টেকসই খাদ্য নিশ্চিতে জাতিসংঘ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ৫ প্রস্তাব
সোমবার ইতালির রোমে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সদর দপ্তরে ‘ফুড সিস্টেমস সামিট + ২ স্টকটেকিং মোমেন্ট’ শীর্ষক আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি
বিশ্বব্যাপী টেকসই, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের ‘ফুড সিস্টেম’ সম্মেলনে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার ইতালির রোমে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সদর দপ্তরে ‘ফুড সিস্টেমস সামিট + ২ স্টকটেকিং মোমেন্ট’ শীর্ষক আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব প্রস্তাব দেন বলে বাসস জানিয়েছে।
শেখ হাসিনা প্রথম প্রস্তাবে আধুনিক কৃষিতে বিনিয়োগের জন্য বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের নেওয়া উদ্যোগ কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তি চালু রাখার আহ্বান জানিয়ে দ্বিতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো ধরনের বাণিজ্য বাধা বিশেষ করে খাদ্য ও সার রপ্তানির উপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নিতে হবে।
সরকার প্রধান তার তৃতীয় প্রস্তাবে বলেন,জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ‘ফুড ব্যাংক’ স্থাপনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উন্নয়নশীল দেশের খাদ্য ব্যবস্থা যে হুমকিতে পড়েছে, সেই পরিস্থিতি মোকাবেলাতেও এমন ব্যাংক সহায়ক হবে।
চতুর্থ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় যেসব উদ্ভাবন হয়েছে, সেই ন্যানো-টেকনোলজি, বায়ো-ইনফরমেটিক্স এবং উন্নত কৃষি প্রযুক্তি সবার জন্য সহজলভ্য করতে হবে।
প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অপচয় হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা পঞ্চম প্রস্তাবে বলেন, এই অপচয় রোধে তরুণদের সম্পৃক্ত করে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
“আমরা যদি সম্মিলিতভাবে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আমরা টেকসই বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে সক্ষম হব।”
আধুনিক খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা যে বিশ্বব্যাপী গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনে বড় ভূমিকা রাখছে সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, “আমাদের খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, ব্যবহারকে জলবায়ু-নিরপেক্ষ করতে বিনিয়োগ করা উচিত। এর জন্য অবশ্য আমাদের যথেষ্ট রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আন্তর্জাতিক জনমত প্রয়োজন।”
বাংলাদেশ সম্প্রতি গ্লোবাল মিথেন অঙ্গীকারে যোগদান করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা আশা করি, এই উদ্যোগের প্রধান পৃষ্ঠপোষকরা তাদের প্রতিশ্রুত আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে আসবে।”
শেখ হাসিনা তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, “আমরা আমাদের ক্ষুদ্র চাষিদের সেচের জন্য সৌর বিদ্যুতের ব্যবহারকে উৎসাহিত করছি। আমাদের কৃষি, পশুসম্পদ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সাশ্রয়ী প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার দরকার।”
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সামুদ্রিক এলাকায় মাছ ধরার জন্য বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
জলবায়ু সংকটে টেকসই খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আর বিলম্ব না করে কী করা দরকার, তা আমাদের চিহ্নিত করতে হবে।”
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, দীর্ঘস্থায়ী খরা, ব্যাপক বন্যা ও পরিবর্তনশীল বৃষ্টিপাতের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশে আমাদের উপকূলীয় ভূমিতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততা অনুপ্রবেশের ফলে ধান উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। নদীভাঙন, নগরায়ন, শিল্প প্রবৃদ্ধি এবং অন্যান্য কারণের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর আবাদি জমি হ্রাস পাচ্ছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সবুজ বিপ্লবের’ ডাক দিয়েছিলেন। এখন স্মার্ট ‘কৃষি-খাদ্য বিপ্লবের’ সময় এসেছে। কৃষি খাতকে রূপান্তর করতে প্রকৃতির জন্য ইতিবাচক সমাধান এবং উন্নত প্রযুক্তি উভয়ই প্রয়োগ করতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল, সামোয়া ফিয়ামের প্রধানমন্ত্রী নাওমি মাতাফা এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বক্তৃতা করেন।
কমেন্ট