অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করুন: ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী

অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করুন: ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী

ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ী সম্মেলন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা।

দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তাদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করুন। আমরা সব সময় আপনাদের (ব্যবসায়ীদের) পাশে আছি।”

শনিবার রাতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ী সম্মেলন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা ‘শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই’ দাবি করে আবারও তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। বাসস 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের উদ্ভাবনী ধারণা কাজে লাগিয়ে রপ্তানি বাড়াতে নতুন বাজার ও পণ্য খুঁজে বের করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এ জন্য সরকার সর্বদা তাদের পাশে থাকবে। আওয়ামীলীগ কখনো কোনো ব্যবসায়ীকে তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা দেখে বিচার করে না। 

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার দলমতনির্বিশেষে সবার জন্য ব্যবসার ক্ষেত্রে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। সব সময় আপনাদের সহায়তা করে যাবে। এখানে কোনো ‘হাওয়া ভবন, খাওয়া ভবন’ থাকবে না।” 

“আমাদের সামনে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। সেখানে বেশির ভাগ দক্ষ জনগোষ্ঠী প্রয়োজন হবে। এ জন্য সরকার দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকের এবং সেই ’৮১ সালের বাংলাদেশের মধ্যে অনেক তফাত। অনেকেই বলেছিলেন, এত ব্যাংক দিয়ে কী হবে? বাংলাদেশের অর্থনীতি তো এতবড় না যে এত ব্যাংক লাগবে। আমার কথা ছিল, অর্থনীতি তো এত ছোট থাকবে না, অর্থনীতি বড় করার জন্যই তো আমাকে ব্যাংক দিতে হবে। কাজেই সেভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” 

বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে টকশোর নামে টক টক কথা বলা হয় অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, “একেকটা কাজ করতে গিয়ে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়। মেট্রোরেল করার সময় শুনতে হলো, ৩৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে মেট্রোরেল করার কী দরকার? ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করলেই তো নাকি সব সমাধান হয়ে যায়।” 

“অবশ্য ভালোই একদিকে। আমি বেসরকারি খাতে অনেক টেলিভিশন দিয়েছি, সেখানে সবাই টকশো করেন আর টক টক কথা বলেন। মাঝে মাঝে আমি বলি, আপনারা শুধু টক টক বলেন কেন? কথা টক-ঝাল-মিষ্টি হলেই না সুস্বাদু হবে।” 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একজন তো বলে দিলেন, এত টাকা খরচ করে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল করার কী দরকার ছিল? মানে আপনি যা-ই করতে যান, কিছু লোকের মানসিকতাই হচ্ছে কিছুই ভালো লাগে না। এসব লোকের কথা ভুলে গিয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য যা করা দরকার, সেটাই করতে হবে।”

এ সময় প্রধানমন্ত্রী কুইক রেন্টালের বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করেন। বলেন, “২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র না করলে তখন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেত না “ 

কুইক রেন্টালে ৯০ হাজার কোটি টাকা খরচ নিয়ে যারা সমালোচনা করেন, তাদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, “এত বছরে বিদ্যুৎ পেয়ে যে ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি করে যে কত লাভ হয়েছে, সেটা তো কেউই বলেন না।” 

কিছু লোক সব কিছুতে দুর্নীতি ও দুরভিসন্ধি খোঁজে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ন্যায় ও সত্যের পথে থাকলে যতই বিভ্রান্তি ছড়াক, কোনো ক্ষতি করতে পারে না।” 

‘আজকের বাংলাদেশ একটি পরিবর্তিত বাংলাদেশ’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই বাংলাদেশকে আরও টেনে নিয়ে যেতে হবে এবং এ দায়িত্ব আপনাদের (ব্যবসায়ীদের) নিতে হবে। শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটলে মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো হওেব।” 

এ লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে এবং বাকি প্রতিবন্ধকতাগুলোও শিগগিরই সমাধান করা হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সরকার ব্যবসায়ীদের সব সময় সহযোগিতা করবে। আমরা চাই ব্যবসায়ীরা ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে আসুক।” 

