এক দশকে দেশে শিশু শ্রমিক বেড়েছে ৭৭ হাজার
বাংলাদেশের ইটের ভাটাগুলোয় কাজ করে বহু শিশু-কিশোর শ্রমিক। ফাইল ছবি
দেশে শিশু শ্রম কমানোর নানা উদ্যোগের মধ্যেও শিশু শ্রমিকের সংখ্যা কমছে না; উল্টো বেড়েই চলেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে শিশু শ্রমিক মুক্ত করার লক্ষ্য ঠিক হলেও পরিস্থিতি উল্টো দিকে গড়ানোর চিত্র উঠে এল সরকারি এক জরিপে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত এই জরিপে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৭৭ হাজার বেড়েছে।
বর্তমানে শ্রমে জড়িত রয়েছে ১৭ লাখ ৭৬ হাজার শিশু (যাদের বয়স ৫ থেকে ১৪ বছর)। এর মধ্যে ঝুকিপূর্ণ শ্রমে আছে ১০ লাখ ৬৮ হাজার। আর ঝুঁকিহীন শ্রমে রয়েছে ৭ লাখ ৭ হাজার শিশু।
ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কিছুটা কমার চিত্র এসেছে জরিপটিতে। ২০১৩ সালে এই খাতে ছিল ৩ দশমিক ২০ শতাংশ শিশু, তা এখন নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭০ শতাংশে।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে এক অনুষ্ঠানে বিবিএস পরিচালিত ‘জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২’ প্রকাশ করা হয়। জরিপের ফলাফল অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক ও বিবিএস কম্পিউটার অনুবিভাগের উপ পরিচালক সাদ্দাম হোসেন খান।
তিনি বলেন, জরিপের তথ্য অনুযায়ী গত বছর পর্যন্ত দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সের মোট শিশুর সংখ্যা ৩ কোটি ৯৯ লাখ। এরমধ্যে শ্রমে নিয়োজিত শিশু (৫-১৪ বছর) রয়েছে প্রায় ১৭ লাখ ৭৬ হাজার জন।
“অথচ ১০ বছরে আগে পরিচালিত শিশুশ্রম জরিপে শিশু শ্রমিক ছিল ১৬ লাখ ৯৮ হাজার। অর্থাৎ ১০ বছরে দেশে শিশু শ্রম কমানোর জন্য নানা রকম উদ্যোগের মধ্যেও শিশু শ্রমিকের সংখ্যা উল্টো ৭৭ হাজার বেড়েছে।”
দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী মোট শিশুর সংখ্যা ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬৪ হাজার ৫ জন পাওয়া গেছে এবার। ১০ বছর আগের জরিপেও সংখ্যাটি প্রায় সমান ছিল। ২০১৩ সালে শিশু শ্রমিক ছিল ৩ কোটি ৯৬ লাখ ৫২ হাজার ৩৮৪ জন।
গত বছর পর্যন্ত মোট শিশুর ৫১ দশমিক ৭৯ শতাংশ ছিল পুরুষ, বাকি ৪৮ দশমিক ২১ শতাংশ নারী।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও‘র সংজ্ঞায় ৫ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত মানুষকে শিশু ধরা হয়। এরমধ্যে ৫ থেকে ১১ বছরের শিশুরা সপ্তাহে এক ঘণ্টা, ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু সপ্তাহে ২৫ ঘণ্টা এবং ১৪ থেকে ১৭ বছরের শিশুদের সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করালে তাকে শিশু শ্রম বলা হয়।
বিবিএসের জরিপ প্রতিবেদনে ১৪ বছর বয়সের নিচে থাকা শিশুদের শ্রমে যুক্ত থাকার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হলেও জানানো হয়, দেশে ৫-১৭ বছর বয়সী মোট কর্মজীবী শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা এবার কমেছে। ২০২২ সালে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত শিশুর সংখ্যা পাওয়া গেছে ১০ লাখ ৬৮ হাজার। ২০১৩ সালে তা ছিল ১২ লাখ ৮০ হাজার।
তিনি জানান, এই জরিপকাজে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে টানা ৩ মাস ১০৭ জন কর্মী সারা দেশের ৩০ হাজার ৮১৬টি ঘর থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “বিশ্ব থেকে শিশু শ্রম দুর করার জন্য প্রায় সকল দেশ কাজ করছে। আমরা অব্যাহতভাবে কাজ করছি। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে শিশুশ্রম দুর করা হবে।”
শিশুশ্রম দূর করতে আইএলওসহ বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে কারিগরি সহযোগিতা চান মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ইহসান-ই- ইলাহী বলেন, “বর্তমান সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে শিশুশ্রম দুর করতে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প আনছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই প্রকল্প চুড়ান্ত অনুমোদন পেতে পারে।”
যুক্তরাজ্যের উপ হাই কমিশনার ম্যাট কানেল বলেন, “শিশুশ্রম দুর করার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হচ্ছে শিশুকে স্কুলে পাঠানো নিশ্চিত করা। এরপর ঝুকিপূর্ণ পরিবারগুলোর জন্য আর্থিক সহযোগিতা করা গেলে শিশুশ্রম কমে আসবে।”
পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন, আইএলওর আবাসিক প্রতিনিধি টুমো পুটিয়ানেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
কমেন্ট