সবুজ কারখানার স্বীকৃতি পেল আরও ২ প্রতিষ্ঠান
নতুন যে দুটি পোশাক কারখানা সবুজ কারখানার সনদ পেয়েছে সে দুটি হচ্ছে- নারায়নগঞ্জের ইউনিভার্সাল মেনসওয়্যার লিমিডেট ও ঢাকার প্যাসিফিক ব্লু 'জিন্স ওয়্যার' লিমিটেড। ফাইল ছবি
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য সুখবর। আরও দুই পোশাক কারখানাকে সবুজ কারখানা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)।
আর এর মধ্য দিয়ে দেশে ‘গ্রিন’ বা ‘সবুজ’ পোশাক কারখানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০২ এ।
নতুন যে দুটি পোশাক কারখানা সবুজ কারখানার সনদ পেয়েছে সে দুটি হচ্ছে- নারায়নগঞ্জের ইউনিভার্সাল মেনসওয়্যার লিমিডেট ও ঢাকার প্যাসিফিক ব্লু 'জিন্স ওয়্যার' লিমিটেড।
এর মধ্যে ইউনিভার্সাল মেনসওয়্যার লিমিডেট ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে গোল্ড রেটিং পেয়েছে। আর প্যাসিফিক ব্লু 'জিন্স ওয়্যার' লিমিটেড ৬০ পেয়েন্ট পেয়ে গোল্ড রেটিং পেয়েছে।
সম্প্রতি ইউএসজিবিস এই দুই কারাখানাকে ‘গ্রিন’ বা ‘সবুজ’ পোশাক কারখানার এ স্বীকৃতি দিয়েছে বলে পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জানিয়েছেন।
রোববার রাতে তিনি এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “কিছুদিন আগে আমরা আমাদের সবুজ কারখানার সংখ্যা ২০০ এর মাইলফলক ছুঁয়েছি। আজ আরও দুটি কারখানা এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে মোট ২০২ এ দাঁড়াল। আর এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববাজারে আমাদের পোশাকের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
ফারুক জানান, বর্তমানে লিড সনদে বিশ্বের শীর্ষ ১৫ কারখানার ১৩টিই বাংলাদেশের। এছাড়া সার্টিফিকেশন পাওয়ার জন্য আরও ৫০০টি কারখানা পাইপলাইনে রয়েছে।
“এটা আমাদের জন্য বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য অবশ্যই গৌরবের-আনন্দের।”
বিজিএমইএ জানায়, এখন পর্যন্ত দেশের পোশাক ও বস্ত্র খাতের ২০২টি কারখানা লিড সনদ পেয়েছে। এর মধ্যে লিড প্লাটিনাম ৭৩টি কারখানা, লিড গোল্ড ১১৫টি, সিলভার ১০টি ও সার্টিফায়েড ৪টি।
ফারুক হাসান বলেন, “এই অর্জন পরিবেশগত তত্ত্বাবধায়ক, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে স্পষ্ট করবে।”
তিনি বলেন, ২০২২ সালে দেশের ৩০টি পোশাক কারখানা লিড সনদ অর্জন করেছিল। এর মধ্যে ১৫টি ছিল প্লাটিনাম এবং ১৫টি ছিল গোল্ড ক্যাটাগরিতে।
শিল্প মালিকরা জানান, এ ধরনের সনদ অর্জন করতে হলে কারখানাকে কার্বন নিঃসরণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার সীমিতকরণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কারখানার অভ্যন্তরের পরিবেশ উন্নত করাসহ বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সবুজ পোশাক কারখানা বাংলাদেশে অবস্থিত। দীর্ঘদিন ধরে এই শীর্ষস্থান দখল করে আছে বাংলাদেশ।
বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ইউএসজিবিসি এই কারখানাগুলোকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে।
পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তার দেখানো পথ ধরেই দেশে একটার পর একটা পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা গড়ে উঠছে। উজ্জ্বল হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তি।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। ২০১৪ সালে সবুজ কারখানা স্থাপন করা হয় ৩টি। ২০১৫ সালে হয় ১১টি। ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে স্থাপন করা হয় যথাক্রমে ১৬, ১৮ ও ২৪টি।
২০১৯ সালে আরও ২৮টি সবুজ পোশাক কারখানা স্থাপন করেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। ২০২০ ও ২০২১ সালে ২৪টি করে আরও ৪৮টি কারখানা গড়ে উঠেছে দেশে।
আর এভাবেই সব মিলিয়ে দেশে মোট পরিবেশবান্ধব সবুজ পোশাক কারখানার সংখ্যা এখন ২০০টিতে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল-ইউএসজিবিসি। তারা ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন।
সনদটি পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিংবা পুরোনো ভবন সংস্কার করেও আবেদন করা যায়।
১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি। সংস্থাটির অধীনে কলকারখানার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, বাড়ি, বিক্রয়কেন্দ্র, প্রার্থনাকেন্দ্র ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
লিড সনদের জন্য ৯টি শর্ত পরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট আছে। এর মধ্যে ৮০ পয়েন্টের ওপরে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ হলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ হলে ‘লিড সিলভার’ এবং ৪০-৪৯ হলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ মেলে।
সাধারণত অন্যান্য স্থাপনার চেয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ৫-২০ শতাংশ খরচ বেশি হয়। তবে বাড়তি খরচ করলেও দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া যায়। ইউএসজিবিসি লিড সনদ পেতে স্থাপনা নির্মাণে ৯টি শর্ত পরিপালন করতে হয়।
তার মধ্যে আছে এমন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হয়, যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। এ জন্য পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে তৈরি ইট, সিমেন্ট ও ইস্পাত লাগে। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সূর্যের আলো, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি ও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয়। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি পানি সাশ্রয়ী কল ও ব্যবহৃত পানি প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করতে হয়।
এ ছাড়া স্থাপনায় পর্যাপ্ত খোলা জায়গা রাখার বাধ্যবাধকতা আছে। সব মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ২৪-৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ, ৩৩-৩৯ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ এবং ৪০ শতাংশ পানি ব্যবহার কমানো সম্ভব। তার মানে দেশে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সংখ্যা যত বেশি হবে, ততই তা পরিবেশের ওপর চাপ কমাবে।
কমেন্ট