বিজিএমইএ’র বর্তমান কমিটির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়াতে আইন সংশোধন হচ্ছে!
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর লোগো।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত এপ্রিলে। ওই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে নেন সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান।
অতিরিক্ত এ মেয়াদ শেষ হবে অক্টোবরে, তার আগে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। আইন অনুযায়ী, নির্বাচনের ৯০ দিন আগে নির্বাচন বোর্ড গঠন এবং ৮০ দিন আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বর্তমান পর্ষদ সেটি করেনি। উল্টো এখন আবার নতুন করে মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করছে বর্তমান পর্ষদ।
এই পরিস্থিতিতে বাণিজ্য সংগঠনের কমিটির মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর সুযোগ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বেশি সময় কমিটিতে থাকার জন্য দেশের সব বাণিজ্য সংগঠনের জন্য নতুন সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে।
এত দিন বাণিজ্য সংগঠনগুলোর কমিটির মেয়াদ শেষ হলে যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে ছয় মাস পর্যন্ত সময় বাড়ানোর সুযোগ ছিল। জাতীয় সংসদে আইন পাস হলে এখন সেই সুযোগ ছয় মাসের স্থলে হবে এক বছর।
সোমবার এই ‘বিশেষ’ সুবিধা দিয়ে বাণিজ্য সংগঠন (সংশোধন) আইন ২০২৩–এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনের খসড়াটি অনুমোদিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, এত দিন ছিল বাণিজ্য সংগঠন অধ্যাদেশ ১৯৬১। ১৯৮৪ সালে তা একবার সংশোধন করা হয়। পরে ২০২২ সালে আইনটি নতুন করে বাংলা করা হয়।
“নতুন আইনে কিছু ধারা সংশোধনের জন্য মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) শেষে সোমবার মন্ত্রিসভায় তা চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এ আইনে মূল যে বিষয় আছে সেটা হলো, কোনো বাণিজ্যিক সংগঠনের যদি নির্বাচন করতে অসুবিধা হয়, তখন আগের কমিটি নির্বাচনের জন্য ছয় মাস সময় পেত। সেই সময় আরও ছয় মাস বাড়িয়ে করা হয়েছে এক বছর।”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মূলত তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর বর্তমান কমিটিকে সুবিধা দিতেই বাণিজ্য সংগঠন আইনের খসড়ায় নতুন ধারাটি যুক্ত করা হচ্ছে।
গত এপ্রিলে বিজিএমইএর বর্তমান পর্ষদের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে নেন সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান।
পর্ষদের অতিরিক্ত মেয়াদ শেষ হবে অক্টোবরে। আইন অনুযায়ী, নির্বাচনের ৯০ দিন আগে নির্বাচন বোর্ড গঠন এবং ৮০ দিন আগে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বর্তমান পর্ষদ তা করেনি।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করে বিজিএমইএর নির্বাচনকালীন জোট ফোরাম। ৩ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দেয় তারা।
এতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনপ্রক্রিয়া শুরু না করায় বর্তমান সভাপতির বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে ফোরাম।
বিজিএমইএ নির্বাচনে মূলত দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে; একটি সম্মিলিত পরিষদ এবং আরেকটি ফোরাম। ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল প্রভাবশালী এই সংগঠনটির সবশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ওই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফারুক হাসানের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদ। মোট ৩৫টি পরিচালক পদের বিপরীতে সম্মিলিত পরিষদ ২৪টি পদে জয়ী হয়। বাকি ১১টিতে জয়ী হয় এবিএম সামছুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ফোরাম প্যানেল।
সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় ফারুক হাসান বিজিএমইএর পরবর্তী সভাপতি হন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বিজিএমইএ সভাপতি ছিলেন। তিনিও সম্মিলিত পরিষদ থেকে ২০০৫-২০০৬ মেয়াদে সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সরকারি দল আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান রহমান বিজিএমইএ’র সভাপতি ছিলেন। তিনিও সম্মিলিত পরিষদ থেকে ২০১৫-১৬ মেয়াদে সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
কমেন্ট