তিন মাসের মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক হবে: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় জন্য সরকারকে এককভাবে দায়ী করা যায় না বলে মন্তব্য করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, "পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পলিসি রেটগুলো বাড়ানো হয়েছে। চাহিদা কমাতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফাইল ছবি
আগামী তিন মাসের মধ্যে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি এবং এক বছরের মধ্যে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংক আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ আশ্বাস দেন।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় জন্য সরকারকে এককভাবে দায়ী করা যায় না বলে মন্তব্য করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, "পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পলিসি রেটগুলো বাড়ানো হয়েছে। চাহিদা কমাতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় বাড়তি মূল্যের দায় সরকারকে দেওয়া যায় না।"
তিনি বলেন, এই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোর পেছনে বাহ্যিক কারণও ভূমিকা রেখেছে।
"বৈশ্বিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারেও দাম বেড়েছে," ব্যাখ্যা করেন তিনি।
শামসুল আলম বলেন, “মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে বাজার মনিটরিংনহ সব ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। আশা করছি, আগামী তিন মাসের মধ্যে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ও এক বছরের মধ্যে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসবে।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সবজি উৎপাদন কম হয়। এ সময়ে মেজর কো-ফসলের হারভেস্টিং হয় না, তাই খাদ্যপণ্যের দাম বেশি থাকে।”
সরবরাহের ঘাটতি ছাড়া ডিমের দাম বৃদ্ধির অন্য কোনো কারণ নেই বলেও মনে করেন প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
তিনি বলেন, "এ খাতে অনেক ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উৎপাদক রয়েছেন। ক্রেতা বিক্রেতাও অনেক। এমন পণ্যে সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার কোনো সুযোগ নেই।"
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, শহরের চেয়ে গ্রামে খাবারের দাম বেশি বেড়েছে। আগস্টে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীত হয়েছে ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ। শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীত হয়েছে ১২ দশমিক ১১ শতাংশ।
আগের মাস অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
আগস্ট মাসে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ সার্বিক মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের আগস্ট মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই বছরের আগস্টে তা কিনতে ১০৯ টাকা ৯২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
আর ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের আগস্ট মাসে দেশের মানুষ যে খাদ্য ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই বছরের আগস্টে তা কিনতে ১১২ টাকা ৫৪ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
'অ্যাভয়ডিং মিডল ইনকাম ট্র্যাপ ইন বাংলাদেশ: লেসন ফ্রম কোরিয়া'- শীর্ষক সেমিনারে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও ঢাকায় নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক, বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি, অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখেন।
দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, সুষ্ঠু নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং সুশাসন নিশ্চিত করার মত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে পারলে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়াতে পারবে বলে সেমিনারে মন্তব্য করেন বক্তারা।
কমেন্ট