ব্যবসায়ীরা তার ভালোটা বোঝেন: শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী চাওয়ার ব্যাখ্যা দিলেন জসিম
বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন। ছবি: এআরএইচ ডটকম
কেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে আবারও চান, সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেছেন, “ব্যবসায়ীরা তার ভালোটা বোঝেন। আবার শেখ হাসিনাই পরীক্ষিত। দেশের স্থিতিশীলতার জন্য তাকেই দরকার।”
শনিবার ব্যবসায়ীদের এমন সমর্থনের খবরে আলোচনা তৈরির পরদিন সেই বক্তব্যের এমন ব্যাখ্যা আসে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের উপস্থিতিতে এক আয়োজনে।
রোববার ঢাকায় এক সেমিনারে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, “ব্যবসায়ীরা তাকে (শেখ হাসিনা) সমর্থন দিয়েছেন স্থিতিশীলতার জন্য। আমরা দেখব পরীক্ষা করব ওই সময় নাই কিন্তু। আজকে যুগ চেইঞ্জ হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়েছে। সুতরাং আমাদের পরীক্ষা করার সময় নাই।
“পরীক্ষিত যিনি আছেন তাকেই আমরা চাই। এ জন্যই কালকের ওই প্রোগ্রামটা ছিল।”
আগের দিন শনিবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ীদের ভূমিকা’ শীর্ষক সম্মেলনে বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের পাশাপাশি শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা শেখ হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাওয়ার কথা বলেন।
শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সেই অনুষ্ঠানে জসিম উদ্দিন বলেন, “আপনি (প্রধানমন্ত্রী) যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে আসছেন ও আমাদের (ব্যবসায়ীদের) যে অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে ধরে রাখার জন্য আপনাকে (প্রধানমন্ত্রীকে) প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের বিদ্যমান সমস্যাগুলো আপনার (প্রধানমন্ত্রীর) মাধ্যমে আমরা সমাধান করতে চাই। এ জন্য সব ব্যবসায়ী ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তারা সবাই আগামীতে আপনার নেতৃত্বে বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে সমাধান করতে চাই।”
নির্বাচনের কয়েক মাস আগে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের এমন রাজনৈতিক অবস্থান বিরল। তবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এ অবস্থানের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, “ব্যবসায়ীরা দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা চাইবে সেটিই স্বাভাবিক। তাদের বক্তব্যে সেটি উঠে এসেছে।”
ব্যবসায়ীদের ওই সম্মেলনের পরের দিন রোববার বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবসের সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আগের দিনের চাওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করেন জসিম উদ্দিন।
আগারগাঁওয়ে বিনিয়োগ ভবনে বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ)।
এতে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ীদের করণীয় শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ব্যবসায়ীদের কথা শুনেছেন। আমার মনে হয় পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একত্রে একটানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা সময় দেওয়া- এটা বিরল, আমার মনে হয় রেকর্ড হতে পারে।
“উনি তো চাচ্ছেন দেশটাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। ব্যবসায়ীরা তাদের সমস্যাটা কী, সম্ভাবনা কী… ব্যবসায়ীরা কিন্তু তার ভালোটা বোঝেন। ব্যবসায়ীরা উনাকে সমর্থন দিয়েছেন, উনি যেন আবার প্রধানমন্ত্রী হন এই সমর্থনও দিয়েছেন।”
জসিম উদ্দিন বলেন, “সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্ন দেখছে। ওই স্বপ্ন পূরণ করতে হলে স্মার্ট শিল্প স্থাপন করতে হবে এবং স্মার্ট শিল্প চালানোর জন্য স্মার্ট ও দক্ষ শ্রমিক দরকার হবে। সেই প্রয়োজন মেটাতে স্মার্ট ও দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে।
“আমি মনে করি সরকারি যেসকল ডিপার্টমেন্ট আছে তাদের মানসিকতার মধ্যেও স্মার্টনেস আনতে হবে।”
সরকার এবং বেসরকারি খাতকে এক হয়ে কাজ করার গুরুত্ব তুলে ধরে এফবিসিসিআই বলেন, “আমাদের সরকারের সকল সেক্টর এবং বেসরকারি সেক্টর সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। দুপক্ষের মধ্যে সম্পর্ক হবে পার্টনারের মতো কর্তৃত্বের মতো না, আমাদের ওই মানসিকতা থেকেও বের হতে হবে।”
দেশে আধুনিক শিল্পে বিনিয়োগের পাশাপাশি সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন দক্ষ জনবল গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর ক্ষেত্রেও কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর কথা বলেন জসিম।
“আমাদের এক কোটি প্রবাসী বিদেশ থেকে ২২/২৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠায়। অথচ আমরা বিদেশি বিশেষজ্ঞের নামে ১০/১২ বিলিয়ন ডলার দিয়ে দিচ্ছি।
“আমাদের গার্মেন্টস সেক্টর থেকেই ভারতীয় কিংবা শ্রীলংকানরা প্রচুর ডলার নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের প্রচুর ডলারের প্রয়োজন।“
এ কারণে দেশের বড় বড় শিল্পের সঙ্গে বসে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দক্ষ লোকবল গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এনএসডিএ এর নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ।
কমেন্ট