‘যিনি ট্যাক্স দিচ্ছে, তার ওপর যেন প্রেশার না আসে’

‘যিনি ট্যাক্স দিচ্ছে, তার ওপর যেন প্রেশার না আসে’

মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ইএফডি মেশিনের (ইএফডিএমএস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করতে গিয়ে যেন কারো ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে সেদিকে নজর দেওয়ার জন্য কর কর্মকর্তাদের আহ্বান জানান।

দেশের রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমে ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়ের নীতি অনুস্মরণ করতে কর কর্মকর্তাদের আহবান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ইএফডি মেশিনের (ইএফডিএমএস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করতে গিয়ে যেন কারো ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে সেদিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান। রাজস্ব আহরণ কীভাবে করতে হবে তার উদাহরণ দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়ের একটি গল্প বলেন।

মুস্তফা কামাল বলেন, “ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই যখন ওই দেশের প্রধানমন্ত্রীও। সেই সময় ওই দেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন জন ব্যাপটিস্ট কোলবার্ট। তিনি একটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন, যে আপনাদের সবাইকেই রাজস্ব আহরণ করতে হবে।”

“রাজস্ব আহরণ (এভাবে) করবেন যেন রাজহাঁস থেকে প্লাক করবেন (পালক তুলবেন)। কিন্তু লক্ষ্য রাখবেন, রাজহাঁসটি যেন কোনোভাবেই ব্যথা না পায়, কষ্ট না পায়।”

দেশের রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমেও সেই নীতি অনুস্মরণ করার আহবান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে, আমরাও ট্যাক্স অর্জন করব, ট্যাক্স আদায় করব। কিন্তু যিনি ট্যাক্স দিচ্ছেন, তার ওপরে যেন প্রেশার না আসে।

“শুধু একজন দেবে অন্যরা দেবে না… আমরা যেটা বারবার বলে আসছি যে, নেটটা (আওতা) বড় করতে হবে।”

এসময় অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, “এটা হাই টাইম আমাদের জন্য। ম্যানুয়ালি করতে গেলে যে প্রতিবন্ধকতা থাকে সেই প্রতিবন্ধকতা এখন থাকবে না।”

মন্ত্রী স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রাজস্ব আহরণ বড় আকারে উদ্বোধন করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, “আপনারা শুরু করে দেন। শুরু করলে এটা রেলওয়ের মতো। রেলওয়ের বগি যদি একবার রাস্তার ওপরে উঠে যায়, তাহলে আর পেছনে থাকে না, সামনেই যায়।

“আমরা এখন যে জায়গায় এসেছি ইনশাআল্লাহ আমরাও আর পেছনে যাব না। ২০৪১ এর স্বপ্ন আমাদের পূরণ করতে হবে।”

রাজস্ব আদায় ধর্মীয় দায়িত্বের মতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ধর্মীয় দায়িত্ব এই রকম যে, মানুষের জন্য কাজ কর, সমাজের জন্য কাজ কর। সমাজের প্রত্যেক মানুষকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাও।

“আমি মনে করি এনবিআর এর চেয়ারম্যান একজন সৎ মানুষ। তাকে আপনারা সহযোগিতা করবেন।”

মশার ‘ভয়ে’ বক্তব্য ভুলে গেলেন অর্থমন্ত্রী

অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ বিস্তারের মধ্যে রোগটির জীবাণুবাহী এইডিস মশার ‘কামড়ের ভয়ে’ বক্তব্য ভুলে গিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।

অবশ্য সভাপতি হিসেবে বক্তব্য শেষ করার পরই ভুলে যাওয়া সেই কথা মনে পড়ে তার। ‘ক্ষমা চেয়ে’ সেই বক্তব্য আবার দেন তিনি।

অনুষ্ঠানের স্টেইজে অর্থমন্ত্রীর পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন সাদা পোশাকের একজন। তার হাতে ছিল মশা মারার ব্যাট। মন্ত্রী তার আশেপাশে কোনো মশা আসছে কি না, সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছিলেন তিনি। কোনো মশা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি মেরে ফেলেন। এভাবে অনুষ্ঠান চলার সময় বেশ কয়েকটি মশা মারতেও দেখা গেছে তাকে।

এ বছর ২১ অগাস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ১৯১ জনে, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৯ সালে সারাদেশে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এতদিন সেটাই ছিল রেকর্ড।

