ডিম আমদানি বন্ধের দাবি প্রান্তিক খামারিদের
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বিপিএ নেতারা। ছবি: সংগৃহীত
ডিম আমদানি বন্ধ ও খাদ্য আমদানির দাবি জানিয়েছেন প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) নেতারা।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে পোলট্রি খাত করপোরেট সিন্ডিকেটমুক্ত করতে সরকারকে মুরগির বাচ্চার আমদানি অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন বিপিএ নেতারা। দাম স্থিতিশীল রাখতে মুরগির খাদ্য আমদানির অনুমতি দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা। এ সব করা হলে দেশের বাজারে খাদ্যের দাম কমে যাবে, সিন্ডিকেট ভেঙে পড়বে, লাভবান হবেন দেশের প্রান্তিক খামারিরা।
একই সঙ্গে খামারিদের সুরক্ষা দিতে ডিম আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, আমদানি করে সাময়িকভাবে ডিমের দাম কমানো গেলেও ভবিষ্যতে ডিমের বাজার অস্থিতিশীল হবে। ডিম আমদানির খবরে অনেক প্রান্তিক খামারি ডিম উৎপাদন থেকে সরে আসছেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এতে বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ডিমের বাজারে তদারকি হওয়ার ফলে এখন মুরগির বাচ্চার বাজারে লুটপাট শুরু করেছে করপোরেট সিন্ডিকেট।
ডিম আমদানি করে সমস্যার সমাধান হবে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমদানির ফলে প্রান্তিক খামারিরা আতঙ্কিত হয়ে উৎপাদন থেকে সরে যাচ্ছেন।”
“এতে বাজারে ডিমের তীব্র সংকট তৈরি হতে পারে। আমদানি করে হয়তো সাময়িক সমাধান পাওয়া যাবে; কিন্তু এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য মুরগির বাচ্চা ও খাবারের দাম কমাতে হবে। দাম কমাতে বর্তমানে এ খাতে যেসব কোম্পানি আছে, তাদের সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলতে হবে।”
মুরগির খাদ্য ও বাচ্চার বাজারে করপোরেট সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ কমানো গেলে ক্ষুদ্র খামারিরা সুরক্ষা পাবেন উল্লেখ করে সুমন হাওলাদার বলেন, “দেশের লাখো ক্ষুদ্র খামারিদের সুরক্ষা না দিলে ভোক্তাদের আরও বেশি দামে ডিম ও মুরগির মাংস কিনতে হবে। এ সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।”
“কিন্তু করপোরেট কোম্পানিগুলো একচেটিয়াভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার ফলে সরকারও সেভাবে কাজ করতে পারছে না। এখন খাদ্যের দাম কমাতে গেলে আমদানির অনুমতি দিতে হবে। মুরগির বাচ্চা আমদানি বন্ধের যে সিদ্ধান্ত সরকার নিতে যাচ্ছে, তা থামাতে হবে।”
“তাহলে করপোরেট সিন্ডিকেটের হাত থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবেন প্রান্তিক খামারিরা। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ডিমের দাম যেমন কম, খাদ্যের দামও কম। সে জন্য খাদ্য আমদানি করা যেতে পারে, তাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, করপোরেট কোম্পানিগুলো খাদ্য, মুরগি, ডিম, মুরগির ওষুধসহ সব ব্যবসায় নেমেছে। সবকিছু তাদের হাতে থাকায় ক্ষুদ্র খামারিরা অসহায়। এ বাজারে তারা যে দাম দেয়, সেটাই মেনে নিতে হয়।
ব্রয়লার মুরগির এক দিনের বাচ্চার দাম এক মাসের ব্যবধানে ৩৫ টাকা থেকে ৫২ টাকা হয়েছে—প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। এতে ক্ষুদ্র খামারিদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। খাদ্য ও বাচ্চার বাজার একচেটিয়াভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন বড় ব্যবসায়ীরা। তারা এক হয়ে যে দাম দেন, সেটাই ক্ষুদ্র খামারিদের মেনে নিতে হয়।
বিপিএর সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন বলেন, “ডিম আমদানি করার মাধ্যমে একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ডিম আমদানি করা হলে দাম কমবে, এমন কথা দেওয়া হলেও আদতে ডিমের দাম একটা সময় আরও বেড়ে যাবে এবং তখন ২০ টাকায় ডিম খেতে হবে।”
“সে জন্য আমদারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে দেশের প্রান্তিক খামারিরা কীভাবে উৎপাদনে ফিরে আসতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা উচিত।”
সংবাদ সম্মেলনে বিপিএর কেন্দ্রীয় নেতারাসহ জেলা পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কমেন্ট