রুপিতে কেনা পণ্যের প্রথম চালান এল
রুপিতে লেনদেন উদ্বোধনের ১৪ দিনের মাথায় রুপিতে কেনা ৩০টি পিকআপ ভ্যান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারত থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে। ছবি: এআরএইচ ডটকম
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রুপিতে বাণিজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।
ডলার সংকটের কারণে ভারত-বাংলাদেশ সরকারের সম্মতিতে দুদেশের মধ্যে রুপিতে লেনদেন উদ্বোধনের ১৪ দিনের মাথায় রুপিতে কেনা ৩০টি পিকআপ ভ্যান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারত থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক আব্দুল জলিল এআরএইচ ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার নিতা কোম্পানি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান টাটা মোটরসের কাছ থেকে ১ কোটি ২৪ লাখ রুপিতে এ পিকআপ ভ্যানগুলো কিনেছে।
আমদানির পর পিকআপ ভ্যানগুলো বেনাপোল বন্দরের ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ডে রাখা হয়েছে।
এর আগে গত ১১ জুলাই ঢাকায় লো মেরিডিয়ান হোটেলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দুই দেশের বাণিজ্যে রুপি ব্যবহারের উদ্বোধন করা হয়। ওই দিনই ঢাকার নিতা কোম্পানি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান টাটা মোটরসের কাছ থেকে ১ কোটি ২৪ লাখ রুপিতে এ পিকআপ ভ্যানগুলো কিনতে এলসি (ঋণপত্র) খুলেছিল।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার তানভীর আহমেদ এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “রুপির মাধ্যমে ভারত থেকে প্রথম চালান আমদানি হয়েছে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। রুপিতে পণ্য আমদানি হলে ডলারের ওপর চাপ কমে যাবে অনেকাংশে।”
দেড় বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশ ও ভারতেও ডলারের সংকট দেখা দেয়। এই সংকট সামাল দিতে দুই দেশের মধ্যে টাকা-রুপিতে বাণিজ্য করতে আলোচনা শুরু করে।
সেই আলোচনার পরিপেক্ষিতে রুপিতে লেনদেন শুরু করেছে দুই দেশ। পরে টাকায় লেনদেনের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
ডলার সংকটের কারণে এত দিন দুই দেশের ব্যবসায়ীরা চাহিদামতো পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করতে পারেনি। এতে শিল্পকলকারখানার উৎপাদনসহ দেশের উন্নয়নমূলক কাজ বিঘ্ন ঘটে। রুপিতে বাণিজ্য দ্রুতসময়ে পণ্য আমদানিতে বড় ভূমিকা রাখবে এবং ডলারের বিকল্প হিসাবে বড় ভূমিকা রাখবে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ , ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলারের মতো বাণিজ্য হয়। এর মধ্যে ভারতে পণ্য রপ্তানি থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসে। অর্থাৎ এই দুই বিলিয়ন ডলারের লেনদেন হবে রুপিতে। তবে ভারতে রপ্তানি বাড়াতে পারলে সে হিসাব পালটে যাবে। ডলারের নির্ভরতা আরও কমে আসবে।
বেনাপোল আমদানি ও রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, রুপিতে আমদানি ব্যয় মেটানোর বিষয়ে গত এক দশক আগে আলোচনা শুরু হয়। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ডলার সংকট দেখা দিলে রুপিতে পণ্য আমদানির বিষয়টি নতুন করে প্রাধান্য পায়।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, “রপ্তানি আয় থেকে যে রুপি আসবে তা দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। এতে আবার ডলারের ওপর নির্ভর করতে হবে। তাই আগামীতে রুপির পাশাপাশি বাংলাদেশি মুদ্রা টাকাতেও যাতে আমদানি ব্যয় মেটানো যায় তার দাবি জানাচ্ছি।”
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সামছুর রহমান বলেন, “এই সংকটের সময়ে রুপিতে আমদানি ব্যয় মেটানো বড় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এতে আমদানি-রপ্তানির পাশাপাশি রাজস্ব আয়ও বাড়বে।”
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নিতা কোম্পানি লিমিটেডের যশোর এরিয়ার ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান রুপিতে এলসি খোলা তাদের প্রথম পণ্য চালান বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কমেন্ট