এফবিসিসিআই নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদের চমক
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়। ছবি: এআরএইচ ডটকম
দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ।
২০২৩-২৫ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে সরাসরি ভোটে অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ২৩ পদের মধ্যে ১৫টিতে জয়ী হয়েছে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেল। আর ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ প্যানেল পেয়েছে ৮টি পদ।
ভোট গণনা শেষে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় ফলাফল ঘোষণা করেছে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন বোর্ড। এতে দেখা যায়, সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলের প্রথম সাত প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৯৪ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন এনায়েত উল্লাহ।
মঙ্গলবার সকালে এফবিসিসিআইয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এবারের নির্বাচনেও মূল প্যানেল ছিল দুটি। অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ২৩ পদের জন্য সমানসংখ্যক প্রার্থী দেয় ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ ও সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ। তার বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীও ছিলেন তিনজন।
ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের বর্তমান সভাপতি মাহবুবুল আলম। পরবর্তী সভাপতি হওয়ার জন্য সরকারের উচ্চ মহলের সবুজ সংকেত পেয়েছেন তিনি। তা ছাড়া এফবিসিসিআইয়ের সাবেক কয়েকজন সভাপতি ও শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা এই প্যানেলের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়েছেন।
আর তাতেই সোমবারের ভোটের আগেই সমঝোতায় নির্বাচিত ও মনোনীত ৫৫ পরিচালক এই প্যানেলের পক্ষের। তার মধ্যে ইতিমধ্যে মাহবুবুল আলম চেম্বার গ্রুপ থেকে মনোনীত পরিচালক হয়েছেন।
অন্যদিকে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ। যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আছেন মুনতাকিম আশরাফ ও নিজাম উদ্দিন রাজেশ। এই প্যানেলের প্রতি সমর্থন আছে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের।
নির্বাচিতদের মধ্যে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেল থেকে মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ ১ হাজার ২৯৪টি, বি এম শোয়েব ১ হাজার ২৭৯, মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ ১ হাজার ২৫৭, সিরাজুল ইসলাম ১ হাজার ২৪৬, মো. সহিদুল হক মোল্যা ১ হাজার ২১৫, নিজাম উদ্দিন রাজেশ ১ হাজার ১৯১, মো. মুনতাকিম আশরাফ ১ হাজার ১৭৫, রাকিবুল আলম ৯৯২, মোহাম্মদ আফতাব জাভেদ ৯৬৬, ইসহাকুল হোসেন ৮৯১, আমির হোসেন নূরানী ৮৫২, সৈয়দ মো. বখতিয়ার ৮৪০, তপন কুমার মজুমদার ৮৩৫, সালমা হোসেন ৮৩১ এবং মো. আবুল হাশেম ৮১৫টি ভোট পেয়ে পরিচালক নির্বাচিত হন।
অন্যদিকে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ প্যানেল থেকে কাওসার আহমেদ ১ হাজার ৩০টি, খন্দকার রুহুল আমিন ৯৮৮, আমিন হেলালী ৯১১, নিয়াজ আলী চিশতী ৯০৯, আবু মোতালেব ৮৯৯, শমী কায়সার ৮৫২, রাশেদুল হোসেন চৌধুরী ৮৩৭ এবং হাফেজ হারুন ৮১৩টি ভোট পেয়ে পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। প্রথম দিকে ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। দুপুরের পর ভোটারদের চাপ বাড়ে। বিকেল সাড়ে চারটায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়।
ভোট গ্রহণ শেষে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান এ মতিন চৌধুরী প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ৯৯০ জন ভোটার হলেও শেষ পর্যন্ত বৈধ ভোটারের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৫৪। তার মধ্যে ১ হাজার ৭৪৬ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন, শতকরা হিসাবে যা ৮৯ দশমিক ৩৫।
এবার অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ভোট হলেও চেম্বার গ্রুপের ২৩ পদের জন্য শুধু ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্রার্থী থাকায় ভোটের প্রয়োজন পড়েনি। আর চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ৩৪ জন মনোনীত পরিচালক পদের বিপরীতে বৈধ প্রার্থী আছেন ৩২ জন। দুটি পদ ফাঁকা রয়েছে। সব মিলিয়ে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক পদের সংখ্যা ৮০।
চেয়ারম্যান এ মতিন চৌধুরী প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ৯৯০ জন ভোটার হলেও শেষ পর্যন্ত বৈধ ভোটারের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৫৪। তার মধ্যে ১ হাজার ৭৪৬ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন, শতকরা হিসাবে যা ৮৯ দশমিক ৩৫।
সর্বশেষ ২০১৭ সালে এফবিসিসিআইয়ের পর্ষদ নির্বাচনে অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ভোট হয়েছিল। সেবার ভোটার ছিলেন ১ হাজার ৮৯৮। তার মধ্যে ৮৮ শতাংশ বা ১ হাজার ৬৬৯ জন ভোট দেন; যদিও ৩২টি ভোট বাতিল হয়েছিল। সেই হিসাবে এবারের নির্বাচনে ভোট পড়েছে বেশি।
বুধবার সভাপতি নির্বাচন
নির্বাচিত পরিচালকদের ভোটে বুধবার এফবিসিসিআই সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ছয়জন সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবেন।
এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদের মোট ৮০ জন পরিচালকের মধ্যে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ১৭ জন করে মোট ৩৪ জন পরিচালক হিসেবে ইতোমধ্যে মনোনীত হয়েছেন।
এর বাইরে জেলা চেম্বার গ্রুপে ২৩ জন এবং খাতভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে ২৩টি পদে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চেম্বার গ্রুপের ২৩টি পদের বিপরীতে ২৩টি মনোনয়ন পত্র জমা পড়ায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
সে কারণে সোমবার ভোট হচ্ছে কেবল অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ২৩টি পদে।
দীর্ঘদিন ধরেই এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কে হবেন সেটি সরকারের উচ্চ মহল থেকে চূড়ান্ত করা হয়। এবার সভাপতি পদে চট্টগ্রাম চেম্বারের বর্তমান সভাপতি মাহবুবুল আলম সবুজ সংকেত পেয়েছেন। গত ২০ জুন ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাকে এফবিসিসিআইয়ের পরবর্তী সভাপতি হিসেবে সমর্থন দিয়েছেন ফেডারেশনের সাবেক সভাপতিসহ বিভিন্ন চেম্বার ও পণ্যভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠনের নেতারা।
সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান মাহবুবুল আলমকে এফবিসিসিআইর ‘পরবর্তী সভাপতি’ হিসাবে অভিনন্দন জানান।
কমেন্ট