‘১২.৫৪ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির চিত্র তো ভয়াবহ’

‘১২.৫৪ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির চিত্র তো ভয়াবহ’

সেলিম রায়হান

সরকারি হিসাবেই দেশে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) সার্বিক মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশের (দুই অঙ্কের ঘরে, ডাবল ডিজিট) কাছাকাছি পৌঁছেছে। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে এক লাফে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছে। 

আগস্ট মাসে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের আগস্টে দেশের মানুষ যে খাদ্য ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই আগস্টে তা কিনতে ১১২ টাকা ৫৪ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। 

এই তথ্যকে ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতির গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সানেমের (সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) রোববার দুপুরে মূল্যস্ফীতির এই তথ্য প্রকাশ করার পর সেলিম রায়হান তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বিবিএসের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, আগস্ট মাসে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। 

“গ্রাম ও শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন ১২ শতাংশের বেশি। এ চিত্রতো ভয়াবহ। প্রায় দেড় বছরের অধিক সময় ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির অবস্থা বিরাজ করছে। নিম্নআয়ের মানুষ (এমনকি মধ্যবিত্ত) এরকম দীর্ঘায়িত উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে কিভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন তা ধারণা করা কি কঠিন?” 

উস্মা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “যখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়।” 

“একদিকে যেমন মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির ঠিকমতো প্রয়োগ নেই, অন্যদিকে বাজার ব্যবস্থাপনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে রয়েছে নৈরাজ্য ও তদারকির যথেষ্ঠ অভাব।” 

মূল্যস্ফীতির এই অবস্থার উন্নতির জন্য মুদ্রা ও রাজস্বনীতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে দ্রুত কিছু সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ। 

“সর্বোপরি, সংশ্লিষ্ট সকলকে সম্পৃক্ত করে এবং সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানকে (যেমন প্রতিযোগিতা কমিশন) শক্তিশালী করে বাজার ব্যবস্থাপনার নৈরাজ্য ঠেকাতে হবে,” বলেন সেলিম রায়হান। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) রোববার দুপুরে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। 

বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, শহরের চেয়ে  গ্রামে খাবারের দাম বেশি বেড়েছে। আগস্টে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীত হয়েছে ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ। শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীত হয়েছে ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। 

আগের মাস অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।   

আগস্ট মাসে ৯  দশমিক ৯২ শতাংশ সার্বিক মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের আগস্ট মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই বছরের আগস্টে তা কিনতে ১০৯ টাকা ৯২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।  

আর ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের আগস্ট মাসে দেশের মানুষ যে খাদ্য ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই বছরের আগস্টে তা কিনতে ১১২ টাকা ৫৪ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।  

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, কয়েক মাস টানা বেড়ে গত মে মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ, ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে উঠে। যা ছিল ছিল এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।   

জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে নেমে আসে। জুলাই মাসে আরও কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশে নেমে এসেছে।   

তবে এই তিন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেনি, উল্টো বেড়েছে। গত কয়েক মাস অল্প অল্প করে বাড়লেও আগস্টে এক লাফে সাড়ে ১২  শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

দুর্নীতির মাত্রা বেড়েছে: পরিকল্পনামন্ত্রী পরবর্তী

দুর্নীতির মাত্রা বেড়েছে: পরিকল্পনামন্ত্রী

কমেন্ট