খাদ্যমন্ত্রীর দাবি, চালের দাম স্থিতিশীল; বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, মানুষ চাপে আছে
জুলাই মাসের ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ছবি: সংগৃহীত
দেড় বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের দাম বাড়লেও সরকার দেশের বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
তবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি মনে করেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় মানুষ চাপে আছে, তাই সরকার নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে মানুষের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করছে।
রোববার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন আবদুল্লাহপুর পলওয়েল কনভেনশন শপিং সেন্টারের পেছনে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জুলাই মাসের ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছেন এই দুই মন্ত্রী।
টিসিবি সারা দেশের ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারের মধ্যে নিয়মিত পণ্যের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ৩০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল বিক্রি শুরু করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, “বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন খাদ্যশস্য সরকার নানাভাবে বিতরণ করছে। দেশে এখন চালের মজুত ভালো। ফলে বাজারে বড় কোন সংকট নেই। চালের বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে পেরেছি। আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে, বোরোর বাম্পার হয়েছে।”
সরকার চালের বাজার ঠিক রাখার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
টিসিবির পরিবার কার্ডের মাধ্যমে চাল দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষের যেন কষ্ট না হয় এ জন্য সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা এই কাজ চলমান রাখব। পাশাপাশি আমাদের অন্য যে সব কর্মসূচি আছে, তাও চলমান থাকবে।”
“তবে এত বড় কর্মযজ্ঞে দু–একটা ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটতে পারে। এমন কিছু ঘটলে আমাদের নজরে আনবেন, আমরা পদক্ষেপ নেব। অনেক পরিবেশকের মধ্যে অপরাধ করার প্রবণতা আছে, তবে সবাই সমান না।”
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার পর্যান্ত সরকারি গুদামগুলোতে প্রায় ১৯ লাখ ৭ হাজার ৮৮৮ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত আছে। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৬২ হাজার ৯০৪ টন চাল, ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬৫২ টন গম এবং ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৯৬ টন ধান।
বর্তমান পেক্ষাপটে দেশের সরকারি গুদামে ১৪ থেকে ১৫ লাখ টন খাদ্য মজুত থাকলেই যথেস্ট বলে মনে করেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “পরিবার কার্ডে চাল যুক্ত হওয়ায় মানুষের আরও সুবিধা হলো। জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী এ জন্য মানুষ চাপে আছে। এ জন্য আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। এক কোটি পরিবার এই সুবিধা পাবে। পরিবারের সদস্যসংখ্যা গড় করলে মোটামুটি পাঁচ কোটি লোক এই সুবিধার অংশ হতে পারবে। তাতে তাদের কষ্টটা কমবে।”
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, গত এক বছর যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যপী খাদ্যের দাম অনেক বেশি। তাতে সাধারণ মানুষ টিসিবির পণ্যের মধ্যে চাল যুক্ত করার দাবি জানিয়েছিল। সাধারণ মানুষের সেই দাবির প্রেক্ষিতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
টিসিবি জানায়, পরিবার কার্ডধারী একজন ক্রেতা এবার সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি ও পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারবেন। এবারে মসুর ডালের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমানো হয়েছে। আর প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম রাখা হচ্ছে ১০০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৭০ টাকা, মসুর ডাল ৬০ টাকা এবং প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা।
চাল যুক্ত হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষদের বাজার খরচ আরও কিছুটা কমবে। টিসিবির হিসাবে রোববার রাজধানীতে বাজারগুলোতে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি চাল বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। আর সরু চালের (নাজিরশাইল-মিনিকেট) দাম ৬০ থেকে ৭৫ টাকা।
টিসিবি বলছে, এক বছর আগেও এই তিন ধরনের চালের দাম প্রায় একই ছিল।
নিম্ন আয়ের এক কোটি উপকারভোগী পরিবারের মধ্যে চালসহ ভর্তুকি মূল্যের পণ্য বিক্রি জুলাই মাসজুড়ে চলবে বলে রোববারের অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
নিত্যপণ্যের দরের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ২০২২ সালের ২০ মার্চ স্বল্প আয়ের মানুষদের মধ্যে কম দামে পণ্য বিক্রি করতে টিসিবি কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারীর সময় প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তা পাওয়া ৩৮ লাখ ৫০ হাজার সুবিধাভোগীর সবাইকেই দেওয়া হয় এই কার্ড। এর সঙ্গে নতুনভাবে যুক্ত হয় ৬১ লাখ ৫০ হাজার পরিবার।
সব মিলিয়ে এক কোটি পরিবার এখন ফ্যামিলি কার্ডের আওতায়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন টিসিবির চেয়ারম্যান আরিফুল হাসান। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেন, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাখাওয়াত হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খান প্রমুখ।
কমেন্ট