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে দেশের প্রতিটি মানুষ হবে স্মার্ট নাগরিক, অর্থনীতি হবে স্মার্ট অর্থনীতি, সরকার হবে একটি স্মার্ট সরকার এবং সমাজ হবে স্মার্ট সমাজ। আমরা এভাবেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চাই।” 

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “শুধু স্বপ্ন দেখাই যথেষ্ট নয়, স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষমতা অর্জন করতে হবে এবং এই ধরনের মনোভাব থাকা উচিত।”

সম্মেলনে উপস্থিত তরুন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, “শুধু সিনিয়র ব্যবসায়ীই নয়, তরুণ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারাও এখানে উপস্থিত। আমরা দেশের তরুণ-তরুণীদের চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করতে চাই, যাতে তারা চাকরি দিতে পারে।” 

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিশেষ তহবিল প্রদানের পাশাপাশি সরকারের ‘স্টার্টআপ’ প্রচারাভিযানের উল্লেখ করেন যাতে তরুণরা উদ্যোক্তা হতে পারে। তিনি কোম্পানি আইনের পরিবর্তনের কথাও উল্লেখ করেন যাতে যে কোনো ব্যক্তি এগিয়ে যেতে পারে এবং একটি ফার্ম খুলতে পারে। 

“আমরা (আওয়ামী লীগ সরকার) ব্যবসা করি না।” 

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার এফডিআই এবং স্থানীয় বেসরকারি বিনিয়োগ উভয়ের জন্য ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করার ওপর সর্বোচ্চ জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) বেসরকারি খাতকে সহায়তা করার জন্য কাজ করছে এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। 

“সরকার ব্যবসা সহজীকরণ ও স্বয়ংক্রিয় করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যবহৃত আমদানি-রপ্তানি লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান এক বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছরের নবায়ন সুবিধা চালু করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ট্রেড লাইসেন্স এবং ছাড়পত্র ইস্যুর ক্ষেত্রেও একই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।” 

শেখ হাসিনা বলেন, শিল্প খাত সবসময় বিকশিত হচ্ছে এবং বর্তমানে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সামনে আসছে যেখানে দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হবে। 

“দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে আমরা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করছি। স্কুল পর্যায় থেকেই আমরা স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কম্পিউটার ল্যাব দিচ্ছি।” 

“ন্যানো প্রযুক্তির জন্য সরকার আইন প্রণয়ন করছে। এটি মন্ত্রিসভা থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং সংসদ থেকে অনুমোদন দেওয়া হবে।” 

২০২৬ সাল থেকে ‘উন্নয়নশীল জাতি’ হিসেবে দেশের যাত্রার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উন্নয়নশীল রাষ্ট্র বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েও অনেক দেশ ইতোমধ্যে পিছু হটেছে কিন্তু আমরা পিছিয়ে যাইনি, বাংলাদেশ কখনো পিছপা হবে না বরং আমরা তা বাস্তবায়ন করবো।” 

তিনি বলেন, “মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিষয়ভিত্তিক ধারণার ভিত্তিতে সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য ৭টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে।” 

“আমি আশাবাদী যে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের দায়িত্ব পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।” 

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান।

স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব প্রয়োজন। 

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে এফবিসিসিআই প্রধান বলেন, “আপনি যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেই অবস্থাকে ধরে রাখার জন্য, বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ যেসব সমস্যা রয়েছে ব্যবসায়ীদের সামনে, সেগুলোকে আপনার মাধ্যমে সমাধান চাই। এ জন্য আমরা সব ব্যবসায়ী ঐকমত্য হয়েছি, আপনাকে আবারও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকতে হবে ব্যবসায়ীদের জন্য।”

এক দশকে জিডিপি বেড়েছে ছয় গুণ, রাজস্ব দ্বিগুণও হয়নি পূর্ববর্তী

এক দশকে জিডিপি বেড়েছে ছয় গুণ, রাজস্ব দ্বিগুণও হয়নি

ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে গেলেন আদানি পরবর্তী

ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে গেলেন আদানি

কমেন্ট