‘সর্বজনীন পেনশনের টাকা খোয়া যাবে না’

‘সর্বজনীন পেনশনের টাকা খোয়া যাবে না’

মঙ্গলবার সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান এ কথা বলেন।

সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বা স্কিমের টাকা যেকোনো পরিস্থিতিতে সুরক্ষিত থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান।

জনগণের এই টাকা কোনোভাবেই খোয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার সর্বজনীন পেনশন নিয়ে এক আলোচনায় কবিরুল ইজদানী বলেন, দেশের নাগরিকদের পেনশনব্যবস্থার আওতায় আনতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে সরকার। গত ১৭ আগস্ট বহুল প্রতীক্ষিত ও প্রত্যাশিত এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উদ্বোধনের পর থেকেই সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উন্মুক্ত হয়েছে সবার জন্য। চালুর পর থেকে বেশ ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

“আমি নিশ্চিত করে সবাইকে বলতে চাই, পেনশন স্কিমে জনগণের টাকা যেকোনো পরিস্থিতিতে আইন দ্বারা সুরক্ষিত থাকবে।”

“সরকার পরিবর্তন কিংবা বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হলেও সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে আস্থা হারানোর সুযোগ নেই। এ তহবিলের অর্থ কোনোভাবেই খোয়া যাবে না,” বলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান।

মঙ্গলবার সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন।

রাজধানীর মতিঝিলে চেম্বার ভবনে এমসিসিআই সম্মেলন কক্ষে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়।

পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, “জনগণের দেওয়া অর্থ সর্বোচ্চ নিরাপত্তার সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে লাভজনক খাতে বিনিয়োগের জন্য সর্বজনীন পেনশন তহবিল ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা একটি বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এর আওতায় তহবিলের অর্থ প্রাথমিকভাবে সরকারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করা হবে। এরপর তহবিল বড় হলে পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনাও রয়েছে।”

পেনশন কর্মসূচি বা স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন একজন চাঁদাদাতা। তবে চাঁদাদাতা মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন। তবে এ ক্ষেত্রে চাঁদাদাতার ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত হতে যত বছর বাকি থাকত, সেই সময় পর্যন্ত নমিনি পেনশন উত্তোলন করতে পারবেন। 

সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আপাতত চার ধরনের স্কিম চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রবাসীদের জন্য ‘প্রবাস’ স্কিম, বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ‘প্রগতি’স্কিম, অনানুষ্ঠানিক খাত অর্থাৎ স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য ‘সুরক্ষা’স্কিম আর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ‘সমতা’স্কিম।

স্কিম থেকে ঋণ নেওয়া যাবে

পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যে পরিমাণ অর্থ জমা হবে, তার একটি অংশ চাঁদাদাতারা ঋণ হিসেবে নিতে পারবেন।

“অর্থাৎ প্রয়োজনের সময় ব্যাংকের স্কিমের থেকে যেভাবে ঋণ নেওয়া যায়, তেমনই এ স্কিম থেকেও ঋণ নেওয়ার সুযোগ আছে।”

জানা গেছে, নিজের বা পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, গৃহ নির্মাণ, গৃহ মেরামত বা সন্তানের বিবাহের ব্যয় নির্বাহের জন্য চাঁদাদাতা ইচ্ছা করলে পেনশন তহবিলে জমাকৃত অর্থের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ হিসেবে উত্তোলন করতে পারবেন।

এ ক্ষেত্রে ঋণের মাশুল দিতে হবে, যা ধার্য করবে কর্তৃপক্ষ। এ ঋণ সর্বোচ্চ ২৪ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে এবং পুরো অর্থ চাঁদাদাতার হিসাবে জমা হবে।

পেনশন স্কিমে একাধিকবার ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকছে। তবে প্রথমবার গৃহীত ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয়বার ঋণ নেওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে ঠিক কতবার ঋণ নেওয়া যাবে, বিধিমালায় তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

অপপ্রচার ঠেকাতে নজরদারির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

এদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে ‘মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে’মন্তব্য করে এ বিষয়ে নজরদারি করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় সরকার প্রধান এই নির্দেশনা দেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন।

বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত জানানোর সময় তিনি বলেন, “সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয়েছে। এটা সাংঘাতিক রকম মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। ইতোমধ্যে ১০ হাজারের বেশি রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে। লাখেরও বেশি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।

"কিন্তু ঐতিহাসিক উদ্যোগটির বিপক্ষে মিথ্যা অপপ্রচার বা নেতিবাচক প্রচার চালানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত তথ্য, সরকার কি করেছে, কি করতে যাচ্ছে, কীভাবে মানুষ উপকৃত হবেন এ ব্যাপারটা জনগণের কাছে উপস্থাপন করতে উনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন।”

ব্রিফিংয়ে মাহবুব হোসেন আরও বলেন, "জনগণ যেন জেনেশুনে, বুঝে এখানে অংশগ্রহণ করে। কোনো রকম অপপ্রচারে তারা যেন প্রভাবিত হতে না পারে সে দিকে সকলকে নজরদারি রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।"

বেশ কয়েক বছরের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির পর সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করেছে সরকার। এই স্কিমে ৬০ বছর পর্যন্ত মানুষ টাকা জমা করবে এবং এরপর থেকে আজীবন মাসে মাসে অর্থ পাবে।

সবার জন্য পেনশনের এ উদ্যোগের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকারের নির্বাচনী তহবিল তৈরির ফন্দি’করছে।

গত ১৮ অগাস্ট তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ লুট করে শেষ করে দিয়েছে বাংলাদেশকে, ফোকলা বানিয়ে দিয়েছে,… কিচ্ছু নাই। আবার নতুন আরেকখান কায়দা বাইর করছে.. দেখছেন। কী বলে…, পেনশন দেবে, পেনশন স্কিম।

“মানুষের টাকা চুরি করার আরেকটা ফন্দি বাইর করছে। ওই টাকা চুরি করে ওরা নির্বাচন করতে চায়। মানুষ এবার তাদেরকে দেবে না।”

পেনসন কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির এমন অবস্থানে হতাশা প্রকাশ করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সেদিনেই বলেন, “দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা ভেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামাজিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন ও রাষ্ট্রকে মানবিক করার ক্ষেত্রে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু বিরাট উদ্যোগ নিলেও বিএনপিসহ নাগরিক সমাজের একাংশ এটিকে অভিনন্দন জানাতে ব্যর্থ হয়েছে।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কিছু লোক সর্বজনীন পেনশন নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করছেন।

একনেকে ১৪ হাজার কোটি টাকার ২০ প্রকল্প অনুমোদন পূর্ববর্তী

একনেকে ১৪ হাজার কোটি টাকার ২০ প্রকল্প অনুমোদন

বিজিএমইএ’র বর্তমান কমিটির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়াতে আইন সংশোধন হচ্ছে! পরবর্তী

বিজিএমইএ’র বর্তমান কমিটির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়াতে আইন সংশোধন হচ্ছে!

কমেন্ট