ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান: ৮২ প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা জরিমানা

ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান: ৮২ প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা জরিমানা

ঢাকা মহানগরীতে রোববার অধিদপ্তরের ৩টি টিম বাজার অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়াও অন্যান্য বিভাগীয় শহরসহ দেশের সর্বমোট ৩৫টি জেলায় একসঙ্গে এ অভিযান চালানো হয়। ফাইল ছবি

বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রথমবারের মতো তিনটি কৃষিপণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার। সেগুলো হচ্ছে ডিম, আলু ও পেঁয়াজ। 

বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা, হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজের দাম হবে ৬৪-৬৫ টাকা। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেন। 

কিন্তু দেশের কোনো বাজারেই সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে এই তিন পণ্যসহ আগে বেঁধে দেওয়া দুই পণ্য ভোজ্যতেল ও চিনি বিক্রি হচ্ছে না। 

বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বেঁধে দেওয়া দাম পণ্যে বিক্রি হচ্ছে কী না, সেটি তদারকিতে শুক্রবার থেকে মাঠে নামবে জাতীয় ভোক্তা–অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। 

তারই অংশ হিসেবে রোববার জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার অভিযানে ৮২টি প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

রোববার সারাদেশে ভোক্তা অধিকারের ৩৭টি টিম ৫২টি বাজারে এই অভিযান চালায় বলে তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভোক্তা অধিকার জানিয়েছে, ঢাকা মহানগরসহ দেশের সব বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও স্যালাইনের মূল্য স্থিতিশীল এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। 

ঢাকা মহানগরীতে রোববার অধিদপ্তরের ৩টি টিম বাজার অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়াও অন্যান্য বিভাগীয় শহরসহ দেশের সর্বমোট ৩৫টি জেলায় একসঙ্গে এ অভিযান চালানো হয়। 

ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় অধিদপ্তরের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। 

দোকান বন্ধ করে পালালেন ব্যবসায়ীরা

এদিকে বাজারে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের সরকার নির্ধারিত মূল্য তদারকিত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান চলাকালে অনেক দোকানি দোকান বন্ধ করে পালিয়েছেন। 

রোববার দুপুরে রাজধানীর ভাটারার নতুন বাজারে এমন ঘটনা ঘটে। এমনকি শাটার ফেলার সময় না পেয়ে দ্রুততার সঙ্গে ত্রিপল দিয়ে মুড়িয়ে দোকান বন্ধ করে আশপাশে অবস্থান নেন অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী। 

ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কয়েকটি দোকানে অভিযান চালিয়ে বাজার ত্যাগ করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বাজারের এক প্রান্তে অভিযান শেষ করে মাছ বাজারের পাশে ডিমের আড়তে আসতেই ডিম, আলু ব্যবসায়ী ও মুদিদোকানদারেরা ত্রিপল দিয়ে দোকান মুড়িয়ে আশপাশে অবস্থান নেন। 

বাজারের তিনটি গলিতে অর্ধশতাধিক দোকান বন্ধ করতে দেখা গেছে। অধিকাংশ দোকানদার ত্রিপল দিয়ে মুড়িয়ে সাময়িকভাবে দোকান বন্ধ করলেও অনেকে আগেভাগে পুরোপুরি শাটার লাগিয়ে দোকান বন্ধ করে দেন। 

এ সময় বাজারে ক্রেতা এলে অনেক ব্যবসায়ী ক্রেতাদের বলেন, এখন লাঞ্চ টাইম বা দুপুরের খাবারের সময়, এখন দোকান আর খোলা হবে না। পরে আসেন। 

অথচ এই অভিযান যখন চলছিল, তখন ঘড়িতে বাজে মাত্র দুপুর সাড়ে ১২টা। এই সময়ে সাধারণত বাজারের দোকানদারেরা দুপুরের খাবার খান না। তারা আরও পরে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন বলে স্থানীয় ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। 

ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রোজিনা সুলতানা ও মাগফুর রহমানের নেতৃত্বে নতুন বাজারে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। 

বিক্রেতাদের দোকান বন্ধ করে চলে যাওয়ার বিষয়ে মাগফুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সংবােদিকদের বলেন, “আমরা যে শুধু জরিমানা করার জন্য আসি, তা নয়; আমরা বাজার পরিস্থিতি কীভাবে স্থিতিশীল করা যায়, তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করি।” 

“কোথায় সমস্যা হচ্ছে, তা নিয়ে কথা বলি—সমাধানের পথ খুঁজি। অভিযান দেখে ব্যবসায়ীদের দোকান বন্ধ করে চলে যাওয়ার অর্থ, তারা সহযোগিতা করতে চাচ্ছেন না, তাঁদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছেন না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট বাজার কমিটির সঙ্গে কথা বলব।।” 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী সংবাদিকদের বলেন, আমরা যে দামে পণ্য পাইকারিতে কিনতে পারি, তার চেয়ে সামান্য বাড়িয়ে বিক্রি করি। কিন্তু পাইকারি বাজারে অভিযান না করে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। অভিযানে এসে কোনো না কোনো অজুহাতে জরিমানা করা হয়, কোনো কথাই তারা শুনতে চান না। 

তাই অভিযান হচ্ছে বুঝতে পারলে সবাই দোকান বন্ধ রাখি। এই সময় ব্যবসা করতে গেলে যে টাকা লাভ হয়, একবার জরিমানা দিতে হলে তার কয়েকগুণ টাকা চলে যায় বলে জানান ব্যবসায়ীরা। 

নতুন বাজারে বেলা একটার দিকে অভিযান শেষে ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাগফুর রহমান বলেন, ভাটারা নতুন বাজারে মোট ৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনোটি পাকা রসিদ সংরক্ষণ করেনি, কোনোটি পণ্যের দাম বেশি রেখেছে। আবার কারও মূল্যতালিকায় ত্রুটি ছিল। সরকার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাজারে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

সবুজ কারখানার স্বীকৃতি পেল আরও ২ প্রতিষ্ঠান পরবর্তী

সবুজ কারখানার স্বীকৃতি পেল আরও ২ প্রতিষ্ঠান

কমেন্ট