মূল্যস্ফীতি শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে আসবে: অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী বলেন, “মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, লেনদেন ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং তা বাস্তবায়ন করছে।” ফাইল ছবি
শিগগিরই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আসার কথা শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেন, “সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে শিগগিরই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।”
মার্কিন ডলারসহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে টাকার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার ঘোষণাসহ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এর ফলে দ্রুত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, লেনদেন ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল হবে।”
সোমবার সংসদের বৈঠকে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।
একই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, লেনদেন ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং তা বাস্তবায়ন করছে।”
এসময় তিনি বেশকিছু পদক্ষেপ সংসদে তুলে ধরেন। বলেন, “মার্কিন ডলারসহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে টাকার বিনিময় হার বাজার ভিত্তিক করা; রিজার্ভ পুনরায় গঠনের জন্য সঠিক মূল্যে পণ্য আমদানি নিশ্চিত করা; বাণিজ্যিক ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা ধারণের সীমা হ্রাস করা হচ্ছে; ৫ হাজারের ডলারের বেশি প্রবাস আয়ের উৎস প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা বাতিল করা হয়েছে; পাইপ লাইনে থাকা বৈদেশিক অর্থায়ন ছাড়করণ ত্বরান্বিত করা হচ্ছে।”
সরকারি হিসাবে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ফের ১০ শতাংশের (দুই অঙ্কের ঘরে, ডাবল ডিজিট) কাছাকাছি পৌঁছেছে। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে এক লাফে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছে। অর্থাৎ খাবারের জন্য এখন মানুষকে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) রোববার মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, শহরের চেয়ে গ্রামে খাবারের দাম বেশি বেড়েছে। আগস্টে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীত হয়েছে ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ। শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীত হয়েছে ১২ দশমিক ১১ শতাংশ।
আগের মাস অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
আগস্ট মাসে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ সার্বিক মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের আগস্ট মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই বছরের আগস্টে তা কিনতে ১০৯ টাকা ৯২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
আর ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের আগস্ট মাসে দেশের মানুষ যে খাদ্য ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই বছরের আগস্টে তা কিনতে ১১২ টাকা ৫৪ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, কয়েক মাস টানা বেড়ে গত মে মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসভিত্তিক বা মাসওয়ারি) সার্বিক মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ, ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে উঠে। যা ছিল ছিল এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে নেমে আসে। জুলাই মাসে আরও কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
তবে এই তিন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেনি, উল্টো বেড়েছে। গত কয়েক মাস অল্প অল্প করে বাড়লেও আগস্টে এক লাফে সাড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
জামালপুর-৫ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল সংসদে বলেন, রুগ্ন শিল্পের সমস্যা সমাধানের জন্য ২০০৯ সালে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠিত হয়। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১০ ও ২০১২ সালে ২৭৯টি গার্মেন্টস এবং ২০১১ ও ২০১৫ সালে একশটি রুগ্ন টেক্সটাইল শিল্পের ঋণ বিলুপ্তের সার্কুলার জারি করে।
ময়মনসিংহ-১১ আসনের সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ‘কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে কৃষি ও পল্লী ঋণ খাতে ব্যাংকসমূহের মাধ্যমে ঋণ আকারে বিতরণের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে।
মোবাইল কলরেট পুনরায় নির্ধারণ হবে না
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের প্রশ্নের জবাবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বর্তমান প্রচলিত কলরেট ২০১৮ সালে মার্কেট পর্যালোচনা, আর্থ সমাজিক প্রেক্ষাপট প্রভৃতি বিশ্লেষণ করে নির্ধারণ করা হয়েছে। আপাতত কলরেট পুনরায় নির্ধারণের কোনো পরিকল্পনা নেই।
বর্তমানে সর্বোচ্চ কলরেট ২ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৪৫ পয়সা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মোবাইল অপারেটসমূহকে একটি নির্দিষ্ট প্যাকেজ, অফার, বা বান্ডেলে অন-নেট এবং অফ-নেটের ভয়েস কলের ক্ষেত্রে ট্যারিফের মধ্যে প্যাকেজ ডিজাইন করতে হয়। সর্বোচ্চ করলেট ২ টাকা হলেও অপারেটরসমূহ নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ১ টাকা মিনিটের কম রেটে বিভিন্ন প্যাকেজ ডিজাইন করে থাকে।
নওগাঁ-২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জানান, দেশে ৪টি মোবাইল কোম্পানি পরিচালিত হচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কোম্পানিগুলো সরকারকে তিন হাজার ১৭৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা রাজস্ব পরিশোধ করেছে।
কমেন্ট