কিছু নেই, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী
জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সমাপনী বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি
দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “এত বাধা, এত প্রতিরোধ, এত সমালোচনা, এত কিছু হচ্ছে। কিন্তু আমাদের অর্থনীতির চাকা যেন সচল থাকে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।”
কোভিড ১৯ ও ইউক্রেন যুদ্ধ না থাকলে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যেত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা এতদিনে অনেক দূর, অনেক উঁচু আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারতাম।”
রোববার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সমাপনী বক্তব্যে তিনি সবাইকে ‘ঘাবড়ে’ না যেতে এসব কথা বলেন।
‘সময়ে সময়ে কালো মেঘ’দেখা গেলেও সবাইকে অভয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভয়ের কিছু নেই। সমস্যা এলেও তা মোকাবিলা করতে হবে।
অনেক বাধা-বিপত্তি, কোভিড ১৯ ও ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রভাব মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে সরকারের দৃঢ় মনোবলের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি এখানে এটুকু বলবো- এখানে ভয়ের কিছু নেই। সময়ে সময়ে সমস্যা তো আসেই। এ সমস্যা দেখে ঘাবড়ালে চলবে না। এটা মোকাবেলা করতে হবে।”
দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ বাস্তবায়ন করার মতো নেই বলেও জানান তিনি।
কোনো ধরনের ভয় না পেতে সবাইকে অভয় দিয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে সংসদ নেতা বলেন, “সময়ে সময়ে কালো মেঘ দেখা যায়। কথায় বলে ‘মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে। হারাশশীর হারা হাসি অন্ধকারে ফিরে আসি’।”
এসময় সংসদে সদস্যরা টেবিল চাপড়ে প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন জানান।
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের লক্ষ্যটাই হচ্ছে- আমাদের দেশটাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে চাই। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াইতে চাই। পর মুখাপেক্ষী হতে চাই না। ভিক্ষা করে চলতে চাই না। আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসবে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। সে বিজয়ী জাতি হিসেবে দেশকে আমরা এগিয়ে নিতে চাই।
“এত বাধা, এত প্রতিরোধ, এত সমালোচনা, এত কিছু হচ্ছে। কিন্তু আমাদের অর্থনীতির চাকা যেন সচল থাকে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।”
কোভিড ১৯ ও ইউক্রেন যুদ্ধ না থাকলে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যেত জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এতদিনে অনেক দূর, অনেক উঁচু আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারতাম।”
সরকারপ্রধান বলেন, “আমরা তো অনেক রকমের কথা শুনি। আজকেই এ সরকার ফেলে দেবে। কালকেই এটা করবে, ওটা করবে। আজকে যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেলাম, এটা আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় না আসে, এটা বাস্তবায়ন করবে কে?
“আমাকে একটা লোক দেখান, সেটা করতে পারবে? নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য কাজ করবে একটি মানুষ দেখান। সেরকম কোনো নেতৃত্ব আপনারা যদি দেখাতে পারেন আমার কোনো আপত্তি নেই।”
বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে এমন আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “কিন্তু আমরা জানি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দেশকে উন্নীত করতে হলে আমাদেরকেই দরকার। তাই আমি জনগণকে বলব- বারবার তারা ভোটে আমাদের নির্বাচিত করেছে। দেশের সেবা করতে পেরেছি বলে আজকে দেশটা উন্নয়নের এ ধারায় নিয়ে আসতে পেরেছি, দারিদ্রের হার কমাতে পেরেছি। বেকারত্বের সংখ্যা মাত্র ৩ ভাগ, ডিজিটাল পদ্ধতি হয়েছে আমাদের ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করছে। ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার ঘরে বসে উপার্জন করছে। কাজেই আমরা পিছিয়ে থাকব না, আমরা এগিয়ে যাব।”
বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদে অধিবেশন শুরু হয়। মাগরিবের নামাজের বিরতির পর সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন। এসময় বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন।
রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করব। আমরা সেই কাজ শুরু করেছি। স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ চিহ্নিত করা হয়েছে তা হল- স্মার্ট সিটিজেট, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট গর্ভমেন্ট ও স্মার্ট ইকোনমি। আমরা পরনির্ভরশীল থাকতে চাই না। আত্মনির্ভরশীল হতে চাই। আত্মমর্যাদাশীল হতে চাই। এজন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে।”
বিদ্যমান কাস্টমস আইনকে আরও বেশি যুগোপযোগী করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কর বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা কর্মসূচির কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য চলতি অর্থবছরে এবং আগামী অর্থবছরেও কৃ্ছ্রতাসাধন করার সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। কারণ এটার প্রয়োজন হবে।
“নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে চালের ওপর আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ডিজেলের মূল্য কমাতে আগাম কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, খোলাবাজারে বিক্রি এক কোটি ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ করা হচ্ছে। কোনো মানুষ যেন খাদ্যে কষ্ট না পায় সেদিকে আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি।”
গণভবন এখন খামার বাড়ি
এক ইঞ্চি জমিও ফেলে না রাখার আহ্বানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার ডাকে সাড়া দিয়ে দেশবাসী প্রত্যেকেই তাদের পতিত জমিতে চাষ শুরু করেছেন। আমি নিজেও করছি। গণভবন এখন প্রায় খামার বাড়ি।”
জ্বালানি-বিদ্যুতের দামে হবে সমন্বয়
ভর্তুকি ব্যয় কমাতে জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্যে সামঞ্জস্য আনা হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এটা আমাদের করতেই হবে সময়ে সময়ে। জ্বালানিখাতে ফর্মুলাভিত্তিক মূল্য সমন্বয় স্থায়ী পদ্ধাতি নির্ধারণে পথ নকশাও আমরা তৈরি করছি।
তিনি বলেন, “সংসারে নারীরা যে কাজ করেন এটা কিন্তু বিরাট কর্মক্ষেত্র। এটা কিন্তু হিসাবে নেওয়া হয় না। এটা হিসাবে নেওয়া হলে পুরুষের চেয়ে নারীরা অনেক অগ্রগামী হত। সেটা বাদ রেখে হিসাব হয়েছে। অর্থমন্ত্রীকে বলব আগামীতে যেন গৃহস্থালি কাজকেও হিসেবে নেন। কারণ সেখানেও কিন্তু নারীরা উৎপাদনমুখী কাজ করেন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে বিদ্যুতের একটা অভাব ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেইন ও স্যাংশনের কারণে সারা বিশ্বব্যাপী প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যায়। এমন কি কয়লা, এলএনজি বা তেল পাওয়াও যাচ্ছিল না। যা হোক সেটা থেকে আমরা মুক্ত হচ্ছি।
"সবাইকে এটাই বলব বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে খরচ সেটা তো সবাইকে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আর কত ভর্তুকি আমরা দেব। সেটাই আমাদের প্রশ্ন। কাজেই বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাই সাশ্রয়ী হবেন, সেই আহ্বান জানাই।”
কমেন্ট