বাংলাদেশ শিগগিরই জি-২০ জোটের সদস্য হবে, আশা অর্থমন্ত্রীর
ভারতের গুজরাটে জি-২০ জোটভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল । ছবি: অর্থ মন্ত্রণালয়
বাংলাদেশ শিগগিরই বিশ্বের শিল্পোন্নত ও বিকাশমান অর্থনীতির জোট জি-২০-এর সদস্য হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
জি-২০ দেশগুলোর অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের অংশগ্রহণে ভারতের গুজরাটের গান্ধীনগরে অনুষ্ঠিত দুই দিনের সম্মেলনের প্রথম দিন সোমবার অর্থমন্ত্রী এমন আশাবাদ প্রকাশ করেন।
সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আশা করা যায়, অচিরেই বাংলাদেশ জি-২০ জোটে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে।”
অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের ধারাবাহিক অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরে বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে আমাদের জিডিপি ছিল মাত্র ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। আমাদের জিডিপি এখন ৪৬০ বিলিয়ন ডলার।
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রাসারী ও দৃঢ় নেতৃত্বে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ, ২০৩৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২৪তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।”
২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট উন্নত দেশে’ পরিণত হতে বাংলাদেশের লক্ষ্যের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে মোট ছয় সদস্যের দল এতে অংশ নিচ্ছে। অন্যরা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ইকোনমিক মিনিস্টার মোহাম্মদ রাশেদুল আমীন, অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিব ফেরদৌস আলম, অর্থ বিভাগের উপসচিব মুশফিকুর রহমান এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম।
প্রতিনিধিদলের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “সম্মেলনের এক ফাঁকে আজই (সোমবার) ভারতীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের সঙ্গে ২০ মিনিটের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসার কথা রয়েছে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের। এতে উভয় দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন দিক ও সমস্যা সমাধানের কথা উঠে আসবে।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, “প্রতিবেশী বন্ধুদেশের কাছ থেকে পাওয়া এ আমন্ত্রণ অবশ্যই আমাদের জন্য অনেক সম্মানের। আর জি-২০ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশ হওয়ার এক অনন্য সুযোগ।”
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী ও দৃঢ় নেতৃত্বে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল এবং বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। বিশ্বব্যাপী যে চলমান অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, এ বিষয়ে আমাদের অধিকতর সচেতন হতে হবে। সংকট নিরসনে সবাইকে আন্তরিক হয়ে সমাধান করতে হবে, যেখানে জি-২০ জোটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।”
বাংলাদেশ জি-২০-এর সদস্য নয়। তবে শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক দেশ ভারত সদস্যদেশগুলোর বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ৯টি দেশকে অতিথিদেশ (গেস্ট কান্ট্রি) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। দক্ষিণ এশিয়া থেকে অতিথিদেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। অন্য আট অতিথিদেশ হচ্ছে নেদারল্যান্ডস, মিসর, মরিশাস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও স্পেন।
জি-২০ গ্রুপের সদস্যের মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
স্পেন হচ্ছে এ জোটের স্থায়ী আমন্ত্রিত অতিথি। ১৯৯৯ সালে গঠিত জি-২০-এর বর্তমান চেয়ার ভারত। আগামী ৯ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলন এই জোটের ১৮তম সম্মেলন। এবারের স্লোগান ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সেই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
জোটটির প্রথম সম্মেলন হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি শহরে। বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৮৫ শতাংশ, বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ এবং জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে জি-২০ ভুক্ত দেশগুলো।
কমেন্ট