জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক
বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থাটি বলেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ অর্জিত হতে পারে। গত এপ্রিলে পূর্বাভাস দিয়েছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ অর্জিত হবে।
বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।
বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল এই সংস্থাটি বলেছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ অর্জিত হতে পারে। গত এপ্রিলে বিশ্ব ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছিল বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরে আগের পূর্বাভাস থেকে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দশমিক ৬ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।
যদিও সরকার চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তাতে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ বানার্ড হ্যাভেন প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এ সময় কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক এবং অর্থনীতিবিদ নাজমুস সাদাত উপস্থিত ছিলেন।
একই সময় যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বিশ্ব ব্যাংকের সদর দপ্তর থেকে ‘সাউথ এশিয়া ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে ৬ শতাংশে নেমে আসে।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ধীরগতি, আর্থিক খাতে নানা ধরনের কড়াকড়ি ও আমদানি কমার কারণে বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার চলতি অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে।
বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তা প্রবৃদ্ধি কমার কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে (এপ্রিল-মার্চ) ভারতে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
পাকিস্তানে প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। নেপালে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। ভূটানে প্রবৃদ্ধি হবে ৪ শতাংশ।
২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কায় প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক মাইনাস ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২৪ সালে দেশটি ঘুরে দাঁড়াবে এবং প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
২০২৪ সালে মালদ্বীপে প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসবে। ২০২৩ সালে দেশটিতে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল।
তবে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। গত ২০ সেপ্টেম্বর এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর ২০২৩ সংস্করণ প্রকাশ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি। সেখানে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী দিনেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। সংস্থাটি বলছে, মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি নির্ভর করবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য কেমন থাকে, তার ওপর।
বিশ্ব ব্যাংক আরও বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে পারলে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক করা সম্ভব হলে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আবদুল্লায়ে সেক বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে। মানুষের ভোগও চাপের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া মজুরি বৃদ্ধির তুলনায় খাবারের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে মুদ্রানীতির কার্যকর ব্যবহারের ওপর জোর দেন তিনি।
বিশ্ব ব্যাংকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সুদের হারের সীমা পর্যায়ক্রমে তুলে দিতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের কার্যকর তদারকির মাধ্যমে আর্থিক খাতের ঝুঁকি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিশ্বব্যাংক অর্থনীতিতে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে বিনিময় হারকে ধরাবাঁধার বাইরে রাখা, মুদ্রানীতি আধুনিক করা এবং রাজস্ব খাতের সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, অর্থনীতিতে এখন বিভিন্ন ধরনের বাধা কাজ করছে। ফলে ঝুঁকিও ক্রমশ বাড়ছে।
কমেন্ট