সংকটেও রাজস্ব আদায়ে ভালো প্রবৃদ্ধি
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ৪৬ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। এই অঙ্ক গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি।
দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় দেশের অর্থনীতি বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে।
সরকারি হিসাবেই দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের (দুই অঙ্কের ঘরে, ডাবল ডিজিট) কাছাকাছি পৌঁছেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে এক লাফে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছে। অর্থাৎ খাবারের জন্য এখন মানুষকে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমছেই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের রিজার্ভ ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ নেমেছে ২৭ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারে।
অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। কিন্তু এর মধ্যেও সরকারের রাজস্ব আদায়ের গতি বেশ ভালো।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ৪৬ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।
এই অঙ্ক গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন বাজেটে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় এবং মনিটরিং জোরদার করায় ভ্যাট আদায়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এআরএইচ ডটকমকে বলেন, "ফিসক্যাল মেজারস এর অংশ হিসেবে এবার বেশ কিছু কর অব্যাহতি বাতিল করা হয়েছে, যা গত বছরের ছিলো। ফলে ওই সময়ের তুলনায় এবার রাজস্ব আদায়ে গ্রোথ বেশি হয়েছে।"
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, "কিছু কনজ্যুমার আইটেমে গত বছরের এই সময়ে রিডিউসড রেটে ভ্যাট ছিল, যা বর্তমানে নেই। ফলে এবার ওইসব খাত থেকে বেশি ভ্যাট আদায় হয়েছে।"
ওই কর্মকর্তা বলেন, “সরকার নতুন করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) ব্যবস্থা চালু করছে। এর ফলে আগামীতে ভ্যাট আদায় আরও বাড়বে।”
তার পরও লক্ষ্য পূরণ হয়নি
নতুন অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রাজস্ব আদায় প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি হলেও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। লক্ষ্যের চেয়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি কম আদায় হয়েছে এই দুই মাসে।
এই দুই মাসে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৫০ হাজার ৩২১ কোটি টাকা।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-আগস্ট সময়ে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৮৭ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের জন্য সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে সরকার।
এনবিআরের সাময়িক হিসাবে, জুলাই-আগস্ট সময়ে তিন খাতের মধ্যে শুধু শুল্ক আদায়ে লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। এই দুই মাসে এ খাতে ১৬ হাজার ১৭৭ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে ১৬ হাজার ১৯২ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
এ ছাড়া আয়কর খাতে ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঘাটতি হয়েছে ২ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা।
ভ্যাট খাতে ঘাটতি ১ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা; ভ্যাট আদায় হয়েছে ১৭ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।
মানুষের উপর করের চাপ বেড়েছে
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মাজিদ বর্তমানে সংকটময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও রাজস্ব আদায়ে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
এআরএইচ ডটকমকে তিনি বলেন, "অর্থনৈতিক গতিমন্থরতার মধ্যে রাজস্ব আদায়ে ভালো প্রবৃদ্ধি ইঙ্গিত দেয় যে, মানুষের উপর করের চাপ বেড়েছে।"
"করের চাপ সাধারণ ভোক্তার উপর পড়ছে। বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে তাদের উপর বাড়তি করের (ভ্যাট) চাপ তাদের আরো কঠিন অবস্থার মধ্যে ফেলছে।”
"তবে ইয়ার-অন-ইয়ার গ্রোথ ১৫ শতাংশ দেখে খুব বেশি সন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ শতাংশের ওপরে। ফলে এই গ্রোথ যথেষ্ট নয়।"
"বাজেটে কিছু মেজারস নেওয়ায় হয়তো ট্যাক্স আদায় বেড়েছে। কিন্তু সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আশানুরূপ ভালো নয়। সে বিবেচনায় অর্থবছর শেষে এই প্রবৃদ্ধি থাকবে কী না-তা নিয়ে যথেস্ট সংশ্রয় আছে," বলেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ শতাংশের সামান্য বেশি।
তার আগের পাঁচ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে করোনা মহামারির অর্থবছরে (২০২০-২১) নেগেটিভ (-) প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
চলতি অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
কমেন্ট