বাংলাদেশে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে ভারত: প্রণয় ভার্মা
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা শনিবার চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এক সেমিনারে এই তথ্য দিয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে ১০ বিলিয়ন ডলার (১ হাজার কোটি ডলার) বিনিয়োগ করবে পাশের দেশ ভারত। মিরসরাই ও মোংলায় দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে ভারতের বিনিয়োগ আরও বাড়বে। বর্তমানে বাংলাদেশে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে ভারত সরকারের।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা শনিবার চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এক সেমিনারে এই তথ্য দিয়েছেন।
‘চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও যোগাযোগ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এই সেমিনার আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয় এবং বাংলাদেশ-ভারত ইতিহাস ঐতিহ্য পরিষদ।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান।
ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, “দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে অনেক পরিবর্তন এসেছে। দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতার বাধাগুলোকে দূর করতে পারব।”
তিনি বলেন, “আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ৩৬টি স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। দুই দেশের সীমান্ত বাণিজ্য অবকাঠামোকে একটি অত্যাধুনিক স্তরে নিয়ে যাব আমরা।”
আর এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে প্রত্যাশার কথা শোনান ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
সেমিনারে আতিউর রহমান বলেন, “চট্টগ্রাম একদিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর বা মুম্বাইয়ের মতো বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। চট্টগ্রাম যদি এগিয়ে যায়, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।”
“এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনে চট্টগ্রামের অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে অন্যান্য উপাদানকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলে চট্টগ্রাম শুধু আঞ্চলিক অর্থনীতি নয়, আশপাশের দেশের অর্থনীতিকেও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন, “যোগাযোগের জন্য শুধু প্রকল্প করলে হবে না। প্রকল্পগুলো হয়ে যাওয়ার পর চট্টগ্রামে যে যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হবে, সেগুলোতে যাতে কোনোরকম বাধা সৃষ্টি না হয়, সেটি দেখতে হবে।
“আর এ জন্য একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো যেতে পারে। যদি কোনো টাস্কফোর্স করা যায়, সেটি বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে হতে পারে বা বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে হতে পারে।”
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আবদুল্লাহ নদভী। স্বাগত বক্তব্য দেন ইতিহাস ঐতিহ্য পরিষদের তাপস হোড়।
ভারতীয় হাই কমিশনের ওয়েবসাইটে ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক’ বিষয়ে বলা হয়েছে, উন্নয়ন সহযোগিতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিকশিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের সাথে ভারতের উন্নয়নঅংশীদারিত্ব আকারে ও ব্যাপ্তিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। আট বিলিয়ন ডলারের বাস্তবায়নাধীন তিনটি ঋণচুক্তির মধ্যে দিয়ে, বাংলাদেশ ভারতের বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার হয়ে উঠেছে।
২০১০ সালে প্রথম ঋণচুক্তিতে বাংলাদেশকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য (প্রধানত, রেলপথ ও গণপরিবহণ খাতে) ১ বিলিয়ন ডলার ঋণসুবিধা বর্ধিতকরা হয়। ভারত সরকার ২০১২ সালের জুন মাসে ক্রমান্নয়ে ১ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ২০ কোটি ডলার অনুদান সহায়তা হিসাবে ঋণ দিয়েছে এবং এর আয়তন আরও ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার পর্যন্ত বর্ধিত করেছে।
২০১৫ সালের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশে সফরকালে ২ বিলিয়ন ডলারের দ্বিতীয় ঋণচুক্তি ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় ঋণচুক্তির অধীনে প্রধানত বিদ্যুৎ, রেলপথ, সড়ক ও পরিবহণ, স্বাস্থ্য ও কারিগরি শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ১৬টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এগুলো বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের তৃতীয় ঋণচুক্তি ঘোষণা করা হয়।
ওই ঋণচুক্তির অধীনে বিদ্যুৎ, রেলপথ, সড়ক ও পরিবহণ, স্বাস্থ্য ও কারিগরি শিক্ষা, আইটিসি, নৌ ও সৌরভিত্তিক যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ১৫টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এগুলো অনুমোদন ও বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, ফরেন ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সেন্টারের পরিচালক নুরুল কবির, সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি তরফদার রুহুল আমীন, চেম্বারের নবনির্বাচিত পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, অঞ্জন শেখর দাশ, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি খায়রুল আলম প্রমুখ।
কমেন্ট