‘দুনিয়াজুড়েই ভোটের আগে বড় বড় প্রকল্প শেষ হয়’
গত শনিবার বহুল প্রতিক্ষিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: এআরএইচ ডটকম
নির্বাচনের আগে আগে বড় প্রকল্প গ্রহণ এবং একের পর এক প্রকল্প উদ্বোধন করার বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, সরকার জনগণের সুবিধার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং এতে মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেছেন, রাজনৈতিক সরকার ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ভোটের আগে বড় বড় প্রকল্প শেষ করে। দুনিয়াজুড়েই এমন হয়। এটি দোষের কিছু নয়।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন দুই মন্ত্রী।
এ সময় ভোটের আগে বড় বড় প্রকল্পের কাজ শেষ করা হচ্ছে কী না- এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে দুই মন্ত্রী তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “আমরা অবশ্যই ভোটের রাজনীতি করি। প্রকল্প বাস্তবায়ন করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। প্রকল্প বাস্তবায়ন ভোটের সময় বেশি করে যাব। এখন পর্যন্ত যত বড় প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছে, তা জনগণের কাজে লেগেছে।”
তিনি বলেন, “এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বাকি অংশের কাজ আমরা অতি দ্রুত শেষ করব। মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হবে আগামী মাসে।”
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম এ বিষয়ে বলেন, “রাজনৈতিক সরকার ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ভোটের আগে বড় বড় প্রকল্প শেষ করে। দুনিয়াজুড়েই এমন হয়। এটি দোষের কিছু নয়। তবে নির্বাচন সামনে রেখে বিশেষ কোনো প্রকল্প পাস করা হচ্ছে না।”
সরকার গত এক বছরের বেশি সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বড় প্রকল্পগুলো আংশিক চালু করেছে। এ ছাড়া আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচল, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলসহ বেশ কিছু বড় প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে।
গত শনিবার অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) এক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এখন মর্যাদা বাড়ানোর প্রকল্প (প্রেস্টিজ প্রজেক্ট) করার সময় নয়। এখন গরিব ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার সময়। মেট্রোরেল ১, ২, ৩; কক্সবাজার রেলপথ—এসব প্রকল্প অন্য সময় করলেও হবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “শাস্ত্রে আছে, যত মত তত পথ। কারোর মন্তব্যের ওপর মন্তব্য করব না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এই পথ দিয়ে যাওয়া মানুষেরা রোমাঞ্চিত বোধ (ফিল এক্সাইটেড) করেন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। যদি দিন শেষে লাভ হয়, তাহলে লাভ; দিন শেষে ক্ষতি হলে ক্ষতি।’
সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো সম্পর্কে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, “অর্থনীতি কখনো সরলরেখায় চলে না। ওঠানামা থাকবেই। অর্থনীতি নামলে আমরা অখুশি হই। অর্থনীতি কখনো কখনো অবনমিত হয়। অর্থনীতির গতিপথ অনেকটা করাতের মতো।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সব মিলিয়ে ১৭টি প্রকল্প পাস হয়। এতে খরচ হবে ১২ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা।
পাস হওয়া একটি প্রকল্প হলো ১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন প্রকল্প। এই প্রকল্পের জন্য ৩০ একর জমি লাগবে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ জমি বর্ষার সময় পানির নিচে ডুবে যায় বলে পরিকল্পনা কমিশন মতামত দিয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, “আমরা আমাদের মতামত দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পুরো জমি লাগবে। তিনি সেভাবেই অনুমোদন দিয়েছেন। সেখানে ২৭টি ভবন হবে।”
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী জমি অধিগ্রহণের আগে প্রথমবার পরিদর্শনের সময় ছবি তুলে আনার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
তিনি বলেন, “জমি অধিগ্রহণের কথা উঠলেই ওই সব এলাকায় রাতারাতি ঘরবাড়ি উঠে যায়। তাই তিনি এই নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া নড়াইল-কালিয়া জেলা মহাসড়কে নবগঙ্গা নদীর ওপর সেতুর নকশা পরিবর্তনে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, ওই সেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় এখন নতুন করে নকশা করতে হয়েছে।”
১৭ প্রকল্প অনুমোদন
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মঙ্গলবারের একনেক সভায় ১৭টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১২ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা।
এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১০ হাজার ২৬৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ থেকে পাওয়া যাবে ২ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ১৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে–নড়াইল-কালিয়া জেলা মহাসড়কের ২১তম কিলোমিটারে কালিয়া নামক স্থানে নবগঙ্গা নদীর উপর কালিয়া সেতু নির্মাণ; বিআরটিসির জন্য সিএনজি একতলা এসি বাস সংগ্রহ; উত্তরা এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প (১ম সংশোধিত); ধীরাশ্রম আইসিডি নির্মাণের লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণসহ পুবাইল-ধীরাশ্রম রেল লিংক নির্মাণ; গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে আগত দর্শনার্থীদের সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ; সোনাগাজী ৫০ মেগাওয়াট (সংশোধিত ৭৫ মেগাওয়াট) সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প (১ম সংশোধিত); চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সিএমইউ) স্থাপন; চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন; বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ (১ম সংশোধিত)।
এছাড়া সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন প্রকল্প (প্রস্তাবিত ১ম সংশোধন); চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন; বাংলাদেশের চর এলাকায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ; গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন; বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র প্রকল্প (এমডিএসপি) (৩য় সংশোধিত); কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলাধীন গড়াই নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প; গুচ্ছগ্রাম-২য় পর্যায় (ক্লাইমেট ভিকটিমস রিহ্যাবিলিটেশন প্রজেক্ট) (৪র্থ সংশোধিত) এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন সংক্রান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের সেক্টর প্রজেক্ট।
কমেন্ট