মোবাইলে রিচার্জের টাকাও দেখাতে হবে আয়কর রিটার্নে

মোবাইলে রিচার্জের টাকাও দেখাতে হবে আয়কর রিটার্নে

নতুন আইন অনুযায়ী, জীবনযাত্রার খরচে ৯ ধরনের তথ্য দিতে হবে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়।

আয়কর রিটার্ন বা বিবরণীতে বড় করদাতাদের জীবনযাত্রার যাবতীয় খরচ জানাতে হয়। নতুন আইন অনুযায়ী, জীবনযাত্রার খরচে ৯ ধরনের তথ্য দিতে হবে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়। 

খুঁটিনাটি অনেক ব্যয় হচ্ছে, যার হিসাব অনেকেই রাখেন না। কিন্তু বছর শেষে সেই সব এটা-সেটা হিসাবের পরিমাণও দাঁড়ায় অনেক। 

আয়করদাতাদের সেই সব খুচরা হিসাবও এবার খুঁজছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। এর একটি হচ্ছে মোবাইল ফোনে কথা বলার খরচ। প্রতি অর্থবছর (জুলাই থেকে জুন) কত অর্থ একজন গ্রাহক রিচার্জ করে ব্যয় করছেন, এখন থেকে সেই হিসাবও করদাতাকে দিতে হবে তার আয়কর রিটার্ন বা বিবরণীতে। 

একইভাবে ইন্টারনেট প্যাকেজের পেছনে কত অর্থ খরচ করছেন জানাতে হবে। 

এ সব তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসারে চলতি বছরের আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় উল্লেখ করতে হবে। 

নতুন আয়কর আইন অনুযায়ী, রিটার্ন জমার সময় জীবনযাত্রার খরচের বিবরণী দাখিলের সময় এসব তথ্য দিতে হবে। আগের আইনে এটা ছিল না। এ ছাড়া গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিলের তথ্যও দিতে হবে। আইটি ১১গ (২০২৩) ফরমে জীবনযাত্রার ব্যয়–সম্পর্কিত বিষয়াবলি দিতে হয়। 

অবশ্য বার্ষিক পাঁচ লাখ টাকার বেশি আয় এবং ৪০ লাখ টাকার বেশি সম্পদ থাকলেই কেবল সম্পদের বিবরণীসহ জীবনযাত্রার হিসাব–নিকাশ জমা দিতে হবে। এই সীমা অতিক্রম না করলেও চাইলে যেকোনো করদাতা তার জীবনযাত্রার বিবরণী জমা দিতে পারেন। 

এ বিষয়ে আয়কর আইনজীবী ইমরান গাজী বলেন, মোবাইল রিচার্জের হিসাব রাখাটা জটিল বিষয়। ইন্টারনেট প্যাকেজের বেলায়ও একই অবস্থা। এতে করদাতার হয়রানিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যেহেতু নতুন আইনে এ সব বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, তাই করদাতাকে মানতে হবে। 

একই বিষয়ে কর আইনজীবী মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, “একজন করদাতার পক্ষে সারা বছরের মুঠোফোনে কত টাকা রিচার্জ করলেন, তার হিসাব রাখা কঠিন। সাধারণত একসঙ্গে বেশি অর্থ রিচার্জ করেন না মুঠোফোন ব্যবহারকারীরা। নতুন এই আইনের ফলে অনেক করদাতা ঝামেলায় পড়বে। 

“নতুন এই বিধানের ফলে অনেক করদাতার ঝামেলা বাড়বে।” 

জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিবরণীর মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড  দেখতে চায়, আপনি কতটা ধনী, আপনি কত আয় করেন, কত খরচ করেন, আপনার সামাজিক অবস্থান কী। আপনার বৈধ আয়ের সঙ্গে আপনার জীবনযাত্রার মিল আছে কি না, সেটাও দেখতে চান কর কর্মকর্তারা। এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে। 

৯ ধরনের তথ্য দিতে হবে 

নতুন আইন অনুযায়ী, জীবনযাত্রার বিবরণীতে ৯ ধরনের তথ্য দিতে হবে। এগুলো হলো—ব্যক্তিগত ও পরিবারের ভরণপোষণ খরচ, আবাসন–সংক্রান্ত খরচ, গাড়ির ব্যয়, পরিষেবা খরচ, শিক্ষা ব্যয়, নিজ খরচে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ ও অবকাশ–সংক্রান্ত তথ্য, উৎসবের খরচ, সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য উৎসে করের হিসাব, প্রাতিষ্ঠানিক ও অন্যান্য উৎস থেকে নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধের তথ্য।

 

ভ্রমণপ্রিয় ব্যক্তিদের খরচের খুঁটিনাটি জানাতে হবে। এ দেশে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও এখন নিয়মিত দেশে-বিদেশে ঘুরতে যায়। অনেক টাকাও খরচ করে তারা। কর নথিতে এসব হিসাব দিতে হবে। 

পরিবার-পরিজন নিয়ে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, চা–বাগান, সুন্দরবন, হাওরসহ যেখানেই ঘুরতে যান না কেন, কত খরচ করলেন, তা বছর শেষে এনবিআরকে জানাতে হবে। 

এমনকি রাজধানীর আশপাশে রিসোর্টে যাওয়ার খরচের খবরও এনবিআর জানতে চায়। 

আবার আপনি আপনার সন্তানকে কী ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াচ্ছেন, তা–ও জানতে চায় এনবিআর। শিক্ষায় খরচের মাধ্যমে কর কর্মকর্তারা বুঝতে চান, আপনার আয়ের সঙ্গে সন্তানের শিক্ষা খরচের সামঞ্জস্য আছে কি না। 

একইভাবে গাড়ির খবর, বাড়ি বা ফ্ল্যাটের খবরও জানাতে হবে। এ ছাড়া ঈদ, নববর্ষসহ বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে আপনি কত খরচ করলেন, এর হিসাবও রেখে দেবেন। বছর শেষে এনবিআরকে জানাতে হবে। 

জানা গেছে, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী প্রতিবছর নিজেদের প্রতিষ্ঠানের লোকসান দেখান এবং ন্যূনতম কর দিয়ে পার পেয়ে যান। অথচ দেখা গেছে, অনেকের সন্তান রাজধানীর নামজাদা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করে। 

ধনীদের ছাড় 

এবারের বাজেটে ধনীদের আরও কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে। এত দিন তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলেই আয়করের সঙ্গে সারচার্জ দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। 

এবারের বাজেটে এই সীমা বাড়িয়ে বলা হয়েছে, চার কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে সারচার্জ বাধ্যতামূলক হবে। 

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, নিট সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি টাকা থেকে ১০ কোটি টাকার মধ্যে হলে ব্যক্তি করদাতাকে করের ১০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে। অথবা নিজ নামে একাধিক গাড়ি কিংবা ৮ হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের গৃহ-সম্পত্তি থাকলেও ১০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে। 

এ ছাড়া নিট সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি টাকা থেকে ২০ কোটি টাকার মধ্যে হলে প্রদত্ত করের ২০ শতাংশ, সম্পদের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার মধ্যে করের ৩০ শতাংশ এবং ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে করের ৩৫ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে।

৫ বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা দেবে এআইআইবি পরবর্তী

৫ বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা দেবে এআইআইবি

কমেন্ট