পাচারের টাকা ফেরত আনার সুযোগ একজনও নেয়নি

পাচারের টাকা ফেরত আনার সুযোগ একজনও নেয়নি

অর্থপাচারের প্রতিবাদে কানাডায় বাংলাদেশিদের প্রতিবাদ। ফাইল ছবি

৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঘটা করে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফেরত আনার দেওয়া সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত এক বছরে একজনও পাচার করা টাকা ফেরত আনেননি।

এর মধ্য দিয়ে সরকারের একটি উদ্যোগ কোনো সাড়া ছাড়াই ভেস্তে গেল।

স্বাধীনতার পর দেশে প্রথমবারের মতো বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে পাচার করা টাকা বিনা প্রশ্নে ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হয়; কিন্তু এই উদ্যোগে কোনো সাড়া মেলেনি।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। বলা হয়ে থাকে, দেশ থেকে পাচার করা টাকা দিয়েই কানাডায় গড়ে উঠেছে ‘বেগম পাড়া’।

একইভাবে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম কর্মসূচির তালিকায়ও বাংলাদেশিরা শীর্ষ পাঁচে আছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, দুবাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করা হয়েছে।

সরকার ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এক বছরের জন্য বিদেশ থেকে পাচারের টাকা ৭ শতাংশ কর দিয়ে দেশে ফেরত আনার সুযোগ দেয়। এই সুযোগ ৩০ জুন শেষ হচ্ছে।

বাংলাদেশের বাইরে যেকোনোরূপে গচ্ছিত অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বৈধভাবে দেশে এনে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করা যাবে। তবে দেশে অর্থ ফেরত নেওয়ার ওপর দেশে দেশে নানা বিধিনিষেধ আছে। এসব বিধিনিষেধের কারণে বাংলাদেশের অনেকেই উৎসাহী হননি বলে জানা গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সরকারি কোনো সংস্থাই এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবে না। ফলে পাচারের অর্থ ফেরত আনলে একধরনের দায়মুক্তি মিলবে; কিন্তু কেউই এভাবে দায়মুক্তি নেননি।

রোববার জাতীয় সংসদে অর্থবিল ২০২৩ পাস হয়েছে। তাতে পাচারের অর্থ ফেরত আনার সুযোগ আর বাড়ানো হয়নি।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “পাচার করা টাকা ফেরত আনার এই সুযোগ দেওয়া নৈতিক ও অর্থনৈতিক—কোনোভাবেই যৌক্তিক ছিল না। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, কেউ এই সুযোগ নেবেন না। তাই-ই হয়েছে। ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলেই পরিচয়’।”

“কেন, কার স্বার্থে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তা বোধগম্য নয়। নানা কায়দাকানুন করে যারা বিদেশে টাকা নিয়ে গেছেন, তারা কি আবার তা দেশে নিয়ে আসবেন? দেশে কী এমন অর্থনৈতিক রূপান্তর হয়েছে যে এখানে বিনিয়োগের জন্য কেউ দেশে টাকা ফেরত আনবেন? দেশে টাকা ফেরত এনে কেউ পাচারকারীর তালিকায় নাম ওঠাতে চান না।”

কেনো আসেনি পাচার করা টাকা

সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে পাচার করা অর্থ দেশে আনার সুযোগটি না নিয়েও পাচারকারীরা লাভবান হতে পারেন। যেমন পাচারকারী যদি মনে করেন যে তিনি দেশে টাকা আনবেন, তাহলে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় হিসেবেও আনতে পারেন। এতে কর তো দিতেই হবে না, বরং আড়াই শতাংশ প্রণোদনা মিলবে।

সহজ করে বলা যায়, পাচার করা ১ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ দেশে আনলে ৭ লাখ টাকা কর দিতে হবে। এর ওপর অর্থ ফেরত আনার তালিকা কোনোভাবে প্রকাশ হয়ে গেলেও সামাজিকভাবে মর্যাদাহানির আশঙ্কা আছে।

অন্যদিকে ওই ব্যক্তি যদি ১ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ রেমিটেন্স হিসেবে আনেন বা পাঠান, তাহলে ১ কোটি আড়াই লাখ টাকা পাবেন।

বিদেশ থেকে অর্থ ফেরত আনতে এ পর্যন্ত ভারত, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৭টি দেশ সুযোগ দিয়েছে। এর মধ্যে শুধু ইন্দোনেশিয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশ তেমন একটা সফল হয়নি।

কালোটাকা সাদা করার সুযোগেও এমন হয়নি

স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে প্রায় সব সরকারই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। প্রতিবারই কমবেশি মানুষ এই সুযোগ নিয়ে কালোটাকা সাদা করেছেন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি ৩২ হাজার করদাতা কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ হাজার করদাতা এমন সুযোগ নিয়েছেন ২০২০-২১ অর্থবছরে।

বিদায়ী অর্থবছরে শেয়ারবাজার এবং জমি-ফ্ল্যাটে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কর বা নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আয়কর অধ্যাদেশে জমি-ফ্ল্যাটে নির্ধারিত হারে কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার আরেকটি সুযোগ রেখে দেওয়া হয়। যদিও এতে সাড়া মেলেনি।

 

 

 

১৮০ জন ব্যবসায়ী পেলেন সিআইপি সম্মাননা পরবর্তী

১৮০ জন ব্যবসায়ী পেলেন সিআইপি সম্মাননা

কমেন্ট