ব্যস্ততম বন্দরের তালিকায় ৩ ধাপ পেছাল চট্টগ্রাম

ব্যস্ততম বন্দরের তালিকায় ৩ ধাপ পেছাল চট্টগ্রাম

গত বছরের বিশ্বের বন্দরগুলোর কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যা হিসাব করে এই তালিকা প্রকাশ করেছে লন্ডনভিত্তিক শিপিংবিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্ট। ফাইল ছবি

কনটেইনার পরিবহনের বৈশ্বিক তালিকায় আগের অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি চট্টগ্রাম বন্দর। এক বছরের ব্যবধানে এই বন্দর তিন ধাপ পিছিয়ে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দর এখন বিশ্বের ৬৭তম অবস্থানে রয়েছে। এক বছর আগে প্রকাশিত তালিকায় ছিল ৬৪তম।

গত বছরের বিশ্বের বন্দরগুলোর কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যা হিসাব করে এই তালিকা প্রকাশ করেছে লন্ডনভিত্তিক শিপিংবিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্ট। এক সপ্তাহ আগে ‘ওয়ান হান্ড্রেড পোর্টস ২০২৩’ শীর্ষক বিশেষ প্রকাশনায় এই তালিকা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। 

বিশ্বের বন্দরগুলোর কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যা হিসাব করে এই তালিকা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বন্দরগুলোর সেবার মান বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। তবুও বৈশ্বিক তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের এগিয়ে বা পিছিয়ে যাওয়ার সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিফলন পাওয়া যায়। 

কারণ, কনটেইনারে আমদানির বড় অংশই শিল্পের কাঁচামাল। আবার রপ্তানি পণ্যের পুরোটাই কনটেইনারে পরিবহন করা হয়। তার মানে কনটেইনার পরিবহন কমলে শিল্পের উৎপাদনও কমে যায়। 

লয়েডস লিস্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবহন হয়েছিল ৩১ লাখ ৪২ হাজার একক কনটেইনার। ২০২১ সালের তুলনায় তা ২ দশমিক ২০ শতাংশ কম। ২০২১ সালে কনটেইনার পরিবহন হয়েছিল ৩২ লাখ ১৪ হাজার একক কনটেইনার।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক এআরএইচ ডটকমকে বলেন, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ ও আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে গত বছর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কনটেইনার পরিবহন কমে যায়। কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে বৈশ্বিক তালিকায় অবস্থানও পিছিয়ে গেছে।

“তবে এখন কনটেইনার পরিবহন বাড়তে শুরু করেছে। সামনে এই বন্দর বৈশ্বিক অবস্থানে আবারও এগিয়ে যাবে।” 

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বাণিজ্য জট তৈরি হয়।  

পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ও জটের মুখে পণ্য আমদানিতেও প্রভাব পড়ে। আবার ডলার–সংকটে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে পণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে হিমশিম খান আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। এতে শিল্পের কাঁচামাল ও বিলাসপণ্যের মতো কিছু পণ্য আমদানিও কমে যায়। 

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বন্দর দিয়ে যত পণ্য পরিবহন করা হয়, তার ২৭ শতাংশ কনটেইনারে আনা-নেওয়া হয়। বাকি ৭৩ শতাংশই আনা-নেওয়া হয় কনটেইনারবিহীন সাধারণ জাহাজে। সাধারণ জাহাজের (বাল্ক, ব্রেক বাল্ক ও ট্যাংকার) খোলে আমদানি করা হয় মূলত সিমেন্ট, ইস্পাত ও সিরামিক কারখানার কাঁচামাল এবং পাথর, কয়লা, ভোগ্যপণ্য ও জ্বালানি তেল। 

তবে পরিমাণে এক-চতুর্থাংশ পণ্য পরিবহন হলেও কনটেইনারে বেশির ভাগ শিল্পের কাঁচামাল, বাণিজ্যিক পণ্য ও ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়।

লয়েডস লিস্টের তালিকায় বরাবরের মতো এবারও চীনের সাংহাই বন্দর ১ নম্বরে রয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর বন্দর। তালিকায় শীর্ষ ১০টি বন্দরের ৭টিই চীনের। বাংলাদেশের শুধু চট্টগ্রাম বন্দরই এই তালিকায় রয়েছে। দেশের অপর বন্দর মোংলায় খুব সামান্যসংখ্যক কনটেইনার পরিবহন হয়। 

লয়েডস লিস্ট ২০১৩ সাল থেকে কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যা হিসাব করে বৈশ্বিক ক্রমতালিকা প্রকাশ করে আসছে। ২০১৩ সালে কনটেইনার পরিবহনে বিশ্বে চট্টগ্রামের অবস্থান ছিল ৮৬তম। সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল ২০১৯ সালে। এই বছরের তথ্য নিয়ে ২০২০ সালে প্রকাশিত তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিল ৫৮তম। চার বছর আগের সেই অবস্থানে আর ফিরে যেতে পারেনি এই বন্দর।

মোটা চালের দাম বাড়ছে পরবর্তী

মোটা চালের দাম বাড়ছে

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর