মোটা চালের দাম বাড়ছে

মোটা চালের দাম বাড়ছে

ভারত চাল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন কৃষি অর্থনীতিবিদ ও চাল ব্যবসায়ীরা।

বেশ কিছুদিন ধরে দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও হঠাৎ করেই তা বাড়তে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিতে দুই-তিন টাকা বেড়েছে। 

ভারত চাল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন কৃষি অর্থনীতিবিদ ও চাল ব্যবসায়ীরা।

দেশে উৎপাদন ও সরবরাহের বড় কোনো সংকট না থাকলেও রাজধানীর খুচরা বাজারে বেড়েছে মোটা চালের দাম। পাইকারিতে দাম বাড়ায় বেড়েছে খুচরায়ও। পাইকারি ব্যবসায়ীরা অবশ্য এই দাবি নাকচ করেছেন। অন্যান্য চালের দামে অবশ্য পরিবর্তন নেই। 

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া,  কারওয়ান বাজার ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে বাজারে মোটা চাল (গুটি স্বর্ণা) কেজিতে ২/৩ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহের ৫০ থেকে ৫১ টাকা কেজি দরের গুটি স্বর্ণা শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। 

শেওড়াপাড়া বাজারের চাল বিক্রেতা রিপন রায় এআরএইচ ডটকমকে বলেন, গত কয়েক দিনে বস্তাপ্রতি মোটা চালের দাম পাইকারিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজারে তাই দাম বেশি। অন্যান্য চালের দাম আগের মতোই আছে। 

রিপন বলেন, “বেশ কিছু দিন চালের দাম নড়াচড়া করেনি। হঠাৎ করেই মোটা চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২/৩ টাকা বেড়েছে। তবে মাঝারি ও সরু চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।” 

কেন মোটা চালের দাম বাড়ছে-এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “জানি না, পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত চাল রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় নাকি দাম বাড়ছে।” 

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যও বলছে, ঢাকার বাজারে মোটা চালের দাম বাড়তি। টিসিবি বলছে, এক মাসে মোটা চালের দাম বেড়েছে ২ দশমিক শূন্য চার  শতাংশ। 

টিসিবি বলছে, এক মাস আগে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শুক্রবার তা বেড়ে ৪৮ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। 

মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। আর সরু (নাজিরশাইল ও মিনিকেট) বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭৫ টাকায়। এক বছর আগেও এই দুই ধরনের চালের দাম একই ছিল।

বাজারে অন্যান্য চালের মধ্যে মাঝারি মানের বিআর ২৮ চাল খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। আর নানা পদের নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে।  

তবে দাম বাড়ার বিষয়টি নাকচ করে নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “চালের দাম আপাতত বাড়ার কারণ দেখছি না। তবে খরা বা বন্যার কারণে চলতি আমন উৎপাদন ব্যাহত হলে চালের দাম বাড়তে পারে।” 

একই কথা বলেছেন কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান। এআরএইচ ডটকমকে তিনি বলেন, “চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। সরকারি গুদামগুলোতে প্রায় ২০ লাখ টন চাল মজুত রয়েছে। কৃষকের কাছেও প্রচুর চাল রয়েছে। আমন ও বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিছু দিন পর আউশ ধান উঠবে; তারপর আমনও উঠবে। সে কারণে এখন চালের দাম বাড়ার কোনো যুক্তি নেই।” 

তিনি বলেন, “ভারত চাল রপ্তানি বন্ধ করেছে-এই অজুহাতে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে চালের দাম বাড়ানোর পায়তারা করছে। ইতোমধ্যে বাড়ানোও শুরু করে দিয়েছে। তাহলে এক-দেড় বছর চালের দাম স্থিতিশীল থাকলেও হঠাৎ করে মোটা চালের দাম বাড়বে কেন?” 

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি আগামী এক বছর আমাদের চাল নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। আমাদের যা মজুত আছে তা দিয়ে অনায়াসে এক বছর চলে যাবে। আউশের ভালো ফলন হবে বলে আমি সারা দেশে খবর নিয়েছি। সে কারণে ভারত কি করল, সেই অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা যাতে চালের দাম না বাড়াতে পারে-তা এখনই শক্ত হাতে ব্যবস্থা নিতে হবে।” 

এদিকে গত ১৬ জুুলাই থেকে টিসিবি সারা দেশের ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারের মধ্যে নিয়মিত পণ্যের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ৩০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল বিক্রি শুরু করেছে।  

এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন খাদ্যশস্য সরকার নানাভাবে বিতরণ করছে। দেশে এখন চালের মজুত ভালো। ফলে বাজারে বড় কোন সংকট নেই। চালের বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে পেরেছি। আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে, বোরোর বাম্পার হয়েছে।”   

সরকার চালের বাজার ঠিক রাখার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে দাবি করেন মন্ত্রী বলেন, “প্রচুর চাল মজুত আছে। কোনো সমস্যা নেই। কেউ চালের দাম বাড়াতে চাইল কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২৬ জুলাই বুধবার পর্যান্ত সরকারি গুদামগুলোতে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৭৫৩ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত আছে। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ৬০৫ টন চাল, ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৫ টন গম এবং ১ লাখ ২৮ হাজার ৩১৪ টন ধান।  

বর্তমান পেক্ষাপটে দেশে সরকারি গুদামে ১৩ থেকে ১৪ লাখ টন খাদ্য মজুত থাকলেই যথেস্ট বলে মনে করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান।

গ্যাসের অপচয় রোধে ৩০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক পরবর্তী

গ্যাসের অপচয় রোধে ৩০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক

কমেন্ট