৮৫৬ কারখানায় কোনো তদারকি নেই: সিপিডি

৮৫৬ কারখানায় কোনো তদারকি নেই: সিপিডি

সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর দেশি-বিদেশি একাধিক উদ্যোগের অধীনে তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কাজ শুরু হয়েছিল। তবে গত ১০ বছরে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে অনেক কাজ হলেও তা পুরোপুরি শেষ হয়নি। ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েই গেছে।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্র্রধান খাত তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে অনেক কাজ হলেও ৮৫৬টি পোশাক কারখানা কোনো ধরনের তদারকি ব্যবস্থার মধ্যে নেই বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি। 

সংস্থাটি বলছে, সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর দেশি-বিদেশি একাধিক উদ্যোগের অধীনে তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কাজ শুরু হয়েছিল। তবে গত ১০ বছরে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে অনেক কাজ হলেও তা পুরোপুরি শেষ হয়নি। ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েই গেছে। 

রাজধানীতে বুধবার ‘তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা অর্জন ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির এক প্রতিবেদনে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী তামীম আহমেদ। 

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। 

সিপিডির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, ৮৫৬টি পোশাক কারখানা কোনো ধরনের তদারকি ব্যবস্থার মধ্যে নেই, যদিও তারা অপ্রচলিত বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি করছে। এই সংখ্যাটি দিন দিন বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা মোট কারখানার ২২-২৩ শতাংশ, ভবিষ্যতে ৩০ শতাংশ হতে পারে।

 

“এই কারখানাগুলোকেকে তদারকির মধ্যে আনতে হবে। এসব কারখানার কোনোটিতে দুর্ঘটনা ঘটলে পুরো পোশাক খাতের ওপর নতুন করে চাপ তৈরি হবে। কোনো কারখানা অ্যাসোসিয়েশনের বাইরে থাকতে পারবে না। কেননা, এসব কারখানায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায়ভার কে নেবে? বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ ওই কারখানার দায়ভার নেবে না।” 

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানায় গত কয়েক বছরে অগ্নিদুর্ঘটনা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০২০ সালে ১৭৭টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছিল। গত বছর সেটি বেড়ে হয়েছে ২৪১টি। অন্যদিকে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা এখনো শূন্যে নামেনি। ২০২১ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ১৩ জন পোশাকশ্রমিক। আর গত বছর মারা গেছেন চারজন। 

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড এবং উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কাজ শুরু করে। অ্যাকর্ড চলে যাওয়ার পর দায়িত্ব নেয় আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিল (আরএসসি)। 

অন্যদিকে অ্যালায়েন্সের দায়িত্ব নেয় নিরাপন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আরএসসির অধীনে বর্তমানে ১ হাজার ৮৮৭টি কারখানা রয়েছে। আর নিরাপনে আছে ৩২০টি কারখানা। তবে বর্তমানে দেশে নিরাপনের কোনো কার্যক্রম নেই। 

অন্যদিকে ‘সরকারের ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনার অধীনে আরসিসি’ শীর্ষক উদ্যোগের আওতায় যেসব কারখানায় তদারকি চলছিল, সেগুলো বর্তমান দেখছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটি ইউনিট (আইএসইউ)। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) অধীন আইএসইউতে বর্তমানে ৬৭৯টি পোশাক কারখানা রয়েছে। 

সিপিডির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আইএসইউ অধীনে থাকা ৬৭৯ কারখানার ত্রুটি সংশোধন কাজ হয়েছে মাত্র ৫৪ শতাংশ। মাত্র ১টি কারখানা শতভাগ ত্রুটি সংশোধন কাজ শেষ করেছে। অন্যদিকে আরএসসির অধীনে থাকা ১ হাজার ৮৮৭ কারখানার ত্রুটি সংশোধন কাজ শেষ হয়েছে ৯১ দশমিক ৩২ শতাংশ। গত এপ্রিল পর্যন্ত ১ হাজার ৩১৭ কারখানা ত্রুটি সংশোধন করেছে ৯১-১০০ শতাংশ। 

“ত্রুটি সংশোধনের কাজ এগোলেও অগ্নিনিরাপত্তায় ব্যবহৃত ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি স্থাপনে কারখানাগুলোর মধ্যে অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক মাসে আরএসসির ফলোআপ পরিদর্শন ব্যাপকভাবে কমে গেছে।” 

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। নিরাপত্তা ত্রুটি রয়েছে এমন কারখানার উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ করার মতো আইনি ক্ষমতা তাদের দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। 

বলেন, “আরএসসি ও ডিআইএফইর মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ দরকার। অন্যদিকে আরএসসিকে ফলোআপ পরিদর্শন বাড়াতে হবে। কারখানা পরিদর্শনে বয়লার পরিদর্শনকে যুক্ত করা প্রয়োজন।” 

তিনি বলেন, “আমরা নতুন করে অ্যাকর্ডকে ফেরাতে বলছি না। অ্যাকর্ড সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছে, তাদের সেই সুনাম ধরে রাখা উচিত। আসলে পরিদর্শন কার্যক্রমের মান ও কমপ্লায়েন্স দেখতে চাইছি। কারণ, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বাড়ছে। শ্রমিক মৃত্যুও শূন্যের কোঠায় নামেনি।” 

ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পরিচালিত কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অ্যাকর্ড আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাকিস্তানসহ অন্যান্য পোশাক সরবরাহকারী দেশগুলোতে প্রোগ্রামটি পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা তদারকিতে এই বিশেষ অগ্রগতির পরেও অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়ার পরে নতুন উদ্যোগগুলোর অর্জন ধরে রাখার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। 

ওই দুই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত দিকনির্দেশনাগুলো তদারকির দায়িত্বে থাকা দেশীয় সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তা ধারাবাহিকভাবে পালন করছে কি না, তা সম্প্রতি দেশে পোশাকশিল্পের কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা কিছুটা বেড়ে যাওয়ার পর নিরাপত্তা তদারকির বর্তমান প্রক্রিয়াকে নতুন করে পর্যালোচনা করা বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে।

অর্থনীতি ‘ভুল’ পথে, ৮৪% মানুষের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি: জরিপ পরবর্তী

অর্থনীতি ‘ভুল’ পথে, ৮৪% মানুষের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি: জরিপ

কমেন্ট