চামড়ার সঠিক দাম দেওয়া হচ্ছে: বিটিএ

চামড়ার সঠিক দাম দেওয়া হচ্ছে: বিটিএ

সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন-বিটিএ। 

শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিটিএ চেয়ারম্যান ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর পরিচালক শাহীন আহমেদ বলেন, “চামড়ার সঠিক দাম দেয়া হচ্ছে, বিল ভাউচারও আছে। সরকারের বেঁধে দেয়া দামেই চামড়া সংগ্রহ করা হচ্ছে।’ 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে এ পর্যন্ত ৪ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। সারা দেশ থেকে মোট সংগ্রহ করা হবে প্রায় এক কোটি পিস চামড়া। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এবার ৫ থেকে ১০ শতাংশ চামড়া কম সংগ্রহ হতে পারে। 

শাহীন আহমেদ বলেন, “কঠোর তদারকি না করা গেলে ভারতে চামড়া পাচারের আশঙ্কা আছে।” 

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে পরিবেশ সম্মত উৎপাদন ব্যবস্থা নেই। সিইটিপি (কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার)  কার্যকর না থাকায় রপ্তানি বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ।” 

চামড়া খাতকে শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে  ‘চামড়া ডেভেলপমেন্ট বোর্ড’ গঠনের দাবি জানান শাহীন আহমেদ। 

সভার চামড়া শিল্প নগরীতে সিইটিপি কার্যকর না হওয়ার পেছনে বিসিক, চাইনিজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এবং বুয়েটের কনসালটেন্টরা দায়ী উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। 

শাহীন আহমেদ বলেন, “বিশ্বের বড় ব্র্যান্ডগুলোর কাছে ভালো দামে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিক্রি করতে হলে চামড়া খাতের বৈশ্বিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ থাকতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানের এলডব্লিউজি সনদ রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ মূলত এমন বাজারে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে, যেখানে ব্র্যান্ড মূল্য নেই। ফলে এ দেশের রপ্তানিকারকেরা পণ্যের দাম কম পান।” 

পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি বলেন, “এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় বাংলাদেশ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে বছরে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি মার্কিন ডলার আয় হারাচ্ছে।” 

২০০৫ সালে নাইকি, অ্যাডিডাস, টিম্বারল্যান্ডের মতো কয়েকটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড ও জুতা উৎপাদনকারী মিলে এলডব্লিউজি গঠন করে। পরিবেশ সুরক্ষা করে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করার বিষয়টি নিশ্চিত করাই সংস্থাটির লক্ষ্য। বর্তমানে বিশ্বে এক হাজারের বেশি ব্র্যান্ড ও সরবরাহ খাতের প্রতিষ্ঠান এলডব্লিউজির সদস্য। 

রাজধানীর শনিবার ধানমন্ডির ইমপেরিয়াল আমিন আহমেদ সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে  ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত উল্লাহ বক্তব্য রাখেন।

 

সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর অব্যবস্থাপনা ও চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পরিবেশ বান্ধব নগরী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি। ফলে আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।  

চামড়া শিল্পনগরীতে প্রতিশ্রুতি মতো পরিবেশবান্ধব তৈরি না করা হলে পরবর্তীতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়র হুসিয়ারি দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে। 

 “কমপ্লায়েন্স শিল্পনগরী গড়ে তোলা গেলে আন্তর্জাতিক সনদ নিয়ে বাজার ধরতে পারবে বাংলাদেশ। এতে করে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ২০৩০  সালের মধ্যে ১২ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা আয় করা সম্ভব।” 

সাভারের ট্যানারি শিল্পনগরীসহ সারাদেশেই চলছে চামড়া সংরক্ষণের প্রক্রিয়া। তবে ঈদের ছুটি থাকায় বেশিরভাগ ট্যানারি এখনও সংরক্ষণের কাজ পুরোপুরি শুরু করেনি।   

এদিকে পুরান ঢাকার পোস্তার আড়তগুলোতে কোরবানির পশুর চামড়া মানভেদে প্রতি পিস ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় কেনা হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরের ব্যবসায়ীরা ৪০০-৫০০ টাকায় কেনা চামড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

ঢাকার বাইরের বেপারীরা বলেন, আড়তদাররা সিন্ডিকেট করায় চামড়ার দাম মিলছে না। ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কেনার পর, ঢাকায় দাম বলছে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা। এতে লোকসান হচ্ছে।   

বেপারী আকমল হোসেন বলেন, “তিনটি চামড়া ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করেছি। কিনেছিলাম ২ হাজার টাকার বেশি।”  

তবে দাম নিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পোস্তার আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা বলেন, একটি চামড়া ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পরে নিয়ে এলে মান ভালো থাকে না। এরজন্য এ ধরনের চামড়া কেনা হয় না। তবে যারা কেনেন, তারা দাম কম দেন। 

সাভার শিল্পনগরীর আশপাশের আড়তেও চলছে কাঁচা চামড়ার বেচাকেনা। সেখানেও ভালো দাম না পাওয়ার কথা জানান মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। 

তারা বলেন, ঈদের দিনে ভালো দাম থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে তা কমতে শুরু করে। 

ঈদের আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে চলতি বছর ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে ৩ টাকা বাড়িয়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় নির্ধারণ করে দেয়। ঢাকার বাইরে দাম নির্ধারণ করা হয় ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।  

মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ঢাকার মধ্যে মাঝারি আকারের ২৫ বর্গফুটের একটি লবণ দেওয়া চামড়ার দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩৭৫ টাকা। 

এই হিসাব থেকে লবণ, মজুরি ও অন্যান্য খরচবাবদ ৩০০ টাকা বাদ দিলে ওই চামড়ার আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় ৯৫০ থেকে ১ হাজার ৭৫ টাকা। 

 

 

এবার ১ কোটি ৪১ হাজার পশু কোরবানি পরবর্তী

এবার ১ কোটি ৪১ হাজার পশু কোরবানি

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর