এডিপির ৮৪% বাস্তবায়ন, শেষ মাসে ব্যয় ৫৩ হাজার কোটি টাকা

এডিপির ৮৪% বাস্তবায়ন, শেষ মাসে ব্যয় ৫৩ হাজার কোটি টাকা

আশঙ্কা করা হয়েছিল, এবার সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) বাস্তবায়ন বেশ কম হবে; ৮০ শতাংশও হবে না। কিন্তু সে শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রেকর্ড ৫৩ হাজার ৭৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা খরচের মধ্য দিয়ে সংশোধিত এডিপির ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।

দেড় বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। চাপ সামাল দিতে ব্যয় সংকোচন তথা কৃচ্ছসাধনের পথ বেছে নিয়েছিল সরকার। কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন স্থগিতসহ খরচ কমানোর নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। 

এ সব কারণে আশঙ্কা করা হয়েছিল, এবার সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) বাস্তবায়ন বেশ কম হবে; ৮০ শতাংশও হবে না। কিন্তু সে শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রেকর্ড ৫৩ হাজার ৭৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা খরচের মধ্য দিয়ে সংশোধিত এডিপির ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে; যা আগের অর্থবছরের তুলনায় অবশ্য ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশীয় পয়েন্ট কম। 

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বৃহস্পতিবার ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ কোটি ৬৭ লাখ টাকার সংশোধিত এডিপির ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯ কোটি  ৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এ ব্যয় সংশোধিত এডিপির মোট বরাদ্দের ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। 

আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) এ হার ছিল ৯২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। অর্থ ব্যয়ের অঙ্ক ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৬৪৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। 

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বিদায়ী অর্থবছরে আগের অর্থবছরের চেয়ে ২ দশমিক ২৮ শতাংশ অর্থ কম খরচ হয়েছে। 

২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে অর্থাৎ জুলাই- থেকে মে পর্যন্ত সময়ে মোট ১ লাখ ৪৬ হাজার ২২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। যা ছিল সংশোধিত এডিপির মোট বরাদ্দের ৬১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। 

এই হিসাব বলছে, বিদায়ী অর্থবছরের শেষের এক মাসেই (জুন) ৫৩ হাজার ৭৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। অর্থাৎ মোট সংশোধিত এডিপির প্রায় ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশই ব্যয় হয়েছে শেষের মাস জুনে।   

অতীতেও শেষের মাসে বেশি অর্থ খরচরের নজির আছে। তবে এতটা খরচ কখনই হয়নি।

বাস্তবায়নের মন্থরগতির কারণে গত মার্চ মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার মূল এডিপি থেকে ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬১ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

শেষ মুহূর্তে ৮০ শতাংশের বেশি এডিপি বাস্তবায়নে সন্তোষ প্রকাশ করে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মুহা. মহিউদ্দিন এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “আসলে আমাদের দেশের প্রাকৃতিক মৌসুমের বৈশিষ্ট্যের কারণেই অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে কাজ এগিয়ে নিতে হয়। অর্থবছর শুরু হয় বৃষ্টির মৌসুমে। কাজ শুরু করতেই পার হয়ে যায় মাস দুই। এভাবে শেষ পর্যন্ত শেষের দিকে এসে তাড়াহুড়া করে কাজ শেষ করতে হয়।” 

তবে অনেক সময় চলমান কোনও প্রকল্পের আংশিক কাজ অব্যাহত থাকার মধ্যে ইউনিট হিসেবে কাজ শেষ করতে না পারার কারণে কাজের অগ্রগতির শতভাগ দেখানো যায় না বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

“যে কারণে শেষ দিকে এসে বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি বেড়ে যায়,” যোগ করেন তিনি। 

এডিপি বাস্তবায়ন বিষয়ক আইএমইডি প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেশি বরাদ্দ পাওয়া ১৫ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বরাদ্দের চেয়েও বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। এই মন্ত্রণালয় ১০৩ দশমিক শূন্য চার শতাংশ অর্থ খরচ করেছে। 

জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বেশি অর্থের প্রয়োজন হলে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প থেকে অর্থ কাঁটছাঁট করে গুরুত্বপূর্ণ সেই প্রকল্পে ব্যয় করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশনার আলোকেই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বরাদ্দের চেয়েও বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। 

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বা বরাদ্দের ৯৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে সেতু বিভাগ। তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে বিদুৎ বিভাগ ৯৩ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ। 

এরপর যথাক্রমে-সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৯১ দশমিক ১৪ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয় ৯০ দশমিক ৪৬ শতাংশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৯০ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে ৮৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে প্রায় ৮৯ দশমিক ২৯ শতাংশ।

এছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগ ৮২ শতাংশ, কৃষি মন্ত্রণালয় ৮৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৭৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৮২ দশমিক ৪৫ শতাংশ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৭১ দশমিক ৪৫ শতাংশ, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ৭৭ দশমিক ২০ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে বরাদ্দের ৬৮ দশমিক ২০ শতাংশ। 

আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান, অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে গত অর্থবছর সরকার কৃচ্ছতা নীতি নেয়। প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় এ, বি, সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। বি ক্যাটাগরির প্রকল্পের একটা অংশ এবং সি ক্যাটাগরির প্রকল্পের অর্থায়ন সম্পূর্ণ স্থগিত রাখা হয়। এ কারণেই ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন কম হয়েছে বলে জানান তারা। 

বাস্তবায়ন কম প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইএমইডির এক কর্মকর্তা এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “গত অর্থবছরের শুরু থেকে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কমিয়ে ডলার সাশ্রয়ে দেশি অর্থায়নের চলমান প্রকল্পে আমদানি অনুৎসাহিত করা হয়। কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন স্থগিত রাখা হয়। অর্থবছরের প্রথম থেকেই বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের উদ্যোগ থাকায় বিদেশি পণ্য আমদানি করতে হয়-  

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “এবারের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছিল। সে কারণে আমাদের ব্যয় সংকোচনের পথ বেছে নিতে হয়েছিল। তবে চাপ ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যেও ৮৪ শতাংশের বেশি এডিপি বাস্তবায়ন মোটের উপর খুবই ভালো বলে আমি মনে করি।”

প্রথমবারের মতো লাখ টাকা ছাড়াল সোনার ভরি  পরবর্তী

প্রথমবারের মতো লাখ টাকা ছাড়াল সোনার ভরি

কমেন্ট