ঢাকাতেও একটি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার গড়তে চান এফবিসিসিআই নতুন সভাপতি
দায়িত্ব নিয়েই নতুন সভাপতি মাহবুুবুল আলম চট্টগ্রামের মতো ঢাকাতেও একটি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া আঞ্চলিক পর্যায়ে লিঁয়াজো অফিস চালু করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ছবি: সংগৃহীত
ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মাহবুবুল আলম।
সোমবার রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বাধীন নতুন পরিচালনা পর্ষদের (২০২৩-২৫) কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন বিদায়ী সভাপতি জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ২০২১-২৩ এর পরিচালনা পর্ষদ।
দায়িত্ব নিয়েই নতুন সভাপতি মাহবুুবুল আলম চট্টগ্রামের মতো ঢাকাতেও একটি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া আঞ্চলিক পর্যায়ে লিঁয়াজো অফিস চালু করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মাহবুবুল আলম বলেন, “আমি চাই ডিসেন্ট্রালাইজ করার জন্য। পুরান ঢাকায় একটা লিঁয়াজো অফিস করতে চাই। সেখানে বড় বড় ব্যবসায়ী আছেন, তাদের সহযোগিতা চাই। গুলশানে একটা অফিসের জায়গা আমরা নিয়েছি।
“এর পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগীয় শহরেও আমরা অফিস করতে চাই। তাহলে এফবিসিসিআই সদস্যদের সঙ্গে ক্লোজলি কাজ করতে পারবো।”
দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরতে গিয়ে মাহবুবুল বলেন, সরকারের রূপকল্পের সঙ্গে মিল রেখে এফবিসিসিআইকে একটা স্মার্ট সংগঠনে পরিণত করা হবে। এখানে সব সেবা অনলাইনে পাওয়া যাবে। রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে বিভিন্ন সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে।
“দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি রোধ এবং খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ট্রেডিংয়ের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সমন্বয়ে ব্লকচেইনভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা জরুরি বলে আমি মনে করি।”
“উৎপাদন ও আমদানি হতে শুরু করে সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীদেরকে সেখানে অন্তুর্ভুক্ত করে পণ্যের প্রকৃত মূল্য, সরবরাহ এবং মজুদ পরিস্থিতি নিয়ে ধারণা দেওয়া হবে।”
নতুন পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে সঙ্গে সাবেকদের সহযোগিতা চান মাহবুবুল আলম। বলেন, “সবার সহযোগিতা নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। বিশেষ করে জেনারেল বডি মেম্বার ছাড়া চলতে পারেনা এফবিসিসিআই। তাই এফবিসিসিআইকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে চাই। পুরান ঢাকায় একটা লেয়াজু অফিস প্রস্তুত করাসহ রাজধানী ঢাকায় একটি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার করতে চাই, যা আমরা ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে করেছি।”
সংগঠনটির বিদায়ী সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, “২০০৮ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ৭৯ বিলিয়ন ডলার, বর্তমানে যেটি হয়েছে ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার। সামনে আমাদের ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির জার্নি রয়েছে, এলডিসি গ্রেজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেখানে নতুন বোর্ডের ওপর অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমার বিশ্বাস তারা সেটি সফলভাবে করতে পারবেন।”
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদ্য সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে যুক্ত হন ১৯৮৩ সালে। গত প্রায় চার দশকে কমোডিটি ট্রেডিং থেকে শুরু করে ব্যাংক ও আর্থিক পরিষেবা, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন তিনি।
বর্তমানে ৯টি খাতে ১৭ টি ব্যবসা উদ্যোগ রয়েছে মাহবুবুল আলমের।
নতুন পরিচালনা পর্ষদের সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রক ও বিপণন সমিতির সহ-সভাপতি আমিন হেলালী।
চেম্বার গ্রুপ থেকে সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খায়রুল হুদা চপল, গাজীপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার ও বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি যশোদা জীবন দেবনাথ।
অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শমী কায়সার, মেইজি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি রাশেদুল হোসেন চৌধুরী রনি ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মুনির হোসেন।
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই নতুন সভাপতি মাহবুবুল আলম আরও বলেন, “বেসরকারি খাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব। এজন্য সবার সহযোগিতা চাই। আজ থেকে আমরা সবাই এক। আমাদের কথা এবং দাবিও হবে এক। দিন শেষে আমাদের একটাই পরিচয় আমরা ব্যবসায়ী। বেসরকারি খাতের সুরক্ষা এবং বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করতে আমরা সবাই মিলে কাজ করব।”
এ বছর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিজনেস সামিট বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে নতুন করে তুলে ধরেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জসিম ভাই (বিদায়ী সভাপতি) যে বিজনেস সামিট আয়োজন করেছিলেন, সেটি ছিল অনবদ্য একটি আয়োজন। আমরাও বাংলাদেশ বিজনেস সামিট আয়োজন করতে চাই। এজন্য নতুন বোর্ড সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।”
নতুন পর্ষদের দায়িত্ব নিয়ে বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনার কথা জানান মাহবুবুল আলম। তার মধ্যে রয়েছে- খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসহ ২১ সদস্যবিশিষ্ট অ্যাডভাইজরি কমিটি গঠন, এফবিসিসিআই’র অধীনস্থ সব চেম্বার অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে একটি ওয়েব পোর্টাল প্রস্তুত, প্রতি তিন মাসে অন্তত একটি স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা ইত্যাদি।
এসময় গুলশানে এফবিসিসিআইর শাখা অফিস খুব শিগগিরই চালু করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মাহবুবুল আলম ২০১৩ সাল থেকে টানা পাঁচবার চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বাণিজ্য সংগঠন সার্ক চেম্বারের সহ-সভাপতি ছিলেন।
এছাড়া বন্দরনগরী চট্টগ্রামে জাপানের অনারারি কনস্যুল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
কমেন্ট