রেমিটেন্সের পর রপ্তানি আয়েও চমক

রেমিটেন্সের পর রপ্তানি আয়েও চমক

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পর রপ্তানি আয়েও উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ২০২২-২৩ অর্থবছর। ৩০ জুন শেষ হওয়া এই অর্থবছরের শেষ মাস জুনে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় আবার ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়েছে; এসেছে ৫০৩ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার (৫.০৩ বিলিয়ন) ডলার।  

এই অঙ্ক গত বছরের জুন মাসের চেয়ে ২ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ কম।

একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশে এর আগে কেবল তিন  মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে এনেছিলেন রপ্তানিকারকরা। মাস ৩টি হচ্ছে- গত বছরের নভেম্বর (৫.০৯ বিলিয়ন ডলার), ডিসেম্বর (৫.৩৬ বিলিয়ন ডলার) এবং জানুয়ারি (৫.১৩ বিলিয়ন ডলার)।  

এতেে দেখা যাচ্ছে,  মাসের হিসাবে পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে।  

বিদায়ী অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের জুনে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৪ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।  

সাধারণত দুই ঈদের মাসে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স বাড়লেও রপ্তানি আয় কমে যায়। কেননা, রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক কারখানা ঈদ উপলক্ষ্যে ৮/১০ দিন বন্ধ থাকে। এ সময়ে পোশাক উৎপাদন কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস হাউজ, ব্যাংক-বিমাসহ রপ্তানি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও কিছুদিন বন্ধ থাকে।  

কিন্তু এবার তার উল্টোটা ঘটেছে। ২৯ জুন দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়েছে। ২৫/২৬ জুন থেকে পোশাক কারখানাগুলোতে ছুটি শুরু হয়। সে হিসাবে প্রায় এক সপ্তাহ কারখানাগুলোতে পুরোদমে উৎপাদন হয়নি।  

তারপরও জুন মাসে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় রপ্তানিকারকদের অবাক করে দিয়েছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেও এক মাসে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয়ে আমরা খুবই খুশি। ঈদের ছুটিতে কয়েকদিন কারখানা বন্দ থাকার পরও এই আয় আমাদের সত্যিই অবাক করে দিয়েছে।”  

“তবে আগামী দিনগুলোতে এই ইতিবাচক ধারা থাকবে বলে মনে হয় না। কেননা, বিশ্ব পরিস্থিতি অনুকুলে নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষ্যণ নেই। আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তনি কমছে। ইউরোপের দেশগুলোতেও প্রবৃদ্দি কমে আসছে। জানি না কী হবে,” বলেন বিজিএমইএ প্রধান। 

রপ্তানি উুন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সোমবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) পণ্য রপ্তানি থেকে মোট ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি ৮৮ লাখ (৫৫.৫৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যা গত ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ২১ শতাংশ কম।  

২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫২ দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন ডলার আয় করেছিলেন রপ্তানিকারকরা।  

২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৫৮ বিলিযন ডলার।

৮৪.৫৮ শতাংশই এসেছে পোশাক থেকে   

ইপিবির তথ্যে দেখা যায় বিদায়ী অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে মোট ৪৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। এই অঙ্ক ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি। আর ৪৬ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় হয়েছে দশমিক ৪১ শতাংশ। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশই এসেছে পোশাক রপ্তানি থেকে। আর এই খাতের উপর ভর করেই রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

২০২১-২২ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল। 

বিদায়ী অর্থবছরে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে ২৫ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। এই খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় হয়েছে দশমিক ৪১ শতাংশ।  

অন্যদিকে ওভেন পোশাক রপ্তানি থেকে দেশে এসেছে ২১ দমমিক ২৫ বিলিযন ডলারের বিদেশি মুদ্রা। যা ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্রের চেয়ে বেশি এসেছে দশমিক ৫৪ শতাংশ।  

বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক হচ্ছে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ। আর এই রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স।  

রোববার রেমিটেন্সের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, জুন মাসে ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত তিন বছরে সবচেয়ে বেশি।  

তিন বছর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ (২.৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। যা একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।  

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল ওই অর্থবছরের মে মাসে, ২১৭ কোটি ১০ লাখ (২.১৭ বিলিয়ন) ডলার। সদ্য সমাপ্ত জুন মাসে এর চেয়েও বেশি অর্থ ২২০ কোটি (২.২০ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।  

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তিন বছর পর এক মাসের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছে জুন মাসে।  

ঈদকে সামনে রেখে কোরবানির পশু কেনাসহ পরিবার-পরিজনের অন্যান্য খরচ মেটাতে বেশি অর্থ পাঠানোয় রেমিটেন্সে এই উল্লম্ফন হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।   

সব মিলিয়ে বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ১৬১ কোটি (২১.৬১ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি।   

২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার এসেছিল। 

 

 

৯% গড় মূল্যস্ফীতি নিয়ে শেষ হলো অর্থবছর পরবর্তী

৯% গড় মূল্যস্ফীতি নিয়ে শেষ হলো অর্থবছর

কমেন্ট