এফবিসিসিআই: ভোট পুনর্গণনার দাবি তিন প্রার্থীর
অভিযোগকারী তিন প্রার্থী হলেন, বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মোস্তফা আল মাহমুদ, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন প্রস্তুতকারক সমিতির প্রতিনিধি মাহবুব হাফিজ ও বাংলাদেশ মিষ্টি উৎপাদক সমিতির প্রতিনিধি মারুফ আহমেদ।
ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের তিন প্রার্থী। বৃহস্পতিবার ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন আপিল বোর্ডের কাছে আবার ভোট গণনার জন্য আপিল করেছেন তারা।
অভিযোগকারী তিন প্রার্থী হলেন, বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মোস্তফা আল মাহমুদ, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন প্রস্তুতকারক সমিতির প্রতিনিধি মাহবুব হাফিজ ও বাংলাদেশ মিষ্টি উৎপাদক সমিতির প্রতিনিধি মারুফ আহমেদ।
এফবিসিসিআইয়ের একাংশের ভোট এবং তারপর সমঝোতার ভিত্তিতে সভাপতি ও সাত সহসভাপতি নির্বাচিত হওয়ার রেশ না কাটতেই ভোট কারচুপির অভিযোগ তুললেন এই তিন প্রার্থী।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গত সোমবার এফবিসিসিআইয়ের ২০২৩-২৫ মেয়াদের পর্ষদের একাংশ, অর্থাৎ অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ২৩ পরিচালক পদে ভোট হয়। ভোট গণনা শেষে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
২৩ পদের মধ্যে ১৫টিতে জয়ী হয় সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্রার্থীরা। অন্যদিকে প্রভাবশালী প্যানেল হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৮টি পদে।
এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন বোর্ডের আনুষ্ঠানিক ফলাফল অনুযায়ী, ভোট পুনর্গণনায় আপিল করা মোস্তফা আল মাহমুদের প্রাপ্ত ভোট ৮০৫। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ৪৯ প্রার্থীর মধ্যে তার অবস্থান ২৪তম। মোস্তফা আল মাহমুদের চেয়ে মাত্র ৮ ভোট বেশি পেয়ে ২৩তম পরিচালক পদে বিজয়ী হয়েছেন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্রার্থী হারুনুর রশীদ। তিনি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধি হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন।
অন্যদিকে ভোট পুনর্গণনার আপিল করা অপর দুই প্রার্থীর মধ্যে মাহবুব হাফিজের প্রাপ্ত ভোট ৭৯৯ ও মারুফ আহমেদের ভোট ৭৭৫। তারা যথাক্রমে ২৫ ও ২৬তম বিজয়ী হয়েছেন।
আপিল আবেদনে পরিচালক পদপ্রার্থী মোস্তফা আল মাহমুদ ১৬তম বিজয়ী শমী কায়সার, ২৩তম বিজয়ী হারুনুর রশীদ ও ২৪তম বিজয়ী (আপিল আবেদনকারী) প্রার্থীর ভোট পুনর্গণনার দাবি করেন।
জানতে চাইলে মোস্তফা আল মাহমুদ এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “১ হাজার ৬০০ ভোট যখন গণনা শেষ হয়, তখনো আমি এগিয়ে ছিলাম। শেষ দিকে ৯৩ ভোট গণনায় সবকিছু ওলট–পালট হয়ে যায়। ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের কয়েকজন প্রার্থীর ভোট হঠাৎ বেড়ে যায়। আসলে তাদের জয়ী করতেই কারসাজি করা হয়। নতুন করে ভোট গণনা করলে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।”
ভোট পুনর্গণনার জন্য আপিল করা অপর দুই প্রার্থী মাহবুব হাফিজ ও মারুফ আহমেদের আবেদনের অভিযোগ প্রায় একই রকম। তারা অভিযোগ করেছেন, গভীর রাতে ভোট গণনার সময় সুকৌশলে কয়েকটি টেবিলে তাদের নামে ভোটের জায়গায় অন্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি নজরে এলেও মৌখিক প্রতিবাদ কেউ গ্রাহ্য করেননি; বরং তাড়াহুড়া করে গণনা শেষ করে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
এই তিন প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান এ মতিন চৌধুরী এআরএইচ ডটকমকে বলেন, সব প্রার্থীর সামনেই ভোট গণনা করা হয়েছে। ২৩ ও ২৪তম বিজয়ী প্রার্থীর ভোটের পার্থক্য ৮ ভোট হওয়ার পর এই দুই প্রার্থীর ভোট পুনরায় গণনা করা হয়। তাতে উভয় প্রার্থী সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এ কারণে ভোটের ফলাফল ঘোষণাও ৩০ মিনিট বিলম্ব হয়েছিল।
তিনি বলেন, “ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি আমার নজরে পড়েনি। তারপরও কোনো সন্দেহ থাকলে ভোট পুনর্গণনার সুযোগ আছে। ব্যালট পেপারও আছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আপিল বোর্ড।”
এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে আছেন বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন।
এ বিষয়ে আপিল বোর্ডের সচিব জামিল মিল্টন বলেন, তিন প্রার্থীর ভোট পুনর্গণনার আবেদন আপিল বোর্ড পেয়েছে।
এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, শুক্রবার পর্যন্ত ভোটের ফলাফল নিয়ে আপিলের সুযোগ আছে। এ বিষয়ে আপিল বোর্ড সোমবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে। তারপর নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হবে মঙ্গলবার।
এদিকে পুনরায় ভোট গণনার জন্য তিন প্রার্থী আপিল করলে ইতিমধ্যে এফবিসিসিআইয়ের মূল নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। ভোটের লড়াইয়ে চমক দেখালেও শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচনে ‘সমঝোতায়’ বশ মেনেছে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ।
এ কারণে ফেডারেশনের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ থেকেই। গত বুধবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাহবুবুল আলম এফবিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি, আমিন হেলালী জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এবং খায়রুল হুদা, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, যশোদা জীবন দেবনাথ, শমী কায়সার, রাশেদুল হোসেন চৌধুরী ও মুনির হোসেন—এই ছয়জন সহসভাপতি নির্বাচিত হন। তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কয়েকজন বিভিন্ন পদেও আছেন।
সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের আহ্বায়ক মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, “যৌক্তিক দাবি নিয়েই ভোট পুনরায় গণনার জন্য আমাদের তিন প্রার্থী আবেদন করেছেন। ভোট সুষ্ঠুভাবে আবার গণনা করলে ফল বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
কমেন্ট