চালু হলো সর্বজনীন পেনশন, উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে একটি ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন। ছবি: বাসস
চালু হলাে বহুল প্রতিক্ষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বা স্কিম। আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি এত দিনে বাস্তব রূপ পেল।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে একটি ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন।
এই আয়োজনে তিনটি জেলা-গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও রংপুর এবং সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে অংশগ্রহণকারী এবং সুবিধাভোগীরা সংযুক্ত ছিলেন।
চার শ্রেণির নাগরিককে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় আনতে দেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো আলোচিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি।
উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এখন থেকে সব শ্রেণি পেশার নাগরিক পেনশন পাবেন। এর মাধ্যমে সমাজের বৈষম্য দূর হবে।”
সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ নিয়মিত চাঁদা দিয়ে এই পেনশনের আওতায় আসতে পারবেন। এর অংশ হতে পারবেন প্রবাসীরাও। এর মাধ্যমে প্রায় দশ কোটি নাগরিককে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ যা অঙ্গীকার করে, তা বাস্তবায়ন করে দেখায়। সর্বজনীন পেনশন স্কিম তার প্রমাণ।”
প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা- এই চার নামে চার শ্রেণির মানুষের জন্য আলাদা স্কিম চালু হল বৃহস্পতিবার। আরও দুটি স্কিম পরে সুবিধাজনক সময়ে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
এর মধ্যে প্রবাস স্কিম শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। যেসব প্রবাসীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা পাসপোর্টের তথ্য দিয়ে পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন।
প্রগতি স্কিম বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী বা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক এতে অংশ নিতে পারবেন।
অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেল, তাঁতিরা অংশ নিতে পারবেন সুরক্ষা স্কিমে।
আর দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা (যাদের বর্তমান আয়সীমা বছরে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা) সমতা স্কিমে অংশ নিয়ে পেনশনের আওতায় আসতে পারবেন।
এসব স্কিমের চাঁদার কিস্তি পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা যাবে। চাঁদা দেওয়ার সময়ের ভিত্তিতে চারটি স্কিমের জন্যই মাসিক চাঁদার পরিমাণ এবং পেনশনের পরিমাণ আলাদা আলাদাভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা শোকের মাসে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করলাম। প্রাথমিকভাবে ছয়টির মধ্যে চারটি স্কিম আজ উদ্বোধন করা হলো। অন্য দুটি স্কিম পরে চালু করা হবে।”
তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেহেশত থেকে দেখে খুশি হবেন যে সরকার তাঁর জনগণকে একটি সুন্দর ও উন্নত জীবন দেওয়ার চেষ্টা করছে, যার জন্য তিনি তা’র সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন।”
‘সর্বজনীন পেনশন চালুর আজকের দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “সম্মানের সঙ্গে (সকলকে) বাঁচার সুযোগ করে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।”
সর্বজনীন পেনশনের ফলে বৈষম্য দূর হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বৃদ্ধ বয়সে অনেকে পরিবারের কাছেই বোঝা হয়ে যান। পরিবারের কাছে যেন মূল্য থাকে, কেউ যেন বোঝা হয়ে না যান, এই কর্মসূচি তাতে ভূমিকা রাখবে। বৃদ্ধ বয়সে হাত পাততে হবে না।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকল মানুষের কাছে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, “জনগণের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য কাজ করছি। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছি।”
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও সুবিধাভোগীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন এবং তিনটি জেলা-গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও রংপুর এবং সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল একটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইভেন্টের সাথে যুক্ত হন।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
অনুষ্ঠানে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র ও দেখানো হয়।
কমেন্ট