গ্যাসের অপচয় রোধে ৩০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক
প্রকল্পের আওতায় ঢাকা ও রাজশাহীতে প্রায় ১২ লাখ প্রিপ্রেইড মিটার স্থাপন করা হবে।
গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশকে ৩০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থা বিশ্ব ব্যাংক।
বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১০৯ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৩ হাজার ২৭০ কোটি টাকা।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সংস্থাটির সদর দপ্তরে বিশ্ব ব্যাংকের বোর্ড সভায় এই ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এই অর্থ বাংলাদেশে আবাসিক ও শিল্প গ্রাহকদের জন্য প্রিপেইড মিটারিং সিস্টেমের মাধ্যমে গ্যাস বিতরণ ও ব্যবহারের দক্ষতা উন্নত করাসহ প্রাকৃতিক গ্যাসের মান শৃঙ্খলে মিথেন নির্গমন কমাতে সহায়তা করতে ব্যয় হবে।
‘গ্যাস সেক্টর ইফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড কার্বন অ্যাবাটমেন্ট প্রজেক্ট’ নামের প্রকল্পের আওতায় এ অর্থ দেয়ার কথা জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।
সংস্থাটি জানায়, প্রাকৃতিক গ্যাস বিতরণের যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য বড় একটি অংশের অপচয় হচ্ছে। যা রোধ করতে নানা উদ্যোগ থাকবে এ প্রকল্পে। এ ছাড়া বাসাবাড়ি কিংবা শিল্প কারখানায় মিটারের অভাবে গ্যাসের একটি বড় অংশ অপব্যবহার হচ্ছে।
অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় ঢাকা ও রাজশাহীতে প্রায় ১২ লাখ প্রিপ্রেইড মিটার স্থাপন করা হবে।
এর ফলে তিতাস গ্যাসের ঢাকা বিভাগের গ্রাহকদের মধ্যে প্রায় ৫৪ শতাংশ প্রিপ্রেইড মিটারের আওতায় আসবে।
এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় রাজশাহীতে ১ লাখ ২৮ হাজার প্রিপ্রেইড মিটার বসানোর কথাও জানানো হয়েছে। এ ছাড়া এর আওতায় ৫০টি শিল্প কারখানায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে স্মার্ট মিটার বসানো হবে।
এতে এসব শিল্প কারখানায় গ্যাসের অপচয় রোধ হওয়ার পাশাপাশি সঠিক ব্যবহার বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বিশ্ব ব্যাংক।
বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, “প্রকল্পটি বাংলাদেশের বাসাবাড়ি কিংবা শিল্প কারখানায় গ্যাসের অপচয় রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া গ্যাস লাইন লিকেজ হয়ে মিথেন গ্যাসের নিঃসরণসহ দুর্ঘটনা রোধেও প্রকল্পটি ভূমিকা রাখতে পারে।”
তিনি বলেন, “২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমানোর লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পটি পরিবার ও শিল্পে প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় কমানোসহ গ্যাসের পাইপলাইনে লুকায়িত মিথেন নির্গমন কমাতে সাহায্য করবে।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্পূর্ণ আবাসিক গ্রাহককে কভার করবে। এর আওতায় বৃহত্তর শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫০টি স্মার্ট মিটার চালু করা হবে।
সংস্থাটি আরও জানায়, এই প্রকল্পের আওতায় গ্যাস প্রবাহ পর্যবেক্ষণ উন্নত করতে ও গ্যাসের লিক কমাতে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (পিজিসিএল) নেটওয়ার্কে একটি সুপারভাইজরি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডেটা অ্যাকুইজিশন এবং জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম ইন্সটল করা হবে। এর মাধ্যমে গ্যাসের লিক সনাক্তকরণ এবং মেরামত করার জন্য গ্যাস নেটওয়ার্কে আরও ভালো পর্যবেক্ষণের সঙ্গে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের সবচেয়ে বড় উৎস তেল ও গ্যাস খাত থেকে আসে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র এনার্জি স্পেশালিষ্ট সামেহ আই মোবারেক বলেন, “প্রিপেইড গ্যাস মিটার এবং উন্নত মনিটরিং সিস্টেমগুলো প্রাকৃতিক গ্যাসের শেষ ব্যবহার অপ্টিমাইজ করতে, মিথেন লিকেজ প্রশমিত করতে, গৃহস্থালি এবং শিল্প ব্যবহারকারীদের জন্য গ্যাসের বিল কমাতে সহায়তা করবে। প্রকল্পটি প্রাকৃতিক গ্যাসের মান শৃঙ্খল বরাবর সিওটু এবং মিথেন নির্গমন উৎস সনাক্ত করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে।”
কমেন্ট