উত্তাপ কমছে বাজারে, চাল এক বছর ধরে ‘স্থিতিশীল’

উত্তাপ কমছে বাজারে, চাল এক বছর ধরে ‘স্থিতিশীল’

বাজারে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। আর সরু চালের (মিনিকেট-নাজিরশাইল) কেজি ৬০ থেকে ৭৫ টাকা।

বেশ কিছুদিন ধরে দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। রাজধানী ঢাকার বাজারে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। আর সরু চালের (মিনিকেট-নাজিরশাইল) কেজি ৬০ থেকে ৭৫ টাকা।

এক বছর আগেও চালের দাম এই একই ছিল বলে হিসাব দিয়েছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি। টিসিবি’র এই তথ্য আমলে নিতেই হচ্ছে। আসলেই গত এক বছরে চালের দামের খুব একটা হেরফের হয়নি। 

তার প্রমাণ পাওয়া যায়, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, আদা-রসুন, মাছ-মাংস নিয়ে ফলাও করে প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও চাল নিয়ে তেমন কোনো প্রতিবেদন দেখা যায়নি। 

এখন সুুখবর হচ্ছে- কোরবানির ঈদের পর অনেকটা বেড়ে যাওয়া সবজির দামও কিছুটা কমতে শুরু করেছে। অনেকটাই কমেছে তুমুল আলোচিত পেঁয়াজ, আদা আর কাঁচামরিচের দর।  

বর্ষায় পানি কমলে মাছের দামও কমে আসবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন বিক্রেতারা। মাঝে দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য বর্ষাকে দায়ী করে তারা বলছেন, পানি বেশি থাকলে মাছ ধরা পড়ে কম। আর সরবরাহ কম থাকলে ‘চাহিদাবিধি’ মেনেই বাড়ে দাম। 

বাজারে সরবরাহ কিছুটা বাড়ায় দাম কমেছে ইলিশের। ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ইলিশ এখন সাত থেকে আটশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া মরিচের দাম কমে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কমেছে গত কয়েকদিন ধরে আলোচনায় থাকা মসলা আদার দামও। 

ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীর শেওড়াপড়া, হাতিরপুল ও মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এসব বাজারে সবজির দামও কমতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, উত্তাপ কমছে বাজারে। 

যদিও রাশিয়া শস্যচুক্তি নবায়ন না করায় এবং ভারত চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিয়ে নতুন সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

গত সপ্তাহে সবজির দাম কিছুটা বাড়তি থাকলেও এ সপ্তাহে বাজারে কিছু কিছু সবজির দাম কমেছে। শেওড়াপাড়া বাজারে গত সপ্তাহে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া শসা শুক্রবার ৪০ টাকায়  বিক্রি হচ্ছে। ৮০ টাকার ঢেঁড়স এখন ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বড় লাউ পিস ৬০ টাকা। মাঝারি আকারের লাউ ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

কাঁচামরিচ গত সপ্তাহে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে কমে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকা টমেটো ও গাজরের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা ও ১৪০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া উস্তা ও করলা দামকিছুটা কমে ৮০ টাকায়  বিক্রি হচ্ছে৷ 

তবে অপরিবর্তিত রয়েছে পটল, বেগুন ও কুশির, দুন্দুল ও ঝিঙার দাম। এছাড়া শাকের মধ্যে পুঁইশাক মানভেদে ৩০ টাকা কেজিতে, কলমি শাক প্রতি আঁটি ১০ টাকা, পাটশাক প্রতি আঁটি ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

হাতিরপুল বাজারে ছোট চিংড়ি  প্রতি কেজি ৮০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে মাঝারি মানের চাষ করা পাবদা মাছ। রুই কেজি ৩৫০ টাকা গত সপ্তাহে ছিল ৩০০ টাকা। টেংরা ৫০০ টাকা। 

তবে অপরিবর্তিত রয়েছে পাঙ্গাশের দাম। বড় সাইজের পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ২০০ এবং মাঝারি সাইজের প্রতি কেজি ১৮০ টাকা। 

মোহাম্মদপুর  কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বড় সাইজের রসুন (ভারতীয়) গত সপ্তাহে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট রসুন (দেশি) গত সপ্তাহে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে দাম কিছুটা কমে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে ভারতীয় পেঁয়াজ এবং ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ঈদের পর থেকেই আকার ও মানভেদে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে আলু। এ সপ্তাহে আদার ঝাঁজ কমে ৪০০ টাকা কেজি দরের আদা ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। 

তবে ডিমের ডজনে ৫ টাকা বেড়েছে। ফার্মের মুরগির লাল ডিম প্রতি ডজন ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া গত সপ্তাহে ফার্মের সাদা ডিম ১২৫ টাকা ডজন বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ১৩৫ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। 

অপরদিকে গত সপ্তাহে ২০০ টাকা ডজনে বিক্রি হওয়া হাঁসের ডিম এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। 

মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে কিছুটা কমে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া কক বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজিতে। ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস।

তবে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই চিনির দাম বাড়িয়ে দেওয়া মিল মালিকরা দাম কমাননি। বাজারে প্যাকেট করা চিনি সেই কবে থেকেই উধাও। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে। 

শেওড়াপাড়া বাজারের মুদি দোকানদার রিপন এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “ আমরা পাইকারি কিনে আনি ১৩৫ টাকায়। বিক্রি করি ১৪০ টাকায়। পরিবহন খরচ আছে না।” 

তবে গত সপ্তাহে ভোজ্য তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমানোর যে ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা, শুক্রবার সব বাজারেই সেই কম দামে সয়াবিন তেল বিক্রি হতে দেখা গেছে। 

তবে বাজারে পণ্যের দাম যে কমতে শুরু করেছে, সেটা মানতে নারাজ শেওড়াপাড়া বাজারে বাজার করতে আসা তসলিম উদ্দিন। এআরএইচ ডটকমকে তিনি বলেন, “কই কমেছে? কিসের দাম কমেছে? অনেক বেড়ে এক-দুই টাকা কমলেই, সেটাকে কমা যায় নাকি?” 

চালের দাম এক বছর বাড়েনি-এ প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে তসলিম বলেন, “বাড়তে বাড়তে চূড়ায় উঠেছে। ৫০ টাকার কমে কোনো চাল নেই বাজারে। কমে ৪০ টাকায় নেমে আসত। তাহলে বুঝতাম কমেছে। ও সব বুঝি না, আমি যা আয় করি, তা দিয়ে সংসার চলে না। এটাই বড় কথা।” 

চালের বাজার নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “দেড় বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের দাম বাড়লেও আমরা (সরকার) দেশের বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছি।” 

এদিকে গত ১৬ জুুলাই থেকে টিসিবি সারা দেশের ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারের মধ্যে নিয়মিত পণ্যের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ৩০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল বিক্রি শুরু করেছে। 

এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন খাদ্যশস্য সরকার নানাভাবে বিতরণ করছে। দেশে এখন চালের মজুত ভালো। ফলে বাজারে বড় কোন সংকট নেই। চালের বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে পেরেছি। আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে, বোরোর বাম্পার হয়েছে।”  

সরকার চালের বাজার ঠিক রাখার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী।

কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “আমন ও বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। সে কারণেই চালের দাম বাড়েনি। তবে, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।”

এডিপির ৮৪% বাস্তবায়ন, শেষ মাসে ব্যয় ৫৩ হাজার কোটি টাকা পরবর্তী

এডিপির ৮৪% বাস্তবায়ন, শেষ মাসে ব্যয় ৫৩ হাজার কোটি টাকা

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর