জিআই স্বীকৃতি পেল নাটোরের কাঁচাগোল্লা
কাঁচাগোল্লাকে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) স্বীকৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে নাটোরের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে।
দেশের ১৭তম পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি পেল নাটোরের কাঁচাগোল্লা। বৃহস্পতিবার সকালে পেটেন্ট, শিল্প নকশা ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের সাক্ষরিত সনদে নাটোরের কাঁচাগোল্লাকে জিআই স্বীকৃতির অনুমোদন দেওয়া হয়।
কাঁচাগোল্লাকে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) স্বীকৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে নাটোরের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে।
মূলত ঐতিহ্যবাহী নাটোরের কাঁচাগোল্লাকে জিআই নিবন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন নাটোরের সাবেক জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। এ বছরের ৩০ মার্চ শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) বরাবর নাটোরের কাঁচাগোল্লাকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন পাঠায় জেলা প্রশাসক।
বিভিন্ন সময় কাঁচাগোল্লাকে জিআই পণ্যের স্বীকৃতির দাবি নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন নাটোরের তরুণ লেখক মোহাম্মদ অংকন।
বৃহস্পতিবার ‘জিআই’ পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমি বিভিন্ন সময় নাটোরের ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষার বিষয়ে লেখালেখি করি। নাটোরের কাঁচাগোল্লাকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবি নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করেছি। আজ ১৭তম জিআই পণ্য হিসেবে কাঁচাগোল্লা স্বীকৃতি পাওয়ায় নিজের কাজকে সার্থক মনে হচ্ছে। নাটোরবাসীকে অভিনন্দন জানাই। নাটোরের সন্তান হিসেবে আমি নিজেও অনেক খুশি।”
কথিত আছে, কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির পেছনে আছে মজাদার ইতিহাস। অর্ধ বঙ্গেশ্বরী খ্যাত নাটোরের রানি ভবানীর প্রিয় খাদ্যের তালিকায় ছিল মিষ্টি। তার রাজপ্রাসাদে নিয়মিত মিষ্টি সরবরাহ করতেন শহরের লালবাজারের মিষ্টি বিক্রেতা মধুসূদন পাল। একদিন মধুসূদন পালের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সব কর্মচারী অসুস্থ হয়ে গেলেন।
মিষ্টি তৈরির জন্যে দুই মণ ছানা সংগ্রহ করা ছিল। ছানাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে মধুসূদন ছানার সঙ্গে চিনি মিশিয়ে উনুনে তাপ দেন। কারিগর ছাড়াই এলোমেলো এই আয়োজনে তৈরি হয় নতুন এক মিষ্টি। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় নতুন এই মিষ্টিই পাঠিয়ে দেন রানি ভবানীর রাজবাড়িতে।
রানি ভবানী এই মিষ্টি খেয়ে প্রশংসা করেন ও এর নাম জানতে চান। মধুসূদন পাল তখন কাঁচা ছানা থেকে তৈরি বলে এর নাম দেন কাঁচাগোল্লা। এভাবেই পরিচিত হয় নাটোরের কাঁচাগোল্লা। এই গল্প বেঁচে আছে শত-শত বছর ধরে মানুষের মুখে- মুখে। তবে নাম গোল্লা হলেও এটি দেখতে গোল নয়, মুখ্য উপকরণ ছানা আর চিনির সংমিশ্রণে এক প্রকার সন্দেশ।
কাঁচাগোল্লার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নাটোরবাসীর আবেগ ও ভালোবাসা। তাই ২৫০ বছর আগে কাঁচাগোল্লা আবিষ্কৃত হয়ে আজও সুনাম বজায় রেখেছে। নাটোরের বিয়ে, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও অতিথি আপ্যায়নে সরবরাহ করা হয় কাঁচাগোল্লা। শুধু দেশে নয়, সারাবিশ্বেই নাটোরের কাঁচাগোল্লা প্রসিদ্ধ।
জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, “এটা আমাদের জন্য গৌরবের। কাঁচা গোল্লার সঙ্গে নাটোরের মানুষের আবেগ ও ঐতিহ্য জড়িত। তাই এটাকে সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য সবসময় কাজ করে যাব।”
কমেন্ট