দুই মাসে এডিপির ৩.৮৪ শতাংশ বাস্তবায়ন
জুলাই-আগস্ট সময়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খরচ করেছে ১০ হাজার ৫৪১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই খরচের মধ্যে সরকারি তহবিলের (জিওবি) ৬ হাজার ৮৫৪ কোটি, বৈদেশিক সহায়তার ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ৩২১ কোটি টাকা।
বরাবরের মত এবারও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের হতাশাজনক চিত্র নিয়ে শুরু হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছর।
চলতি অর্থবছরের সাড়ে তিন মাস পার হয়ে গেলেও সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের দুই মাসের (জুলাই-আগস্ট) তথ্য প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এডিপি বাস্তবায়নের এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
মঙ্গলবার এই প্রতিবেদনে দেখা যায় চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট সময়ে এডিপির মাত্র ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। টাকার অঙ্কে এই ব্যয়ের পরিমাণ ১০ হাজার ৫৪১ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থার জন্য বরাদ্দসহ সরকার মোট ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়নের লক্ষ্য হাতে নিয়েছে সরকার।
এর মধ্যে প্রথম জুলাই-আগস্ট সময়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খরচ করেছে ১০ হাজার ৫৪১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই খরচের মধ্যে সরকারি তহবিলের (জিওবি) ৬ হাজার ৮৫৪ কোটি, বৈদেশিক সহায়তার ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ৩২১ কোটি টাকা।
সবশেষ আগস্ট মাসে মোট এডিপির ৭ হাজার ৫২ কোটি ৭০ লাখ টাকা খরছ হয়েছে। শতাংশ হিসাবে যা ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
গত বছরের আগস্টে ব্যয় হয়েছিল এর চেয়ে বেশি ৭ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। শতাংশ হিসাবে ছিল ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
এডিপি বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-আগস্ট সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে সব থেকে এগিয়ে আছে সুরক্ষা সেবা বিভাগ; মোট বরাদ্দের ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে এই বিভাগ। দ্বিতীয় অবস্থানে সংসদ বিষয়ক বিভাগ ১৫ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং তৃতীয় অবস্থানে জাতীয় সংসদ সচিবালয় ১২ দশমিক ১৩ শতাংশ।
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এডিপি বাস্তবায়ন করেছে ১০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ, স্থানীয় সরকার বিভাগ ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ, বিদুৎ বিভাগ ৩ দশমিক শূন্য এক শতাংশ, রেলপথ বিভাগ ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং কৃষি মন্ত্রণালয় মোট বরাদ্দের ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ খরচ করেছে।
এছাড়া সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ, সেতু বিভাগ ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ ৯ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ মোট বরাদ্দের ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ খরচ করেছে।
এই দুই মাসে বরাদ্দের এক টাকাও খরচ করতে পারেনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট বরাদ্দ আছে ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যা মোট এডিপির ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও কোনো টাকা খরচ করেনি।
মোট বরাদ্দের ১ শতাংশেরও কম এডিপি বাস্তবায়ন করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন, ভূমি মন্ত্রণালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ; টাকার অঙ্কে খরচের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৮৪৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
গত কয়েক বছরের প্রথম দুই মাসের (জুলাই-আগস্ট) এডিপির বাস্তবায়ন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ।
২০২০-২১ অর্থবছরে বাস্তবায়ন হয় ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে জুলাই-আগস্ট সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
অতীত ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, প্রতিবারই অর্থবছরের প্রথম দিকে এডিপি বাস্তবায়নের হার অনেক কম থাকে; শেষের দিকে খরচ বেড়ে যায়।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ কোটি ৬৭ লাখ টাকার সংশোধিত এডিপির ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়। ওই ব্যয় ছিল সংশোধিত এডিপির মোট বরাদ্দের ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত অর্থবছরের ১১ মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সময়ে মোট ১ লাখ ৪৬ হাজার ২২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। যা ছিল সংশোধিত এডিপির মোট বরাদ্দের ৬১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
অর্থবছরের শেষের এক মাসেই (জুন) ৫৩ হাজার ৭৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা খরচ হয়। অর্থাৎ মোট সংশোধিত এডিপির প্রায় ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশই ব্যয় হয় শেষের মাস জুনে।
কমেন্ট