আরও বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে জাপান

আরও বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে জাপান

২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশ গড়ার যে লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাপান সরকার এ অগ্রযাত্রায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।

জাপান বাংলাদেশের আরও বড় বড় (মেগা) প্রকল্পে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে জাপানের অর্থনীতি ও বাণিজ্যমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ সুখবর দিয়েছেন মন্ত্রী। 

টিপু মুনশি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশ গড়ার যে লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাপান সরকার এ অগ্রযাত্রায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।

“জাপান দীর্ঘসময় ধরে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে পাশে আছে। তারা আমাদের দেশের বড় বড় প্রজেক্টে বিনিয়োগ করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়েছে।” 

উভয়দেশের ব্যবসায়ীদের মাঝে যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় খাত অনুসন্ধান করার ওপর জাপানের অর্থনীতি ও বাণিজ্যমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেছেন বলে জানান টিপু মুনশি। 

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “জাপান-বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (ইপিএ) কাজ চলমান আছে। ইতোমধ্যে জাপানে এ সংক্রান্ত প্রথম রাউন্ড আলোচনা হয়েছে এবং আগামী ২৫ থেকে ২৬ জুলাই ঢাকায় দ্বিতীয় রাউন্ড আলোচনা হবে। খুব শিগগিরই এই চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে।” 

“অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (ইপিএ) মাধ্যমে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের সমস্যা সমাধান করে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করা হবে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশে শিল্প উৎপাদন বাড়বে ও আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে।” 

বাংলাদেশ-জাপানের প্রধানমন্ত্রীরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করার ইচ্ছা পোষণ করায় উভয় দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ও সহযোগিতার মাত্রা আরও বিস্তৃত হবে বলে জানিয়েছেন টিপু মুনশি।

এছাড়া বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তরিত হওয়ার পর শুল্কমুক্ত বাণিজ্য অগ্রাধিকার বিষয়েও কথা হয়েছে বলেন জানান তিনি। 

“আজকের বৈঠকে আগামী ৫০ বছর একসঙ্গে কাজ করার জন্য করণীয় এবং ব্যবসায়ীক বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কীভাবে দুই দেশের অর্থ-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা যায় সেসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।” 

বৈঠকের আগে একই হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘জাপান-বাংলাদেশ রিলেশনশিপ ফর নেক্সট ফিফটি ইয়ার্স’ শীর্ষক সামিটে বক্তব্য রাখেন জাপানের অর্থনীতি ও বাণিজ্যমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরার। এই অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ছাড়াও শিল্পমন্ত্রী শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বক্তব্য রাখেন।

জাপান সরকারের অর্থায়নে চলমান বড় প্রকল্প 

জাপান সরকারের অর্থায়নে রাজধানী ঢাকায় বাস্তবায়ন বহুল প্রতিক্ষিত মেগা প্রকল্প মেট্রোরেল প্রকল্পের পুরো কাজ প্রায় শেষের দিকে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ছুঁটছে মেট্রোরেল। সেপ্টেম্বরের  মধ্যেই মতিঝিল পর্যন্ত ছুঁটবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 

পাতাল রেল নির্মাণেও অর্থায়ন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাপান।  

এছাড়া জাপান সরকারের অর্থায়নে আরেকটি বড় প্রকল্প মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও প্রায় শেষের দিকে। শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণেও অর্থায়ন করেছে জাপান।

উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বারে যমুনা নদীর বুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এই সেতু নির্মাণ প্রকল্পেও জাপান সরকার অর্থায়ন করেছে। 

বাংলাদেশে অন্তত নয়টি খাতে কাজ করছে জাপান। এক. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, দুই. পরিবহন, তিন. নগর উন্নয়ন, চার. সুশাসন, পাঁচ. স্বাস্থ্য, ছয়. শিক্ষা, সাত. কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন, আট. দুর্যোগ প্রতিরোধ ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ। 

বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে জাপানের পথচলা শুরু হয় ১৯৭৩ সালের মার্চে। গত মার্চে ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে জাপান একটি ম্যাগাজিন তৈরি করেছে। সেই ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল পর্যন্ত জাপান বাংলাদেশকে ৯৬ হাজার ৪৬ মিলিয়ন ইয়েনের কারিগরি সহায়তা দিয়েছে। পাশাপাশি আনুষ্ঠানিক উন্নয়ন সহযোগিতা (ওডিএ) কর্মসূচির আওতায় দেশটি দিয়েছে ২,৩৯৫.২৮২ বিলিয়ন ইয়েন। এই সময়ে অনুদান সাহায্য এসেছে ১৩৯,০৮৪ মিলিয়ন ইয়েন। 

এই ৫০ বছরে প্রশিক্ষণার্থী এবং বিদেশি শিক্ষার্থী এসেছেন ১৩ হাজার ৮৬৬ জন। দেশটির বিদেশি সহযোগিতা সেচ্ছাসেবী এসেছেন এক হাজার ২৮৪ জন। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) থেকে বিশেষজ্ঞ এসেছেন চার হাজার ৯২১ জন। 

রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলার 

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিবেচনায় বাংলাদেশের জন্য জাপান ১১তম বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য এবং সপ্তম বৃহত্তম আমদানির উৎস। ২০২১-২২ অর্থবছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩৭৯ কোটি (৩.৭৯ বিলিয়ন) ডলার 

অন্যদিকে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের বিবেচনায় জাপান ১২তম অবস্থানে রয়েছে। ইতিমধ্যে জাপানের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে ৪৫ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের বিনিয়োগ করেছেন। 

এদিকে জাপানে পণ্য রপ্তানিতে নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাপানে প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) চেয়ে ৪০ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। 

জাপানে পণ্য রপ্তানি থেকে এত বিদেশি মুদ্রা এর আগে কখনই দেশে আসেনি।

ব্যবসায়ীরা নতুন আশায় 

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে জাপানভিত্তিক কোম্পানি ও যৌথ উদ্যোগের প্রত্যাশায় নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। তাদের আশা, এই অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘিরে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ইতিহাস নতুন মাত্রা পাবে। 

জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি তারেক রাফি ভুঁইয়া এ বিষয়ে এআরএইচ ডটকমকে বলেন, ‘‘নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ইকনোমিক জোন আমাদের প্রধানমন্ত্রী ডিসেম্বরের ৬ তারিখ উদ্বোধন করেছেন। জাপানি প্রতিষ্ঠান এর ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকায় তাদের অনেক কোম্পানি ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট করার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে। জাপানের সঙ্গে ব্যবসায়িক খাতে এটা নতুন মাত্রা যোগ করবে।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগের অবস্থা এখন বেশ ভালো। তাদের অনেকগুলো প্রজেক্ট বাংলাদেশে চলছে। প্রজেক্টগুলো ভালো করায় অনেক কোম্পানি বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশের জিডিপি এখন ভারতের চেয়ে ভালো আর সার্বিকভাবে ভিয়েতনামের চেয়েও বড় হয়েছে। তাই বাংলাদেশের মার্কেট ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। একারণে জাপানের অনেক কনজিউমার এবং সার্ভিস কোম্পানি বিনিয়োগ করছে।’’ 

গুলশানে অফিস নিচ্ছে এফবিসিসিআই পরবর্তী

গুলশানে অফিস নিচ্ছে এফবিসিসিআই

কমেন্ট