রাজস্ব আদায়: ১৫% প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থবছর শুরু
মূলত স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের উপর ভর করেই এই সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। জুলাই মাসে গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ভ্যাট আদায় বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ।
দেড় বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় নানামূখী চাপের মধ্যেও অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রাজস্ব আদায়ে বেশ ‘ভালো’ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শুরু হলো নতুন অর্থবছর।
দেশের রাজস্ব আদায়ের প্রধান সংস্থা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২০ হাজার ৫৬১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে। এই অঙ্ক গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি।
মূলত স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের উপর ভর করেই এই সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। জুলাই মাসে গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ভ্যাট আদায় বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লাখ ২৫ হাজার ৪২৪ কোটি টাকার ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আদায় করেছিল এনবিআর। যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আদায় হয়েছে সিগারেট থেকে। এ খাত থেকে ভ্যাট এসেছে ৩২ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় তিন হাজার কোটি টাকা বেশি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশ। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরে মোট ভ্যাটের ২৬ দশমিক ১৬ শতাংশই এসেছে ভ্যাট থেকে।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ।
ভ্যাট কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্যাট আহরণে গত অর্থবছরে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। অর্থনীতিতে নানামুখী চ্যালেন্জ সত্ত্বেও এই সাফল্য এসেছে। চলতি অর্থবছরেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন তারা।
২০২১-২০২২ অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ।
তার পরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি
নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে রাজস্ব আদায় ১৫ শতাংশ বেশি হলেও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। লক্ষ্যের চেয়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে এই মাসে।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেশ কমে যাওয়ার কারণে আমদানি খাতে ট্যাক্স বা কর আদায় কমলেও নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই এ খাতে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
তবে আয়কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি অপেক্ষাকৃত কম হয়েছে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন বাজেটে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় এবং মনিটরিং জোরদার করায় ভ্যাট আদায়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এআরএইচ ডটকমকে বলেন, "ফিসক্যাল মেজারস এর অংশ হিসেবে এবার বেশ কিছু অব্যাহতি বাতিল করা হয়েছে, যা গত বছরের জুলাইয়ে ছিলো। ফলে ওই সময়ের তুলনায় এবার রাজস্ব আদায়ে গ্রোথ বেশি হয়েছে।"
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, "কিছু কনজ্যুমার আইটেমে গত বছরের এই সময়ে রিডিউসড রেটে ভ্যাট ছিল, যা বর্তমানে নেই। ফলে এবার ওইসব খাত থেকে বেশি ভ্যাট আদায় হয়েছে।"
ওই কর্মকর্তা বলেন, “সরকার নতুন করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) ব্যবস্থা চালু করছে। এর ফলে আগামীতে ভ্যাট আদায় আরও বাড়বে।”
মানুষের উপর করের চাপ বেড়েছে
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মাজিদ বর্তমানে সংকটময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও রাজস্ব আদায়ে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
এআরএইচ ডটকমকে তিনি বলেন, "অর্থনৈতিক গতিমন্থরতার মধ্যে রাজস্ব আদায়ে ভালো প্রবৃদ্ধি ইঙ্গিত দেয় যে, মানুষের উপর করের চাপ বেড়েছে।"
"অনেক করের চাপ সাধারণ ভোক্তার উপর পড়ছে। বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে তাদের উপর বাড়তি করের (ভ্যাট) চাপ তাদের আরো কঠিন অবস্থার মধ্যে ফেলছে।”
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ শতাংশের সামান্য বেশি।
তার আগের পাঁচ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে করোনা মহামারির অর্থবছরে (২০২০-২১) নেগেটিভ (-) প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
চলতি অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
কমেন্ট