দুই মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বেড়েছে ১৪ গুণ

দুই মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বেড়েছে ১৪ গুণ

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৬২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪০১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ফের বাড়তে শুরু করেছে।

সুদের হার হ্রাস ও নানা কড়াকড়ির কারণে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিক্রি বেশ কমে গিয়েছিল; বিক্রির চেয়ে সুদ-আসল পরিশোধেই বেশি টাকা চলে গিয়েছিল।

কিন্তু সে অবস্থা আর নেই। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৬২ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪০১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

এ হিসাবে এই দুই মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বেড়েছে প্রায় ১৪ গুণ।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল গ্রাহকদের পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়।

এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

তাহলে বলা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ৫ হাজার ৫৬২ কোটি ১৩ লাখ টাকা ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে নিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ অন্যান্য খরচ মেটাচ্ছে।

পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিনের মন্দা এবং ব্যাংকের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে সুদ বেশি হওয়ায় বিভিন্ন খরচ মিটিয়ে যার কাছে যে সঞ্চয় থাকছে, তা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

পাশাপাশি আগের কেনা সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে আবারও নতুন করে বিনিয়োগ করছেন। এছাড়া নির্বাচনী বছরে অন্যান্য খাতের চেয়ে সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগকে বেশি নিরাপদ মনে করছেন অনেকে। এসব কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার।

নানা ধরনের কড়াকড়ি, সুদের হার হ্রাস এবং মূল্যস্ফীতি বাড়ায় মানুষের সঞ্চয়ে টান পড়ায় বিক্রি কমে যাওয়ায় এই খাত থেকে কাঙ্খিত ঋণ পাচ্ছিল না সরকার। সে কারণে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্য কমিয়ে ২০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

কিন্তু অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র থেকে এক টাকাও ঋণ পায়নি সরকার; উল্টো আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের সুদ-আসল পরিশোধ এবং ভাঙ্গানো বাবদ ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা কোষাগার থেকে অথবা ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম এমন ঘটনা ঘটেছে। প্রতি অর্থবছর আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ এবং জরুরি প্রয়োজনে গ্রাহকরা মেয়াদ পূর্তির আগেই যে সব সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গান-সেই অর্থের পরিমাণ নতুন করে মোট যতো টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় তার চেয়ে অনেক বেশি হয়।

কিন্তু গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে তার উল্টোটা হয়। ওই অর্থবছরে মোট বিক্রির চেয়ে সবকিছু শোধের পরিমাণ বেশি ছিল। সে কারণে সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে এই খাত থেকে কোনো ঋণ নিতে পারিনি।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে অতিমাত্রায় ব্যাংক ব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে হয়েছে। তাই অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ সোয়া লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৮০ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর বিপরীতে সুদ-আসল পরিশোধ ও ভাঙ্গানো বাবদ মোট চলে যায় ৮৪ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা।

এ হিসাবে গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ৩ হাজার ২৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ঋণাত্মক (নেগেটিভ) হয়েছিল। অর্থাৎ ওই অর্থবছরে যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ এবং যারা সংসারের বাড়তি খরচের জন্য জরুরি প্রয়োজনে ভাঙ্গিয়েছেন-সেই টাকা মেটানো সম্ভব হয়নি।

উল্টো এই পরিমাণ টাকা সরকার তার কোষাগার থেকে অথবা ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেছে।

এর আগে ২০২১–২২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ১৯ হাজার ৯১৬ কোটি টাকার ঋণ পেয়েছিল সরকার। ২০২০–২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা।

অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “সুদের হার হ্রাস ও নানা ধরনের কড়াকড়ি আরোপের কারণে মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গিয়েছিল। সে কারণেই গত অর্থবছরে নিট বিক্রি নেগেটিভ হয়েছিল।”

“মানুষের বিনিয়োগের আর কোনো জায়গা নেই। শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে মন্দা চলছে। এটা ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার এখনও অন্য যে কোনো বিনিয়োগের চেয়ে বেশি। তাই সব কিছু হিসাব করে মানুষের কাছে যে সঞ্চয় আছে, তা নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন।”

সে কারণে জুলাই-আগস্ট সময়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে বলে মনে করেন আহসান মনসুর।

বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়।

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। তার পরও বাড়তে থাকে বিক্রি।

সর্বশেষ সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য বিক্রি কমাতে ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। এর পর থেকে বিক্রি কমতে থাকে।

গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে কোনো ঋণ না পাওয়ায় নতুন অর্থবছরে অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্র কমিয়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা ধরেছে সরকার।

রিজার্ভ আরও কমেছে পূর্ববর্তী

রিজার্ভ আরও কমেছে

তিন দিনের ব্যবধানে সোনার দাম আরও কমল পরবর্তী

তিন দিনের ব্যবধানে সোনার দাম আরও কমল

কমেন্ট