‘দাম না কমালে আলুও আমদানি’
মঙ্গলবার বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আলু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। ছবি সংগৃহীত
বাজারের আগুন নেভাতে ভোজ্যতেল ও চিনির পাশাপাশি প্রথমবারের মত পেঁয়াজ, ডিম ও আলু সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বেঁধে দিয়েছে সরকার।
কিন্তু সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না অতি প্রয়োজনীয় এই তিন পণ্য। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার অভিযান এবং জরিমানার পরও ব্যবসায়ীরা আলুসহ অন্যান্য পণ্য বেশি দামে বিক্রি করছেন।
এ পরিস্থিতিতে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ ও ডিমের মত আলু আমদানিরও হুমকি দিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
মঙ্গলবার বিকেলে বগুড়া জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে আলু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, “সরকার নির্ধারিত দর অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা আলুর দাম না কমালে সরকারকে আমদানির পরামর্শ দেওয়া হবে।”
সফিকুজ্জামান বলেন, “এই সংকট নিরসনে আমরা কৃষিবিভাগ ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে আলুর দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে। নাহলে আমদানির অনুমতি দিতে আমি সরকারের কাছে সুপারিশ করব।”
বগুড়া জেলার প্রায় একশ' ব্যবসায়ী এই বৈঠকে অংশ নেন।
গত বৃহস্পতিবার নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা শীর্ষক বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এই তিন পণ্যের দাম বেঁধে দেন।
তিনি বলেন, বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী এখন থেকে প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা, হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজের দাম হবে ৬৪-৬৫ টাকা।
কিন্তু দেশের কোনো বাজারেই সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে পণ্য তিনটি বিক্রি হচ্ছে না।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি আলু মানভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বগুড়ায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে পাইকারি পর্যায়ে ২৭ টাকায় আলু বিক্রি নিশ্চিত করতে হিমাগার ও আলু ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তার কথার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীরাও হিমাগার পর্যায়ে আলুর দাম ২৭ টাকা রাখার নিশ্চয়তা দেন।
সকালে বগুড়ায় আলুর বাজার পরিদর্শনে আসেন ভোক্তার অধিকারের ডিজি। এ সময় শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলায় আর অ্যান্ড আর পটেটো স্টোরেজ নামের একটি হিমাগার ঘুরে দেখেন।
আর এন্ড আর পটেটো স্টোরেজ হিমাগার পরিদর্শনে গিয়ে আলুর মজুত ও অতিরিক্ত মুনাফা করার কিছু প্রমাণ পান সফিকুজ্জামান।
এ সময় ৩ ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন- শিবগঞ্জের মোকামতলা ইউনিয়নের চাকলমা গ্রামের রিপন মিয়া, দেউলী ইউনিয়নের ভরিয়া গ্রামের শাহআলম ও পিরব ইউনিয়নের দাইমোল্লা গ্রামের জাহিদ হাসান।
আটক ব্যক্তিরা অতিরিক্ত মজুত রেখে আলু বিক্রয় করছিলেন। এছাড়া বিক্রয়ের কোনো রসিদ তারা দেখাতে পারেননি।
পরে বিকেল তিনটার দিকে জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষ করতোয়ায় বৈঠক করেন তিনি।
বৈঠকের পর ভোক্তা-অধিকারের মহাপরিচালক বলেন, “গত দেড় মাস যাবৎ আলুর বাজার অস্থিতিশীল রয়েছে। আমরা জানি, আপনারাও জানেন বাজারের ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলে বিশৃংখলা হচ্ছে। সেই বিশৃংখলা দূর করতে আজকে আমরা এখানে এসেছি।”
“কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে আলুর পাইকারি মূল্য ২৭ টাকা কেজি বিক্রি হলেই বাজারে ৩৫-৩৬ টাকা করে বিক্রি হবে। এর মধ্যে অন্য কোথাও সমস্যা হলে, আমরা সে বিষয়েও হস্তক্ষেপ করব।”
কমেন্ট