সর্বজনীন পেনশন: গৃহিণীরা যেভাবে অংশ নেবেন

সর্বজনীন পেনশন: গৃহিণীরা যেভাবে অংশ নেবেন

গৃহিণীরা স্বকর্মে যুক্ত হিসেবে পেনশন কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন। নিজস্ব আয় না থাকলেও পরিবারের অন্য সদস্যের আয় থেকে তারা পেনশনের চাঁদা দেবেন।

পুরোদস্তুর গৃহিণীরাও সরকারের জাতীয় পেনশন কর্মসূচিতে (স্কিম) অংশ নিতে পারবেন। 

অর্থাৎ যাদের নিজস্ব আয় নেই তারাও বহুল প্রতীক্ষিত এই স্ক্রিমের স্বকর্ম ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মীদের জন্য ‘সুরক্ষা’ নামে যে স্কিম রয়েছে, সেটিতেই গৃহিণীরা নিবন্ধন করে চাঁদা দিতে পারবেন। 

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এআরএইচ ডটকমকে তিনি জানান, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) গৃহিণীদের কাজের আর্থিক হিসাব যোগ হয় না। কিন্তু তাদের শ্রমের মূল্য আছে। 

“সেই বিবেচনা থেকে গৃহিণীরা স্বকর্মে যুক্ত হিসেবে পেনশন কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন। নিজস্ব আয় না থাকলেও পরিবারের অন্য সদস্যের আয় থেকে তারা পেনশনের চাঁদা দেবেন।” 

দেশের ৪ শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে গত বৃহস্পতিবার থেকে চালু করা হয়েছে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা। শুরুতে পেনশন-ব্যবস্থায় রয়েছে চারটি আলাদা স্কিম। সেগুলো হচ্ছে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা। 

এর মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রবাস; বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি; রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি স্বকর্মে নিয়োজিতদের জন্য সুরক্ষা এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সমতা স্কিম নেওয়া হয়েছে। 

পেনশন কর্মসূচি বা স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন চাঁদাদাতা। তবে চাঁদাদাতা মারা গেলে তাঁর নমিনি বা মনোনীত উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন। এ ক্ষেত্রে চাঁদাদাতার ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত হতে যত বছর বাকি থাকবে, সেই সময় পর্যন্ত নমিনি পেনশন উত্তোলন করতে পারবেন। 

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে একটি ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন।      

এই আয়োজনে তিনটি জেলা-গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও রংপুর এবং সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে অংশগ্রহণকারী এবং সুবিধাভোগীরা সংযুক্ত ছিলেন।  

চার শ্রেণির নাগরিককে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় আনতে দেশে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বা স্কিম।    

পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন একজন চাঁদাদাতা। তবে চাঁদাদাতা মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন চাঁদাদাতার ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত।     

অর্থাৎ কোনো চাঁদাদাতা যদি ৬০ বছর বয়সে মারা যান, তাহলে তার ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত অর্থাৎ ১৫ বছর তার নমিনি পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

     

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের গত জারি করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা অনুযায়ী এ নিয়মই অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিধিমালা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা। বিধিমালায় আজীবন পেনশনের ব্যাপারে অবশ্য স্পষ্ট কিছু বলা নেই।        

অর্থ বিভাগের সূত্র অনুযায়ী, উদ্বোধনের দিন থেকেই ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যে কেউ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন। ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও বিশেষ বিবেচনায় পেনশনভুক্ত হতে পারবেন।  

১৮ বছরের বেশি দেশের এই চার শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষ এ কর্মসূচিতে অংশ নেবে বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। 

সুরক্ষা স্কিমে কত চাঁদায় কত পেনশন

সরকার সর্বজনীন যে পেনশন কর্মসূচি চালু করছে, তাতে ১৮ বছর বয়সে যিনি এতে যুক্ত হবেন, তিনিই পাবেন সর্বোচ্চ সুবিধা। তার মানে অন্যদের মতো গৃহিণীরাও যত কম বয়সে পেনশনের জন্য নিবন্ধন করে চাঁদা পরিশোধ শুরু করবেন, ৬১ বছর বয়স থেকে তত বেশি সুবিধা পাবেন। 

সুরক্ষা কর্মসূচিতে মাসে ১ হাজার, ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা হারে চাঁদা দেওয়ার সুযোগ আছে। এতে ১৮ বছর বয়সীরা যদি মাসে ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা দেন, তাহলে ৪২ বছর শেষে তিনি মাসে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা করে পাবেন। আর যদি চাঁদার পরিমাণ ৩ হাজার হয়, তাহলে তিনি মাসে পাবেন ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ টাকা। ২ হাজার ও ১ হাজার টাকা চাঁদায় মাসে পেনশন যথাক্রমে ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা ও ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা। 

গৃহিণীদের কেউ যদি ৩০ বছরে বয়সে পেনশনে যুক্ত হয়ে মাসে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দেন, তাহলে ৬১ বছর বয়স থেকে মাসে পেনশন পাবেন ৬২ হাজার ৩৩০ টাকা। চাঁদা ৩ হাজার টাকায় মাসে পেনশন ৩৭ হাজার ৩৯৮ টাকা। আর ২ হাজার ও ১ হাজার টাকা চাঁদায় মাসে পেনশন মিলবে যথাক্রমে ২৪ হাজার ৯৩২ টাকা ও ১২ হাজার ৪৬৬ টাকা। 

এভাবেই পেনশন কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়ার বয়স ও মাসে কত হারে চাঁদা প্রদান করা হচ্ছে, সে অনুযায়ী অন্যদের মতো একই হারে গৃহিণীরাও পেনশন পাবেন। 

যেভাবে নিবন্ধন করবেন 

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে গেলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হবে। ওয়েবসাইটটি হলো upension.gov.bd। নিবন্ধনের পরবর্তী ধাপে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা পাসপোর্ট নম্বর, একটি সচল মুঠোফোন নম্বর, ব্যাংক হিসাব নম্বর, নমিনি বা মনোনীত ব্যক্তির এনআইডি ইত্যাদি তথ্য লাগবে। 

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানান, কেউ যদি অনলাইনে নিবন্ধন করতে না পারেন, তাহলে সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় যেতে পারেন। সেখানে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিবন্ধনের পাশাপাশি চাঁদা পরিশোধের বিষয়ে আগ্রহী ব্যক্তিদের সহায়তা করবেন।

সর্বজনীন পেনশন: শুক্রবার পর্যন্ত কোটি টাকা জমা পরবর্তী

সর্বজনীন পেনশন: শুক্রবার পর্যন্ত কোটি টাকা জমা

কমেন্ট