পটুয়াখালীতে ইপিজেড স্থাপনের কাজ শুরু এ বছরেই

পটুয়াখালীতে ইপিজেড স্থাপনের কাজ শুরু এ বছরেই

পটুয়াখালীতে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) নির্মাণ কাজ এই মেয়াদেই শুরু করতে চায় সরকার। আর সে লক্ষ্যেই সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

এআরএইচ ডটকমকে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতুর মত এটা আমাদের আরেক স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ আমরা আমাদের এই মেয়াদের শুরু করব। অল্প কিছু দিনের মধ্যে এই প্রকল্পটি একনেকের সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদনের পর পরই কাজ শুরু করা হবে।”

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভাবনা ও অবকাঠামো বিবেচনায় নিয়ে এই ইপিজেড নির্মাণ করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।

স্বপ্নের পদ্মাসেতুর কল্যাণে রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ তৈরি হওয়ায় ওই অঞ্চলে বড় শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে চায় সরকার।

সেই লক্ষ্যে ‘পটুয়াখালী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তাবনা আকারে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেপজা।

প্রস্তাব অনুযায়ী, ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালে।

জানতে চাইলে বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব বিদেশি কোম্পানি দেশের বিভিন্ন ইপিজেড এ ব্যবসা করছেন, তারা বিভিন্ন সময় উন্নত যোগাযাগ ব্যবস্থা স্থাপিত হলে ওই অঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন।

“পদ্মাসেতু দিয়ে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার পর আমরা বাংলাদেশে ব্যবসারত বিদেশি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে তাদের মধ্যে ওই অঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখেছি। এমন প্রেক্ষাপটে আমরা এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছি।”

পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পচাকোড়ালিয়া মৌজার প্রায় ৪১১ একর এবং কুয়াকাটা মৌজার ৭ একরসহ মোট ৪১৮ একর জমিতে এই ইপিজেড হবে, যেখানে ৩০৬টি শিল্প প্লট তৈরি করা যাবে।

নদীবেষ্টিত পটুয়াখালীতে এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরাসরি প্রায় ১ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং ১৫৩ কোটি (১.১৩ বিলিয়ন) ডলার বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার পাশাপাশি বছরে প্রায় ১৮৪ কোটি ডলারের রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে বেপজার।

বেপজা কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আলমগীর বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। শিগগির পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প শক্তি বিভাগের প্রাথমিক মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় উঠবে বলে আমরা জানতে পেরেছি।”

“পিইসি সভার অনুমোদন নিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন নিয়ে আমরা এ বছরের মধ্যেই কাজ শুরু করতে চাই।”

দেশের প্রস্তাবিত নবম এই ইপিজেড সফল হবে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “ইপিজেডে মূলত সরাসরি বিদেশে রপ্তানির শিল্প স্থাপন করা হয়। এসব অঞ্চল থেকে উৎপাদিত পণ্য সরাসরি রপ্তানি করা হয়। তাই সমুদ্র বন্দরের কাছেই বেশিরভাগ ইপিজেড গড়ে ওঠে, যাতে খুব সহজেই পণ্য জাহাজীকরণ করা সম্ভব হয়।

“প্রস্তাবিত পটুয়াখালী ইপিজেডের পাশেই রয়েছে পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং স্বল্প দূরত্বে রয়েছে আরেক সমুদ্র বন্দর মোংলা। পদ্মাসেতু দিয়ে বিশ্বমানের সড়ক যোগাযোগের পর রেল পরিবহনও উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছি আমরা। শিগগির রেললাইন উদ্বোধন হয়ে যাবে। সুতরাং এই ইপিজেড বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য কোনো সমস্যা হবে না বলে আমি মনে করি।”

প্রকল্প প্রস্তাবে দেখা যায়, এ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেপজার নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৩৩৮ কোটি টাকা যোগান দেওয়া হবে। বাকি ১ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা সরকারের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

এ প্রকল্পে সরাসরি ১ লাখ বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পরোক্ষভাবে আরও ২ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

প্রকল্পের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ে অর্থ বিভাগের সঙ্গে ২ শতাংশ সুদে সরকারি কোষাগার থেকে ঋণের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ প্রকল্পের আওতায় পরিবেশবান্ধব শিল্প প্লট তৈরি করা হবে। ইপিজেডে ভূমি উন্নয়ন, নিজস্ব রাস্তা, সীমানাপ্রাচীর, বৈদ্যুতিক ও গ্যাস সংযোগ লাইন, সৌরবিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ ও বৃষ্টির পানির জলাধার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। প্লট তৈরি শেষে সেগুলো বিনিয়োগকারীদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। 

বাংলাদেশের ইপিজেডগুলো

১৯৮০ সালে গঠন করা হয় বেপজা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা করা এই সংস্থা দেশের সব ইপিজেডের ব্যবস্থাপনা করে। সংস্থাটির দায়িত্ব দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করা।

বর্তমানে দেশে আটটি ইপিজেড রয়েছে। বেপজা ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রামে দেশের প্রথম ইপিজেড স্থাপন করে। এর সফলতায় পরে দেশের অন্যান্য ইপিজেডগুলো পর্যায়েক্রমে চালু করা হয়।

১৯৯৩ সালে ঢাকা ইপিজেডের কাজ শুরু হয় এবং সম্ভাব্য বিনেয়োগকারীদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ায় ঢাকা ইপিজেড সম্প্রসারণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ১৯৯৭ সালে।

এরপর মোংলা, কুমিল্লা, ঈশ্বরদী ও উত্তরা (নীলফামারী) ইপিজেড বাস্তবায়ন করা হয়। আমদজী জুট মিলস এবং চ্টগ্রাম স্টিল মিলস এলাকায় স্থাপন করা হয় আরও দুটি ইপিজেড। সব মিলিয়ে তিন দশকে সরকার এই আটটি ইপিজেড স্থাপন করে।

বর্তমানে এই ইপিজেডগুলোতে ৪৫৬টি শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে ৬.০৪ বিলিয়ন ডলার। ইপিজেডগুলো থেকে বছরে রপ্তানি হচ্ছে ১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

দেশের ইপিজেডগুলোতে পাঁচ লাখের বেশি দক্ষ শ্রমিক বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর জন্য বহুমুখী-বৈচিত্র্যময় পণ্য তৈরি করছেন।

দেশের বিভিন্ন ইপিজেডকে কেন্দ্র করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গড়ে উঠেছে স্যাটেলাইট টাউন। এছাড়া ইপিজেডকে কেন্দ্র করে পশ্চাৎপদ ও অগ্রজ শিল্পকারখানা, অ্যাকসেসরিজ শিল্পসহ পরিবহন, খাদ্য সরবরাহ, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ইত্যাদি গড়ে উঠেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে ২০১৭ সালের শেষ দিকে পটুয়াখালীতে ইপিজেড নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই লক্ষ্যে বেপজা কর্তৃপক্ষ স্থান নির্ধারণের জন্য দফায় দফায় পরিদর্শন করে পটুয়াখালী জেলার সম্ভাব্য বিভিন্ন এলাকা।

এই ইপিজেড নির্মাণের স্থান নির্ধারণ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন শুরু করে এলাকার মানুষ। অবশেষে বেপজার গভর্নর বোর্ডের ৩৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পচাকোড়ালিয়া এলাকায় ইপিজেড নির্মাণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

খাদ্যপণ্যের অবৈধ মজুদে সাজা যাবজ্জীবন পরবর্তী

খাদ্যপণ্যের অবৈধ মজুদে সাজা যাবজ্জীবন

কমেন্ট