মূল্যস্ফীতি নিয়ে স্বস্তির খবর দিলো এডিবি, নেমে আসবে ৬.৬ শতাংশে

মূল্যস্ফীতি নিয়ে স্বস্তির খবর দিলো এডিবি, নেমে আসবে ৬.৬ শতাংশে

সংস্থাটি বলেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে চড়তে থাকা উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমে ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে। ৯ শতাংশ গড় মূল্যস্ফীতি নিয়ে গত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষ হয়েছিল।

বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির উদ্বেগজনক ও স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি নিয়ে স্বস্তির খবর দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক এই উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। 

সংস্থাটি বলেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে চড়তে থাকা উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমে ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে। ৯ শতাংশ গড় মূল্যস্ফীতি নিয়ে গত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষ হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কিছুটা কমার কারণে মূল্যস্ফীতি কমতে পারে বলে আশার কথা শুনিয়েছে এডিবি। 

বুধবার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর ২০২৩ সংস্করণ প্রকাশ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। সেখানে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতির হালচাল নিয়ে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। 

এর আগে গত জুলাইতে প্রকাশিত আউটলুকেও এডিবি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বাভাস দিয়েছিল। 

অর্থাৎ গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে (২০২৪ সালের জুন শেষে) বাংলাদেশের অর্থনীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক এই উন্নয়ন সংস্থাটি। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাথমিক হিসাবে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। 

গত অর্থবছরের মত চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।

 

মূল্যস্ফীতি নিয়ে এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতিও ঊর্ধ্বমূখী হয়েছে। সে কারণেই গত অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি ছিল। 

“কিন্তু এবার পেক্ষাপট একটু ভিন্ন। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি কিছুটা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে বলে মনে হচ্ছে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়েছে। 

“এতে বাজারে টাকার সরবরাহ কমবে। অন্যদিকে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়তা করবে।” 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।  

বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, শহরের চেয়ে  গ্রামে খাবারের দাম বেশি বেড়েছে। আগস্টে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীত হয়েছে ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ। শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীত হয়েছে ১২ দশমিক ১১ শতাংশ।  

আগের মাস অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।    

আগস্ট মাসে ৯  দশমিক ৯২ শতাংশ সার্বিক মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের আগস্ট মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই বছরের আগস্টে তা কিনতে ১০৯ টাকা ৯২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।   

আর ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের আগস্ট মাসে দেশের মানুষ যে খাদ্য ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই বছরের আগস্টে তা কিনতে ১১২ টাকা ৫৪ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। ১ জুন বাজেট ঘোষণার পর থেকেই দেশের সব অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থাগুলো বলে আসছে বাজারের যে অবস্থা তাতে সরকারের এই আশা কখনই পূরণ হবে না।

প্রতিবেদনে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং বলেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেই বাংলাদেশ সরকার তুলনামূলকভাবে ভালোভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড  পরিচালনা করছে। বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সমালোচনামূলক সংস্কারের অগ্রগতি হয়েছে।

তিনি বলেন, “কাঠামোগত সংস্কারের মধ্যে জনসাধারণের আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা, অভ্যন্তরীণ সম্পদের সংহতি বৃদ্ধি করা, সরবরাহের উন্নতি ঘটানো ও আর্থিক খাতকে আরও দৃঢ় করার বিষয় ছিল। বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও মাঝারি মেয়াদে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এসব গুরুত্বপূর্ণ।”

‘দাম না কমালে আলুও আমদানি’ পরবর্তী

‘দাম না কমালে আলুও আমদানি’

কমেন্ট