মূল্যস্ফীতি বাড়লেও কেউ না খেয়ে নেই: অর্থমন্ত্রী

মূল্যস্ফীতি বাড়লেও কেউ না খেয়ে নেই: অর্থমন্ত্রী

সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বক্তব্য রাখছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ছবি সংগৃহীত

বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে অর্থনীতির স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি বাড়লেও কেউ না খেয়ে নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) এক্সিকিউটিভ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়ামাদা জুনিচিসহ একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী  বলেন, “বর্তমান সরকার যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। বর্তমানে সারাবিশ্ব মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে। বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে; তবে তা এখনো ১২ শতাংশ ক্রস করেনি।”

এসময় তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, “মূল্যস্ফীতি বাড়লেও মানুষ কি না খেয়ে আছে?”

সরকারি হিসাবে বিদায়ী ২০২২-২৩  অর্থবছরের শেষ মাস জুনে মূল্যস্ফীতির পারদ খানিকটা কমেছে; ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে নেমে এসেছে। মে মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

তবে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি নিয়ে শেষ হয়েছে অর্থবছর। যা বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে ৩ দশমিক ৪২ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত সোমবার মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২২-২৩  অর্থবছরে ১২ মাসের গড় হিসাবে (২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ।

মে মাস শেষে (২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের মে মাস) এই হার ছিল ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

২০২১-২২ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতির হয়েছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। বাজারের যে অবস্থা তাতে এই আশা যে পূরণ হবে না, তা অনেক আগেই আভাস পাওয়া গিয়েছিল।

দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই প্রায় দেড় বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতির বেহাল দশার কারণে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

শেষ পর্যন্ত উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়েই শেষ হয়েছে ২০২২-২৩ অর্থবছর।

বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, জুন মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। মে মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ।

এর অর্থ হলো ২০২২ সালের জুন মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই বছরের জুনে তা কিনতে ১০৯ টাকা ৭৪ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।

মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়স সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামীলীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনও মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের উপরে ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছিল। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি ছুঁটতে থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, “মূল্যস্ফীতিতে যাতে নিম্ন আয়ের মানুষ সমস্যায় না পড়ে সে জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ১ লাখ পরিবারকে কম মূল্যে নিত্যপণ্য দেওয়া হচ্ছে।”

“এসব কর্মসূচির মাধ্যমে যাদের কাছে খাবার নেই তাদেরকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এভাবেই মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলা করা হচ্ছে।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, “রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত বছর থেকে দেশের অর্থনীতিতে যে ভয় দেখা দিয়েছিল বর্তমানে তা আর নেই। সে সময় অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকে সমস্যা দেখা দেওয়ায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নিকট থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সে পরিস্থিতি নেই।”

'তাহলে সরকার কি আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি থেকে বের হয়ে যাবে' এক সাংবাদিক এ প্রশ্ন করলে অর্থমন্ত্রী কোনো উত্তর দেননি। 

পটুয়াখালীতে ইপিজেড স্থাপনের কাজ শুরু এ বছরেই পরবর্তী

পটুয়াখালীতে ইপিজেড স্থাপনের কাজ শুরু এ বছরেই

কমেন্ট