যারা বলছেন অর্থনীতি ভালো নেই, তারা অর্থনীতিই বোঝেন না: অর্থমন্ত্রী
এক সংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বঅর্থনীতিতে বাংলাদেশ রোল মডেল; যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তারপরও যারা বলছেন দেশের অর্থনীতি ভালো নেই তারা অর্থনীতিই বোঝেন না।”
যারা বলছেন দেশের অর্থনীতি ভালো নেই, তারা অর্থনীতিই বোঝেন না বলে এই মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে ইউএস বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিসের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
‘অর্থমন্ত্রীকে পাওয়া যায় না। অর্থনীতিবিদদের অভিমত যে, ভুলনীতির কারণে দেশের অর্থনীতিতে সংকট বাড়ছে’ এক সংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বঅর্থনীতিতে বাংলাদেশ রোল মডেল; যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তারপরও যারা বলছেন দেশের অর্থনীতি ভালো নেই তারা অর্থনীতিই বোঝেন না।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমেরিকার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কৃষি ও সেবা খাতে নতুন কিছু কোম্পানি এ দেশে বিনিয়োগ করতে চায়।”
দেশের রাজনীতি-অর্থনীতি কোনোটিই সঠিক পথে নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জীবন ও জীবিকার উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে বলে মনে করেন প্রায় ৮৪ শতাংশ মানুষ।
তিন বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে নেতিবাচক মূল্যায়ন বেড়েছে বলে এক জনমত জরিপে উঠে এসেছে।
এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পরিচালিত ওই সমীক্ষা বলছে, বেশিরভাগ মানুষ মনে করছে যে দেশের সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতি ‘ভুল’ পথে চলছে।
‘দ্য স্টেট অফ বাংলাদেশ'স পলিটিক্যাল, গভর্নাল, ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি’ শিরোনামের একই সমীক্ষা চালান হয়েছিল ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালেও।
সর্বশেষ ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৬৪টি জেলার ১০ হাজার ২৪০ জন মানুষের উপর ওই সমীক্ষা পরিচালিত হয়।
তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশের রাজনীতি সঠিক পথে চলছে- এমন ধারণা পোষণ করে ৩৯ শতাংশ মানুষ, যেখানে ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৬৪ শতাংশ।
সবশেষ সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৪৮ শতাংশ মনে করে- রাজনীতিতে দেশ ভুল পথে চলছে; অথচ তিন বছর আগে এমন মনোভাব পোষণকারী ছিল ৩১ শতাংশ।
রাজনীতি সঠিক পথে চলছে কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে ১১ শতাংশ মানুষ বলেছে, ‘জানি না’; বাকি ৩ শতাংশ মানুষ কোনো উত্তর দেয়নি।
নতুন সমীক্ষায় অর্থনীতি নিয়ে মানুষের ধারণা পুরোপুরি উল্টে যাওয়ার দশা দেখা গেছে। ২০১৯ সালে যেখানে ৭০ শতাংশ মানুষ মনে করেছিল, দেশের অর্থনীতি ঠিক পথে আছে। ২০২২ সালে এমন ধারণা পোষণকারীর হার নেমে এসেছে ২৫ শতাংশে।
২০২২ সালে এসে ৭০ শতাংশ মানুষ বলছে, দেশের অর্থনীতি ভুল দিকে চলছে। অথচ তিন বছর আগেই এই হার ছিল শতকরা ২৮ ভাগ।
৩০ আগস্ট এশিয়া ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। মূলত এই জরিপের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘যারা বলছেন দেশের অর্থনীতি ভালো নেই, তারা অর্থনীতিই বোঝেন না’ এই মন্তব্য করেন।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, “জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে৷ ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে, কিন্তু যুদ্ধ কবে শেষ হবে কেউ জানে না। একটি অনিশ্চয়তার ভেতরে কতদিন অর্থনীতি ভালো চালাবেন? সবাই বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো চলছে।”
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। তারা কৃষি,গ্যাস, অটোমেবাইলস খাতে বিনিয়োগ করতে চায়। তারা আমাদের সয়াবিনের উৎপাদন ও রপ্তানিতে আগ্রহ জানিয়েছে। ভিসা কোম্পানি এসেছিল, তারা ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমে আমাদের সহযোগিতা চেয়েছে। তারা বলেছে-সামনে বাংলাদেশে একটি কনজ্যুমারসের বড় মার্কেট হবে৷ এখানেও তারা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।”
“তারা মনে করে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উর্বর ভূমি। তারা মেট লাইফসহ বিভিন্ন ইনসুরেন্সেও বিনিয়োগে আগ্রহী৷ ভবিষ্যতে তারা আরও বেশি বিনিয়োগ করবে।”
ঊর্ধ্বমূখী মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “যখন আমরা দায়িত্বভার গ্রহণ করি তখন মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল। সেখান থেকে মূল্যস্ফীতি আমরা ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে এনেছিলাম। দীর্ঘদিন দেশে মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ছিল।”
“এই কঠির অবস্থার মধ্যেও আমাদের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ।”
কমেন্ট