এফবিসিসিআই নির্বাচন: প্রার্থিতা ফিরে পেতে ৩০ জনের আপিল
দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই নির্বাচনে যে ৩২ জন ব্যবসায়ীর মনোনয়ন কর ও ঋণখেলাপির অভিযোগে বাতিল হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৩০ জন প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল বোর্ডের কাছে আবেদন করেছেন।
বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তা-মালিকদের সংগঠন বিএবি সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান, বারভিডা সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডনসহ এই ৩০ জন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করেছেন নির্বাচনী আপিল বোর্ডের কাছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের বিষয়ে শুনানি হয়েছে আপিল বোর্ডে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। শনিবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে।
জানা গেছে, মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া সব প্রার্থী বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ক্লিয়ারেন্স বা ছাড়পত্র সংক্রান্ত কাগজপত্র উপস্থাপন করেছেন। শেষ পর্যন্ত হয়তো তারা সবাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
আগামী ৩১ জুলাই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক পদে ভোট হবে।
এই নির্বাচনকে সামনে রেখে গত মঙ্গলবার নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান এ মতিন চৌধুরী এবং সদস্য কে এম এন মনজুরুল হক ও শামসুল আলম স্বাক্ষরিত বোর্ড ২০২৩-২৫ মেয়াদে এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনের জন্য ১০৫ বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করে।
একই সঙ্গে কর ও ঋণখেলাপি মোট ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে আলাদা তালিকা প্রকাশ করা হয়। এই ৩৪ জনের মধ্যে ৩২ জনের মনোনয়নই বাতিল করা হয়।
এরপর মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীরা বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। তাদের কেউ কেউ বকেয়া করের টাকা পরিশোধ করেছেন। আবার কেউ কেউ করের ফাইল হালনাগাদ করে প্রয়োজনীয় কাগজ সংগ্রহ করেছেন।
মনোনয়ন বাতিলের তালিকা প্রকাশ করার মাত্র দুদিনের মধ্যে কীভাবে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহ করেছেন প্রার্থীরা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও এ নিয়ে সরাসরি কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান এ মতিন চৌধুরী এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “মনোনয়ন বাতিল প্রার্থীরা আপিল বোর্ডে আবেদন করেছেন। আপিল বোর্ডের রায়ে মনোনয়ন বৈধ হলে প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।”
বৃহস্পতিবার রাত ১১টা পর্যন্ত আপিল বিভাগ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে বৃহস্পতিবার ঢাকা চেম্বার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এনবিআরের একক পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, এবারের এফবিসিআই নির্বাচনে পরিচালক পদে সম্ভাব্য প্রার্থী আবুল কাসেম খান করখেলাপি নন।
আবুল কাসেম খান বৃহৎ করদাতা ইউনিটের একজন নিয়মিত করদাতা, যিনি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সেরা করদাতা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
যে ৩২ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল
করখেলাপি হওয়ার কারণেএফবিসিসিআই নির্বাচনে যে ৩২ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিলেন দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদার।
তিনি অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হিসেবে মনোনীত পরিচালক হওয়ার জন্য বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তা পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন।
শুধু নজরুল ইসলাম মজুমদার নন, ঋণ ও করখেলাপি হওয়া এবং অন্যান্য কারণে মোট ৩৪ জন ব্যবসায়ীর মনোনয়ন বাতিল কিংবা স্থগিত করেছে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনী বোর্ড।
অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে যারা নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন শফিকুল ইসলাম ভরসা। নির্বাচন বোর্ড বলেছে, তিনি একই সঙ্গে ঋণ ও করখেলাপি। ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে খোরশেদ আলম, সাহাব উদ্দিন, খন্দকার রুহুল আমিনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
এ ছাড়া করখেলাপি হওয়ার কারণে মনোনয়ন বাতিল হয়েছে সৈয়দ সাদাত আলমাস কবিরের। একই কারণে বাতিল হয়েছে মো. মনসুর, নিজাউদ্দিন রাজেশ, হাজি মো. আবুল হাশেম, সিরাজুল ইসলাম, রাকিবুল আলম, সালমা হোসেন, জাকির হোসেন ও তাহের আহমেদ সিদ্দিকীর মনোনয়ন।
এ ছাড়া স্বাক্ষর না মেলার কারণে ফজলে শাহিন এহসানের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। মৌসুমি ইসলাম ও আনোয়ার হোসেনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে ভোটার নম্বরে কাটাকাটি থাকার কারণে।
এরা সবাই অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন।
এ ছাড়া অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হিসেবে মনোনীত হওয়ার জন্য যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ মোট ছয়জনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এদের মধ্যে আবুল হোসেনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে, কারণ নির্বাচনী বোর্ডের কাছে তিনি একই সঙ্গে ঋণ ও করখেলাপি।
ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে বাতিল হয়েছে কে এম আখতারুজ্জামানের মনোনয়ন। এ ছাড়া শুধু করখেলাপি হওয়ার কারণে মনোনয়ন বাতিল হয়েছে আবুল বাশার, খন্দকার এনায়েতউল্লাহ ও হাবিব উল্লাহ ডনের মনোনয়ন।
অন্যদিকে চেম্বার গ্রুপ থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে মোট ছয় জনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এদের মধ্যে ঋণখেলাপি হওয়ার অভিযোগে বাতিল হয়েছে আলি হোসেন, মোহাম্মাদ রিয়াদ আলি ও ফয়েজুর রহমান ভূঁইয়ার মনোনয়ন। তাদের মধ্যে রিয়াদ আলি একই সঙ্গে করখেলাপিও বলে জানিয়েছে নির্বাচনী বোর্ড।
করখেলাপি হওয়ার কারণ দেখিয়ে চেম্বার গ্রুপ থেকে বাতিল করা হয়েছে হাসিনা নেওয়াজ, শাহ জালাল ও মোহাব্বত উল্লাহর মনোনয়ন।
এ ছাড়া চেম্বার গ্রুপ থেকে যারা পরিচালক মনোনীত হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন, তাদেরর মধ্যে চার জনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এদের মধ্যে ঋণখেলাপি হওয়ার অভিযোগে নিজাম উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া করখেলাপি হওয়ার জন্য যাদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে, তারা হলেন আবুল কাশেম খান, সামিউল হক সাফা ও সুজিব রঞ্জন দাস।
এ ছাড়া অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে আবদুল হক ও এনায়েত উল্লাহ সিদ্দিকীর মনোনয়ন আপাতত স্থগিত আছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রত্যয়ন পাওয়ার পর তাদেরর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রার্থিতা ফিরে পেতে প্রার্থীরা নির্বাচনী বোর্ডের কাছে আবেদন করতে পারেন। সে বিধির আলোকেই সবাই প্রার্থিতা ফিরে পেতে আবেদন করেছেন।
তবে বোর্ড এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে গণ্য হবে।
কমেন্ট