সব শ্রমিক বেতন-ভাতা পাননি
ফাইল ছবি
বৃহস্পতিবার দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। রাজধানী ঢাকা ফাঁকা হয়ে গেছে। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আনন্দ-উল্লাসে ঈদ উদযাপন করতে সবাই গ্রামে ছুঁটছেন। অনেকে ইতোমধ্যে চলে গেছেন; অনেকে রাস্তায় আছেন।
তবে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প কারখানার সব শ্রমিককের মুখে হাসি নেই। কেননা, ছুটি শুরু হয়ে গেলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের বেশ কিছু কারখানা শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেয়নি। আর চলতি মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধ করেছে মাত্র ৪৮ শতাংশ কারখানা।
শিল্প পুলিশের পরিসংখ্যানে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে গত মে মাসের বেতনও এখন পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে। এই দুই খাতে মোট ২ হাজার ৬৮২টি কারখানার মধ্যে এখনো গত মাসের বেতন দেয়নি ১০১টি।
আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেটের ৯ হাজার ৯১৫টি শিল্পকারখানা তদারক করে শিল্প পুলিশ। মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা এবং পাট খাতের ৩ হাজার ১৬৪টি কারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধের হালনাগাদ তথ্য জানায় তারা।
শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ২ হাজার ৬৮২টি কারখানার মধ্যে গত মাসের বেতন পরিশোধ করেছে ২ হাজার ৫৮১টি। আর চলতি মাসের অর্ধেক বেতন দিয়েছে ৪৮ শতাংশ বা ১ হাজার ২৯৭টি কারখানা। অন্যদিকে ঈদ বোনাস দিয়েছে ৮৮ শতাংশ বা ২ হাজার ৩৭২টি কারখানা।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ১ হাজার ৬২৪টি কারখানা তদারক করেছে শিল্প পুলিশ। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ১ হাজার ৫৬৬টি কারখানা গত মাসের বেতন পরিশোধ করেছে। আর চলতি জুন মাসের অর্ধেক বেতন দিয়েছে ৭৭৭টি কারখানা। যদিও বোনাস দিয়েছে ১ হাজার ৪১২টি কারখানা।
এদিকে বিজিএমইএ বলছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে তাদের সচল কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ৯৬। মঙ্গলবার বেলা দুইটায় সংগঠনটি জানায়, একটি ছাড়া সব কারখানা গত মাসের বেতন দিয়েছে। চলতি জুনের অর্ধেক বেতন দিয়েছে ১ হাজার ৯৪৭টি কারখানা। আর ঈদ বোনাস দিয়েছে ৯৯ শতাংশ বা ২ হাজার ৭৫টি কারখানা।
রাত আটটায় বিজিএমইএ দাবি করে, তাদের সদস্যভুক্ত শতভাগ কারখানা গত মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম এআরএইচ ডটকমকে বলেন, অনেক কারখানা আর্থিক সংকটে আছে। কার্যাদেশ কম। আবার পণ্য রপ্তানি করার পরও সময়মতো অর্থ আসছে না। সে কারণে সব কারখানা চলতি জুন মাসের অর্ধেক বেতন দিতে পারেনি।
নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সদস্য ৬৯৯টি কারখানা তদারক করেছে শিল্প পুলিশ। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ৬৭১টি কারখানা গত মাসের বেতন পরিশোধ করেছে। আর চলতি জুন মাসের অর্ধেক বেতন দিয়েছে ৩২৯টি কারখানা। যদিও বোনাস দিয়েছে ৬৪৬টি কারখানা।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ধারদেনা করে হলেও গত মাসের বেতন ও বোনাস সব কারখানাই দিয়েছে। তবে বেশ কিছু কারখানা চলতি জুনের অর্ধেক বেতন দিতে পারেনি।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে শ্রম ভবনে জাতীয় ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (টিসিসি) ৭৫তম এবং আরএমজি টিসিসির ১৫তম সভা শেষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান ঘোষণা দেন, পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটির আগেই শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দিতে হবে।
আর চলতি জুন মাসের অর্ধেক বা ১৫ দিনের বেতনও পরিশোধ করতে হবে।
জানতে চাইলে শ্রমিকনেতা সিরাজুল ইসলাম এআরএইচ ডটকমকে বলেন, বড় বা উন্নত কর্মপরিবেশের কারখানাগুলো গত মাসের বেতন ও বোনাস যথাযথভাবে দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২ শতাংশ কারখানা আবার চলতি মাসের অর্ধেক বেতন দিতে পারেনি। আর অন্য কারখানাগুলো যেভাবে পেরেছে, সেভাবে শ্রমিকদের বিদায় করেছে।
কমেন্ট