সর্বজনীন পেনশন: শুক্রবার পর্যন্ত কোটি টাকা জমা
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির প্রগতি, প্রবাস, সুরক্ষা ও সমতা নামে চারটি স্কিমে মোট ৩০ হাজার ব্যক্তি নিবন্ধন করেছেন। এদের মধ্যে দুই হাজারেরও বেশি চাঁদাদাতা তাদের প্রথম কিস্তির টাকা জমা দিয়েছেন। মোট চাঁদা উঠেছে প্রায় এক কোটি টাকা।
‘সুখে ভরবে আগামী দিন, পেনশন এখন সর্বজনীন’ এ স্লোগানকে ধারণ করে প্রৌঢ় জীবনকে সুখে ভরাতে সরকারের নতুন কর্মসূচিতে যুক্ত হতে শুরু করেছেন নাগরিকরা।
সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের মানুষকে পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনতে সরকারের সর্বজনীন এই কর্মসূচি চালুর পর থেকেই ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার চালু হওয়ার পর থেকে শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বহুল আলোচিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির প্রগতি, প্রবাস, সুরক্ষা ও সমতা নামে চারটি স্কিমে মোট ৩০ হাজার ব্যক্তি নিবন্ধন করেছেন।
এদের মধ্যে দুই হাজারেরও বেশি চাঁদাদাতা তাদের প্রথম কিস্তির টাকা জমা দিয়েছেন। মোট চাঁদা উঠেছে প্রায় এক কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিয়ন্ত্রণ) বিলকিস জাহান রিমি এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “প্রথম দুই দিনে পাওয়া সাড়া উৎসাহব্যঞ্জক। সামনের দিনগুলোয় সর্বজনীন পেনশনে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশরা আশা করছি।”
তিনি বলেন, “পেনশনের নিবন্ধন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে চাঁদা পরিশোধ-সবকিছুই ২৪ ঘণ্টা অনলাইনে করা যাচ্ছে। তাই মানুষ তাদের সুবিধাজনক সময়ে নিবন্ধন করছেন। এতে আবেদনকারীর সংখ্যাও প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে।”
রিমি বলেন, কেউ অনলাইনে পেনশন স্কিমের জন্য নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হলে সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায়ও তা করা যাবে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে একটি ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন।
এই আয়োজনে তিনটি জেলা-গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও রংপুর এবং সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে অংশগ্রহণকারী এবং সুবিধাভোগীরা সংযুক্ত ছিলেন।
চার শ্রেণির নাগরিককে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় আনতে দেশে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বা স্কিম।
পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন একজন চাঁদাদাতা। তবে চাঁদাদাতা মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন চাঁদাদাতার ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত।
অর্থাৎ কোনো চাঁদাদাতা যদি ৬০ বছর বয়সে মারা যান, তাহলে তার ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত অর্থাৎ ১৫ বছর তার নমিনি পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের গত জারি করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা অনুযায়ী এ নিয়মই অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিধিমালা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা। বিধিমালায় আজীবন পেনশনের ব্যাপারে অবশ্য স্পষ্ট কিছু বলা নেই।
অর্থ বিভাগের সূত্র অনুযায়ী, উদ্বোধনের দিন থেকেই ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যে কেউ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন। ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও বিশেষ বিবেচনায় পেনশনভুক্ত হতে পারবেন।
১৮ বছরের বেশি দেশের এই চার শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষ এ কর্মসূচিতে অংশ নেবে বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “প্রথম দিন বেসরকারি খাতের চাকরিজীবী ও প্রবাসীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। অনেকেই ইতোমধ্যে নিবন্ধন করার টাকা জমা দিয়ে পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আবেদন করছেন।”
“আবার অনেকে শুধু নিবন্ধন করে রেখেছেন। আশা করা যাচ্ছে, নির্ধারিত সময়ে তারাও টাকা জমা দেবেন। জনগণের এ ধরনের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সরকারের এ মহতী উদ্যোগকে সামনে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে বলে আমি আশা করছি।”
এদিকে উদ্বোধনের দিন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর। ভবিষ্যতে গড় আয়ু আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে জনমিতিক লভ্যাংশের আওতায় রয়েছে।
দেশের মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ কর্মক্ষম। গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধিজনিত কারণে ভবিষ্যতে নির্ভরশীলতার হার বাড়বে। এ কারণে একটি টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, কোনো বৈদেশিক সাহায্য ও কারিগরি সহায়তা ছাড়াই এ ধরনের একটি বড় কাজ গুছিয়ে আনা হয়েছে। উদ্বোধনের পর থেকেই চারটি স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংকে টাকা জমা শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকে দেশ-বিদেশের বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ভালো সাড়া পড়েছে।
পেনশন কর্মসূচি বা স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন একজন গ্রাহক। গ্রাহক মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের ৭৫ বছর বয়স হতে যত বছর বাকি থাকবে, সেই সময় পর্যন্ত নমিনি পেনশন তুলতে পারবেন।
১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যে কেউ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও বিশেষ বিবেচনায় পেনশনভুক্ত হতে পারবেন। তবে আজীবন বা ন্যূনতম ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত পেনশন সুবিধা পেতে কমপক্ষে একাধারে ১০ বছর নির্দিষ্ট হারে চাঁদা পরিশোধ করতে হবে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী সব নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ওয়েবসাইটে (www.upension.gov.bd) গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। যেসব প্রবাসীর বাংলাদেশের এনআইডি নেই, তারা বৈধ পাসপোর্টের ভিত্তিতে ব্যাংকিং চ্যানেল, অনুমোদিত মোবাইল আর্থিক পরিষেবা এবং এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা দিয়ে কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পারবেন।
নিবন্ধনের পর একটি নম্বর পাওয়া যাবে, যা দিয়ে চাঁদা পরিশোধসহ সব কাজ করা যাবে। গ্রামীণ পর্যায়ে সহযোগিতা করবে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। এ কার্যক্রমকে আরও সহজ করতে শিগগির মোবাইল অ্যাপস চালু করবে পেনশন কর্তৃপক্ষ।
সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য আরও দুটি স্কিম
উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপাতত চার স্কিম শুরু হলেও আগামীতে আরও দুটি স্কিম চালু হবে।
এ বিষয়ে পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী এবং সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আরও দুটি স্কিম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
বর্তমানে তাদের পেনশন দেয় সরকার। তাই এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। চলমান চারটি স্কিম পরিচালনার অভিজ্ঞতা এবং সফলতার ভিত্তিতে ওই দুটি স্কিম চূড়ান্ত করা হবে।
পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, ঘোষণা দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পর এ স্কিম দুটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে ২০৩১ সালের শুরুতে যারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করবেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি বাস্তবায়ন করা হতে পারে। তারা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় নির্ধারিত স্কিমে পেনশন পাবেন।
এ ছাড়া এর আগ পর্যন্ত সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা প্রচলিত নিয়মেই পেনশন পাবেন।
কমেন্ট