এ বছর মশাবাহিত এ রোগে ২১ অগাস্ট পর্যন্ত মোট ৪৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে এক বছরে এত মৃত্যু আর কখনও দেখেনি বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে বক্তব্য শেষ করার পর অর্থমন্ত্রী আবার মাইক অন করে বলেন, “বিনয়ের সাথে বলছি, বক্তব্য শেষ করার আগে আমার একটি লাইন বলার কথা ছিল বা একটি বিশেষ কথা বলার কথা ছিল। কিন্তু আমি মশার জন্য ওদিকে দৃষ্টি দিতে গিয়ে সেটা আমি ভুলে গেছি। আমি আপনাদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।”

এরপর তিনি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করতে গিয়ে যেন কারো ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে সেদিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান। রাজস্ব আহরণ কীভাবে করতে হবে তার উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়ের গল্পটি শোনান।

ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে ইএফডিএমএস

বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ইএফডিএমএস) চালু করেছে এনবিআর। ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট আহরণে এনবিআরের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ডিভাইস বসাবে জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড।

মঙ্গলবার এনবিআরের মাল্টিপারপাস হলে ভ্যাট আদায়ের এই নতুন পদ্ধতির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “ভ্যাট ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার জন্য সরকার কাজ করছে। ভ্যাট দেওয়ার মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষ দেশের উন্নয়নে অংশ নিতে পারে। সেই জায়গায় আমরা স্বচ্ছতা আনতে চাই। এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। বিষয়টি ডিজিটাল হওয়ায় সবাই আগ্রহী হবে বলে আমার বিশ্বাস।”

তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এ ধরনের কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়। জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডকে ধন্যবাদ। এ ধরনের কাজ ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে যাওয়ার পদক্ষেপ। ইএফডিএমএস ব্যবহারের এই উদ্যোগকে সর্বস্তরের মানুষ স্বাগত জানাবে এবং ব্যবহারে এগিয়ে আসবে।

“আমরা এনবিআরের ব্যবস্থাপনায় এবং জেনেক্স ইনফোসিসের সহায়তায় এই উদ্যোগকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চাই।”

অনুষ্ঠানে অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, ভ্যাটের আওতা বেড়েছে। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা জনগণের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করলেও তা সরকারি কোষাগারে জমা দেন না। দিলেও দেরি করে দেন। এজন্যই অটোমেশনের প্রয়োজন। ইএফডিএমএস তথ্য নিরাপত্তার দায়িত্ব এনবিআরের।

তিনি বলেন, “স্মার্ট বাংলাদেশের সব কার্যক্রম হবে পেপারলেস সেটাই স্বাভাবিক। সে লক্ষ্যে আমাদের কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে।”

ব্যবসায়ী শির্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, “হয়রানি থেকে রক্ষা পাই এমন নিশ্চয়তা পেতে হবে। অটোমেশনের বিকল্প নেই। ইএফডিএমএস ব্যবসাবান্ধব হবে আশা করছি।”

জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ্ জালাল উদ্দিন বলেন, “ভ্যাট ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে শুধু সরকারের রাজস্বই বৃদ্ধি পাবে না বরং টেকসই অর্থনীতির পথেও দেশ এগিয়ে যাবে। ইএফডিএমএস ব্যবসায় উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং হিসাব শৃঙ্খলা নিশ্চিতে সহায়তা করবে।”

দেশে বর্তমানে মোট রাজস্বের প্রায় ৪০ শতাংশ আদায় হয় ভ্যাট থেকে। ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, বিপনিবিতান, হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ ২৫টি খাতে ইএফডিএমএস ডিভাইস বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

২০২২ সালের ৩ নভেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী- প্রতিষ্ঠানটি বিনামূল্যে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিপনিবিতানে ইএফডি মেশিন বসাবে। বিনিময়ে প্রতি ১০০ টাকা ভ্যাটে ৫২ পয়সা কমিশন হিসেবে পাবে।

জেনেক্স ইনফোসিসকে প্রতিটি জোনে প্রথম বছরে ন্যূনতম ২০ হাজার ইএফডি-এসডিসি সরবরাহ ও স্থাপন করতে হবে। চুক্তির আওতায় পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিটি জোনে মোট এক লাখ করে তিনটি জোনে পর্যায়ক্রমে ৩ লাখ ইএফডি এবং সেলস ডাটা কন্ট্রোলার (এসডিসি) সরবরাহ ও স্থাপন করতে হবে।

মেট্রোরেল মতিঝিলে যাবে ২০ অক্টোবর থেকে পরবর্তী

মেট্রোরেল মতিঝিলে যাবে ২০ অক্টোবর থেকে

কমেন্ট